সৈকত মাইতি, তমলুক: সরকারি কোনও অনুদানের মুখাপেক্ষী নন তাঁরা। শুধুমাত্র প্রকৃতিকে ভালবেসে নার্সারি গড়েছিলেন। আর তার মাধ্যমেই করোনা (Coronavirus) পরিস্থিতিতেও স্বচ্ছল পূর্ব মেদিনীপুরের কোলসর গ্রাম। হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের পাশে নন্দকুমার ব্লকের এই গ্রামে ঢালাই রাস্তা ধরে ঢুকলেই নজরে আসবে চোখ জুড়ানো সব নার্সারি। রকমারি ফুল ও ফলের সঙ্গে ভেষজ গুণসম্পন্ন নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি গাছের সমাহার। আর তার উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে গ্রামের অর্থনীতি।
পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গোবিন্দ পালের কথায়, “গোটা কোলসর গ্রামজুড়ে শতাধিক ছোট বড় নার্সারি রয়েছে। যার মাধ্যমে সারাবছর ধরেই হরেক প্রজাতির চারাগাছ রপ্তানি হচ্ছে। এই করোনা পরিস্থিতিতেও তার উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল এলাকার কয়েক হাজার পরিবার ভালই রয়েছে।” বর্তমানে একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছে। কাজ হারিয়ে ভিন রাজ্য থেকে বাড়ি ফেরার হিড়িকে প্রাণ গিয়েছে অনেকেরই। এরপর বাড়ি ফিরেও কর্মসংস্থান নিয়ে দিশেহারা মানুষজন। তখন এই গ্রামের জনজীবন একেবারে স্বাভাবিক। সন্তান স্নেহে চারা গাছের পরিচর্যা করে আজ আর্থিক শ্রীবৃদ্ধির শিখরে পৌঁছে গিয়েছেন গ্রামেরই বাসিন্দা স্বপনকুমার প্রধান, সুখদেব অধিকারী, লক্ষীকান্ত জানারা। যাঁদের ব্যবসার পরিধি গ্রাম ছাড়িয়ে জেলা, রাজ্য এমনকী সারা দেশে বিস্তারলাভ করেছে।
[আরও পড়ুন: নির্দিষ্ট সময়ের আগেই লক্ষ্যপূরণ, পরিযায়ী শ্রমিকদের হাতের ছোঁয়ায় রাজ্যে আমন ধান চাষে বিপ্লব]
কলসর গ্রামেরই এক প্রান্তে প্রায় আড়াই একর এলাকা জুড়ে নার্সারি স্বপনকুমার প্রধানের। সে তুলনায় পাশের বাসিন্দা বুদ্ধদেব প্রধানের নার্সারি বেশ ছোট। সেখানেই দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে গাছে জল দেন রীতাদেবী। অভাবের সংসারে স্বামীকে নিয়ে মাত্র ৫ হাজার টাকা দিয়ে এই নার্সারির ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এখন সেই ব্যবসাই পৌঁছেছে পাঁচ লাখে। তাই গাছকে ভালবাসা দিলে প্রকৃতি যে আশীর্বাদ রূপে সবটাই ফিরিয়ে দেয় নন্দকুমার ব্লকের এই গ্রাম তারই জ্বলন্ত উদাহরণ। গাছই স্বনির্ভরতার দিশা দেখাচ্ছেন তাঁদের।