সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হরিয়ানার বল্লভগড়ে দু’সপ্তাহ আগেই গো-রক্ষার নামে গণপিটুনিতে খুন হতে হয়েছিল ১৬ বছরের জুনেইদ খানকে। অবশেষে শনিবার মহারাষ্ট্রের ধুলে থেকে ঘটনার মূল অভিযুক্তকে আটক করল পুলিশ। তাকে আপাতত দু’দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। জানা গিয়েছে, ঘটনার পর থেকেই মহারাষ্ট্রে পালিয়ে গিয়েছিল অভিযুক্ত। গোপনসূত্রে খবর পেয়েই তাকে শনিবার আটক করে পুলিশ। এদিকে, ছেলের মৃত্যুর শোক এখনও তাজা জুনেইদের বাবা জালালউদ্দিনের মনে। রবিবার এক সাক্ষাৎকারে ইতিমধ্যে ছেলের হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছেন তিনি। পাশাপাশি গণপিটুনি বন্ধে কড়া আইন আনার পক্ষে সওয়ালও করেছেন।
গোটা দেশে গো-রক্ষার নামে প্রতিদিনই গণপিটুনির মতো ঘটনা ঘটছে। প্রতিনিয়তই একের পর এক খবর শিরোনামে উঠে আসছে। সেরকমই ঘটেছিল জুনেইদের সঙ্গেও। ইদের বাজার সেরে ফেরার পথে চলন্ত ট্রেনে একদল যুবক চড়াও হয় তার উপর। এরপরেই ওই যুবকদের হাতে খুন হয় সে। আহত হয় জুনেইদের ভাই ওয়াসিমও। এরপরেই তদন্তে নামে পুলিশ। শেষপর্যন্ত শনিবার ধুলে থেকে মূল অভিযুক্তকে আটক করে হরিয়ানা থানার পুলিশ। তাঁদের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, আটক যুবক জেরায় নিজের দোষও স্বীকার করেছে। তবে পুলিশ ধৃত যুবকের পরিচয় এখনই জানাতে রাজি হয়নি। যদিও মহারাষ্ট্র পুলিশের তরফ থেকে ওই যুবকের নাম জানানো হয়েছে নরেশ রাখ। এই প্রসঙ্গে ধুলে পুলিশের এক আধিকারিক জানান, ‘সাকরি পুলিশ স্টেশনে ধৃত যুবককে আটক করে রাখা হয়েছে। পুলিশে ডায়েরি করার পরেই তাকে হরিয়ানা নিয়ে যাওয়া হবে।’ এর সঙ্গেই তিনি যোগ করেন, ‘ঘটনার পরেই ওই যুবক মহারাষ্ট্রে নিজের আত্মীয়ের বাড়িতে পালিয়ে যায়। সূত্র মারফত খবর পেয়েই হরিয়ানা পুলিশ তাকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশি জেরায় সে নিজের অপরাধ কবুলও করেছে।’ আপাতত মূল অভিযুক্তকে দু’দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। উলটোদিকে, এক সাক্ষাৎকারে জুনেইদের বাবা জালালউদ্দিন অভিযুক্তের মৃত্যদণ্ড দাবি করেন। পাশাপাশি গণপিটুনি রুখতে কেন্দ্র যাতে কড়া আইন আনে, সেই আরজিও জানান। বলেন, ‘আজ আমার সন্তানের সঙ্গে যা হয়েছে, পরবর্তী সময়ে অন্যের সন্তানের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটতে পারে।’
এর আগে গত জুন মাসে হরিয়ানার বল্লভগড়ের বাসিন্দা জুনেইদরা ইদের বাজার করতে দিল্লি গিয়েছিলেন। কিন্তু ফেরার পথে ঘটনাটি ঘটে। সদর বাজার স্টেশন থেকে ফেরার ট্রেন ধরেন জুনেদ, মহসিন, হাসেম ও মইন নামে চার যুবক। পরিবারের জন্য কেনা খাবার ও উপহার একটি প্লাস্টিকে মুড়ে নিয়েছিলেন তাঁরা। ট্রেনে নিজেদের সিটে বসে লুডো খেলছিলেন তাঁরা। ওখলা স্টেশন থেকে ১৫-২০ জনের একটি দল ট্রেনে ওঠে। সিটে ছেড়ে দিতে বলে তারা। কিন্তু সিট ছাড়তে রাজি না হওয়ায় হাসেম ও তাঁর ভাইদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করে ওই দলের সদস্যরা। বলে, হাসেমদের সঙ্গে থাকা প্লাস্টিক ব্যাগে নাকি গো-মাংস আছে। তাই তাদের সিটে বসতে দেওয়া হবে না। হাসেমরা বোঝানোর চেষ্টা করেন, যে ওই প্লাস্টিক ব্যাগে গো-মাংস নেই। কিন্তু, তাতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
পরিস্থিতি হাতে বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে হাসেম ও তাঁর ভাইয়েরা অন্য কামরায় চলে যান। সেখানেও তাঁদের পিছু নেয় ওই যুবকরা এবং অকথ্য গালিগালাজ করতে থাকে। এরপর ট্রেন বল্লভগড় স্টেশনে পৌঁছলে, দু’পক্ষের মধ্যে বচসা শুরু হয়। ট্রেনের ভিতরেই জুনেইদকে ছুরি দিয়ে কোপাতে শুরু করে অভিযুক্ত যুবক। ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে ছুরির আঘাতে গুরুতর জখম হন দাদা ওয়াসিমও। এমনকী পরের স্টেশনে ওই চার যুবককে ট্রেন থেকে ফেলেও দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে, জুনেইদকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। ঘটনাটি সামনে আসতেই গোটা দেশে বিক্ষোভও দেখা দেয়। অনেকেই গো-রক্ষার নামে গণপিটুনির ঘটনার কড়া নিন্দা করেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.