সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: টানা ১৪ দিন বাবা-মাকে কাছে পায়নি দুধের শিশু। খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল সে। ঘুমের ঘোরেও মাকে খুঁজেছে সারাক্ষণ। এদিকে, CAA বিরোধিতায় পথে নেমে ততক্ষণে জেল হেফাজতে দিন কাটাচ্ছেন তাঁর বাবা-মা। জেলে বসে সন্তানের চিন্তায় দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি আন্দোলনকারী একতা এবং রবি। দু’সপ্তাহ পর জামিনে মুক্তি পেলেন তাঁরা। বাড়ি ফিরে সন্তানকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মা একতা।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (CAA) বিরোধিতায় উত্তাল উত্তরপ্রদেশ। পথে নেমে আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। প্রতিবাদ-বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় যোগীর রাজ্যের অন্তত ২১টি জেলা। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে যে বিক্ষোভ প্রশমনে গুলিও চালাতে হয় পুলিশকে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ১৬ জনের। বিক্ষোভের জেরে ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যাহত হয়। শুরু হয় ধরপাকড়। মোট ৫৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন একতা এবং রবি শেখর নামে এক দম্পতি। তাঁরা মেহমুরগঞ্জের বাসিন্দা। বাম আদর্শে বিশ্বাসী ওই দম্পতি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় সুর চড়িয়েছিলেন। পথে নেমে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তাঁরা। তাই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর জেল হেফাজতেও রাখা হয় তাঁদের।
আন্দোলনকারী ওই দম্পতির ১৪ মাসের একটি সন্তান রয়েছে। তাই সেই সময় তাঁদের সন্তানকে কে দেখভাল করবেন, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান প্রতিবাদী বাবা-মা। জেলে থাকাকালীন শিশুর দায়িত্ব সামলান ঠাকুমা শীলা তিওয়ারি, কাকা শশিকান্ত এবং খুদের কাকিমা। বাবা-মা না থাকলেও যত্নের কোনও অভাব হয়নি। তবে পরিবার সূত্রে খবর, বাবা-মাকে কাছে না পেয়ে অত্যন্ত ভেঙে পড়েছিল একরত্তি। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়াও করছিল না সে। শিশুর ওই মানসিক কষ্ট যেন চোখে দেখতে পারছিলেন না কেউই। একে তো প্রতিবাদ করতে গিয়ে জেল হেফাজতে থাকা ছেলে এবং পুত্রবধূকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন আন্দোলনকারীদের মা। তার উপর আবার পরিবারের খুদে সদস্যের কষ্ট। জোড়া ধাক্কায় তাঁর মন মেজাজও ভাল ছিল না। ছেলে এবং পুত্রবধূ জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হোক ভগবানের কাছে সেই প্রার্থনাই করতেন ওই বৃদ্ধা।
মায়ের আকুল আরজিই যেন সত্যি হল। জেল হেফাজত শেষে বুধবার উত্তরপ্রদেশ আদালতে তোলা হয় সমাজকর্মী একতা এবং তাঁর স্বামী রবি শেখর-সহ অন্যান্যদের। আদালতে তাঁদের জামিন মঞ্জুর হয়ে যায়। জামিন পেয়ে নিজেদের বাড়িতে চলে আসেন ওই দম্পতি। সন্তানকে কোলে তুলে কেঁদে ফেলেনম একতা। চোখের জল মুছতে মুছতে তিনি বলেন, “সন্তানকে কাছে পেতে যে এত সময় লাগবে তা বুঝতে পারিনি। সন্তানকে কাছে পেয়ে কেমন লাগছে বলে বোঝাতে পারব না।” শিশুর বাবার অবস্থাও প্রায় একইরকম। এতদিন পর বাবা-মাকে ফিরে পেয়ে বেজায় খুশি একরত্তিও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.