তরুণকান্তি দাস: হঠাৎ আলুর বাজার গরম। দোল উৎসবে শীতের আমেজ উধাও। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নতুন আলুর দামে যেন আগুন লেগেছে।
সবেমাত্র কিছু হিমঘর খুলেছে। সেখানে যে আলু ঢুকছে তা কিনতে সবমিলিয়ে খরচ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৮০০ টাকা কুইন্টাল। যা মাস দুয়েকের মধ্যে খোলা বাজারে বিকোবে ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে। এমনিতে এখনই ১০ থেকে ১২ টাকা দামে আলু কিনছে বাঙালি। যা গতবারের চেয়ে দেড় গুণ বেশি। এর কারণ হিসেবে কৃষিমহল বলছে, এবার চাষ শুরু হয়েছে দেরিতে। ফসল এখনও মাঠে পড়ে। তাই গচ্চা দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। গতবারের মতোই এবার চাষ হয়েছে আলুর। কিন্তু হঠাৎ বর্ষণ বাদ সেধেছিল নাবি চাষে। ফলে সরকারের ভাল বীজ ও সস্তায় সারের সহায়তা সত্ত্বেও প্রতিকূল প্রকৃতির সঙ্গে লড়াইয়ে জয়ী হওয়া যায়নি। চাষ পিছিয়ে গিয়েছে প্রায় তিন সপ্তাহ। ফলে আলু উঠছে দেরিতে। সাধারণত জানুয়ারির শেষ নাগাদ আলু উঠতে শুরু করে। ফেব্রুয়ারিতে নতুন আলুতে বাজার ছেয়ে যায়। দাম থাকে নিয়ন্ত্রণে। যা এবার দেখা যায়নি। পাঁচ টাকা দরে আলু বিকিয়েছে, এমনটা দেখেনি গত এক মাসের বাংলাবাজার। এর কারণ ফলনে দেরি। যদিও অনেকটা মুখরক্ষা করেছে হিমঘরের মজুত। যা এখনও বাজারে মিলছে। তবে তা প্রায় শেষ। কোতুলপুর, আমলাগড়ার কিছু হিমঘরে যা রয়েছে তাও বাইরে বের করে আনা হয়েছে। এই সপ্তাহেই ফুরিয়ে যেতে পারে সেই জোগান। হিমঘর মালিক সংগঠনের কর্তা পতিতপাবন দে বলেছেন, “হিমঘরের আলু শেষ। রয়েছে সামান্যই।”
ফলন ভাল। তাহলে দাম বাড়ছে কেন? সকলেই দুষছে আবহাওয়াকে। যার জন্য ফলনে দেরি হয়েছে। অথচ খুলে গিয়েছে বেশ কিছু হিমঘর। সেখানে জায়গা পেতে ব্যবসায়ীরা মাঠ থেকে যা আলু পাচ্ছেন কিনে নিয়ে গিয়ে মজুত করছেন। প্রথম ধাপে বাজারের যা গতিপ্রকৃতি, তা চমকে দেওয়ার মতো। ব্যবসায়ী ও ক্রেতার জন্য খবরটা খারাপ হতে পারে। তবে চাষিরা কিন্তু ভাল দাম পাচ্ছেন। কেমন? মাঠে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কুইন্টাল দরে আলু কিনছেন ব্যবসায়ীরা। মজুত করতে আনুষঙ্গিক খরচ রয়েছে আরও ৬০ টাকা। এই আলু যখন মাস দুয়েক পর বাজারে আসবে তখন তার খুচরো দাম ১৮ থেকে ২০ টাকার নিচে নামবে না। লাভ করতে গেলে ব্যবসায়ীরা এর কমে আলু বাজারে ছাড়বেন না। এটাই ভয়ের। প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির কর্তা দিলীপ প্রতিহার বলেছেন, “মাঠ থেকে এখনও সব আলু ওঠেনি। যা উঠছে তার অনেকটা সরাসরি বাজারে যাচ্ছে। কিছুটা মজুত হচ্ছে। কেন না ২৬-২৭ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি হিমঘর খুলে গিয়েছে। কিন্তু এই দাম থাকবে বলে মনে হয় না। যদি থাকে তবে তা চাষিদের পক্ষে মঙ্গল। আর আমজনতার জন্য খারাপ। কারণ খুচরো বাজারে দাম বাড়বে এপ্রিল মাস গড়ালেই।” তবে হিমঘরগুলি ঠিকমতো খুলবে আগামী সপ্তাহে। মোটামুটি ১০ মার্চের পর আলুর দাম কী দাঁড়াবে তার সঠিক দিশা মিলবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.