রিন্টু ব্রহ্ম, কালনা: কোনও ফ্রিজ কিংবা কোল্ড স্টোরেজ ছাড়াই সংরক্ষণ করা হচ্ছে শাকসবজি। পচন ধরা তো দূরে থাক, ফসল কাটার পরও টানা তিন-চার দিনেরও বেশি বাড়িতেই টাটকা থাকছে কাঁচা ফসল। বিক্রি না হলেও ক্ষতির ঝুঁকি নেই। রাজ্যের মধ্যে কালনাতেই প্রথম ‘জিরো এনার্জি চেম্বার’ পদ্ধতিতে লাভ পাচ্ছেন কৃষকরা। আগামিদিনে সমস্ত কৃষকরাই এই প্রযুক্তির সুবিধা পাবেন। শশা, ভেন্ডি, লঙ্কা, পটল, ঝিঙ্গে, বেগুন থেকে পালং শাক পর্যন্ত সব কিছুই থাকবে একেবারে টাটকা। জমি থেকে তোলার পর তা রেখে দিতে হবে এই কুল চেম্বারে। কোনও বিদ্যুৎ শক্তি কিংবা রাসায়নিক ব্যবহার না করেই সতেজ থাকবে ফসল।
[পরিবেশবান্ধব এগ্রি টেক্সটাইল ব্যাগেই দাগহীন কলা চাষে সাফল্য]
অনেক সময় কৃষকরা মাঠ থেকে সবজি তুলে আনেন, কিন্তু তা সঠিক সময়ে ক্রেতাদের কাছে বা পাইকারি বাজারে না পাঠানোর ফলেই ঘরে পচে নষ্ট হয় ফসল। বিশেষ করে গরিব ও প্রান্তিক কৃষকদের হিমঘরে সবজি মজুত রাখা বা বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো না থাকাতেই বাড়িতেই রাখতে হয়। ফলে শুকিয়ে যাওয়া সবজি কিনতে চান না কেউই। তাই কৃষকদের ক্ষতি কমাতেই এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তা এখনও এ রাজ্যে জনপ্রিয় হয়নি। তাই কৃষকদের মধ্যে এই পদ্ধতিতে সবজি সংরক্ষণের পদ্ধতি পৌছে দিতেই উদ্যোগ নিয়েছে কালনা মহকুমা কৃষি দপ্তর।
[গোলমরিচ চাষ করে আয় বাড়াতে চান? জেনে নিন পদ্ধতি]
কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই কালনার কয়েকজন কৃষক এই পদ্ধতিতে ফসল সংরক্ষণ করছেন। কৃষি দপ্তরের ‘আত্মা’ প্রকল্পে কয়েকজন কৃষক সরকারি সাহায্যের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। কৃষিবিদরা জানান, স্বল্পব্যয়ে সংরক্ষণের এই পদ্ধতি ইতিমধ্যেই সাফল্য পেয়েছে। এবার তা রাজ্যের সব চাষিদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। কুলিং চেম্বার তৈরি সম্পর্কে কালনা মহকুমা গবেষণা খামারের সহ-কৃষি অধিকর্তা সুব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘ইঁট দিয়ে একটি বিশেষ ধরনের চেম্বার বানানো হয়। দু’টি স্তরে ইঁটের দেওয়াল তৈরি করে মাঝে ফসল রাখার জায়গা তৈরি করা হয়। দু’টি দেওয়ালের মাঝে বালি দিয়ে ভরাট করতে হয়। কংক্রিট দিয়ে ঢালাই করার পরই সেই মাঝের বালির অংশে জল দিতে হবে। ফলে বাইরের তাপমাত্রা থেকে প্রায় ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা কম থাকবে চেম্বারের ভিতরে। সেখানেই কয়েকশো কেজি পর্যন্ত ফসল রাখা যেতে পারে।’’ সুব্রতবাবু আরও বলেন, “ফসল বা সবজির মধ্যের জলীয় বাষ্প বের হতে পারে না। তাই সবজিগুলো দেখলে মনে হয় সদ্য গাছ থেকে কেটে আনা। এতে কোনও বিদ্যুৎ বা জ্বালানি কিংবা রাসায়নিক খরচ হয় না। তাই এই পদ্ধতির এমন নাম। এতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পাবেন। তাই আগামিদিনেই সমস্ত কৃষকদের এই পদ্ধতি ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যেই কালনা মহকুমা প্রশাসন রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কৃষকদের কিছু আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে এই চেম্বার করে দেওয়া হচ্ছে। কালনার মির্জাপুর, নান্দাই এলাকার সেই পরীক্ষা বর্তমানে চলছে।