Advertisement
Advertisement

Breaking News

অন্তর্বর্তী বাজেট ২০১৯-২০: কিছু প্রশ্ন, কিছু সংশয়

জনমুখী বাজেটের বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ অর্থনীতিকদের একাংশের।

A brief analysis of interim budget 2019-20
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:February 1, 2019 2:45 pm
  • Updated:February 1, 2019 4:20 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক:  প্রত্যাশামতো আমজনতার মন পেতে অন্তর্বর্তী বাজেট ঘোষণা করলেন ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। নির্বাচনের আগে মধ্যবিত্তদের জন্য একলাফে আয়কর ছাড়ের অঙ্ক বাড়িয়ে মোদি সরকার বুঝিয়ে দিল, ওস্তাদের মার শেষ রাতে।

প্রথমত, আগে বার্ষিক ২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করলে, কর দিতে হতো না। ২০১৯-২০ অন্তর্বর্তী বাজেটে তার দ্বিগুণ অর্থাৎ বার্ষিক আয় ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হলে, তা সম্পূর্ণ করমুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আরও ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিমা কিংবা প্রভিডেন্ট ফান্ডে বিনিয়োগ করলে কোনও কর দিতে হবে না। আপনার বার্ষিক আয় ৫ লক্ষ টাকার মধ্যে হলে এবং বিনিয়োগের অঙ্ক ১.৫ লক্ষ টাকা হলে সর্বমোট ৬.৫ লক্ষ টাকা সম্পূর্ণ করছাড়ের আওতায় রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। করযুক্ত আয়ের ক্ষেত্রে যে অঙ্ক ছিল, তা ৪০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে করকাঠামো অপরিবর্তিত থাকায় ৬.৫ লক্ষ টাকার ওপরে যাঁদের বার্ষিক আয়, তাঁদের কোনও স্বস্তি নেই।  অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের মতে, চাকরিজীবীদের আয়করের হারে এতটা ছাড় দেওয়া মোদি সরকারের অন্তর্বর্তী বাজেট স্মার্ট, প্রত্যাশার চেয়েও বেশি প্রাপ্তির। আর ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রীর নিজের ব্যাখ্যা, এই বাজেট সন্দেহাতীতভাবে উৎপাদনমুখী এবং মূল্যবৃদ্ধি রুখতে সহায়ক। অর্থমন্ত্রকের সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ জানিয়েছেন, আয়কর ছাড়ের এই নতুন প্রস্তাব লাগু হতে পারে নতুন অর্থবর্ষ ১ এপ্রিল থেকে।

Advertisement

                                                   বাজেটে বড় ঘোষণা, কৃষকদের অ্যাকাউন্টে ঢুকবে ছ’হাজার টাকা

Advertisement

দ্বিতীয়ত, কৃষক,শ্রমিক, পশুপালকদের জন্য বেশ কয়েকটি সুবিধাজনক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে অন্তর্বর্তী বাজেটে। ২ হেক্টরের কম জমি রয়েছে যে কৃষকদের, তাঁদের কেন্দ্রের তরফে ৬০০০ টাকা করে সাহায্য দেওয়া হবে। পশুপালন খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৭৫০ কোটি টাকা। শ্রমিকদের ন্যূনতম পেনশনের অঙ্ক ১০০০টাকা করার প্রস্তাব রয়েছে অন্তর্বর্তী বাজেটে, যার জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এছাড়া অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের ৬০ বছর বয়সে অবসরের পর মাসে ৩০০০টাকা করে পেনশনদানের প্রস্তাব রয়েছে। এর জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের দিকে তাকিয়ে তফশিলি জাতি ও উপজাতির জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রায় ৭৭০০০কোটি টাকা করার প্রস্তাব। নিম্নবিত্তদের জন্য একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়ে এই শ্রেণির সমর্থন আদায়ের চেষ্টায় কসুর করেনি মোদি সরকারের শেষ অন্তর্বর্তী বাজেট।

                                                    আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে গরিবের সঞ্চয় ৩ হাজার কোটি

ঘণ্টা দুয়েকের বাজেট অধিবেশনের একেবারে শেষ পর্বে করছাড় সংক্রান্ত প্রস্তাবের পরই  ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের বাজেটের প্রশংসা নানা মহলে। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি অন্তর্বর্তী বাজেটে ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, ‘কৃষকের জন্য, গরীবের জন্য এই বাজেট।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কথায়, ‘ঐতিহাসিক বাজেট। সমাজের সব শ্রেণির মানুষের সুবিধার কথা মাথায় রেখে ভারসাম্যের বাজেট পেশ করা হয়েছে।’ বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বলছেন, ‘কৃষক, শ্রমিক, পশুপালকদের জন্য ৭৫০ কোটি টাকা খরচ বহন করবে সরকার। এতে যাঁরা ঋণ নেন না, সেসব কৃষকরাও উপকৃত হবেন।’  

                                                     ঊর্ধ্বসীমা পাঁচ লক্ষ, আয়করের দ্বিগুণ ছাড়ে স্বস্তিতে মধ্যবিত্ত

বাজেট অধিবেশন শেষে চাঙ্গা হয়েছে শেয়ার বাজারও। সেনসেক্স একলাফে ৩৭০ পয়েন্ট উঠেছে। তবে সমালোচনা করেছে বিরোধী কংগ্রেস। সাংসদ শশী থারুরের প্রশ্ন,  ‘শ্রমিকদের ন্যূনতম আয় ১০০০ টাকা মাত্র করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এটা কি নিম্নবিত্তর মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট?’ সমালোচনা আরও আছে। অন্তর্বর্তী বাজেটের এসব প্রস্তাব কার্যকর হওয়ার আগে নতুন সরকারের আরেকটি বাজেট অধিবেশনের সময় আসন্ন হবে। ফলে বিরোধীদের একাংশের মত, জনমুখী এত সব প্রস্তাবকে আসলে নির্বাচনী প্রচার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করার শেষ সুযোগ পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে চাইল মোদি সরকার। এর জবাব দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘এসি ঘরে বসে কৃষকদের সমস্যা বোঝা যায় না। মোদি সরকার তা বোঝে বলেই কৃষকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি স্কিম তৈরি করেছে। এটা ঐতিহাসিক। এর আগে কেউ এভাবে ভাবেনি।’

তবে প্রশ্ন উঠছে আরও।

১. একেবারে প্রাকনির্বাচনী এই বাজেট কতটা বাস্তবায়িত হবে?

২. অন্তর্বর্তী বাজেটে আয়বৃদ্ধির সঠিক দিশা নেই, তবে বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব আছে। বাস্তবায়নের উপায় কী?

৩. চাকরির সংস্থান মোদি সরকারের এক অন্যতম বড় প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী বাজেটে তার কোনও উল্লেখমাত্র নেই। তাহলে কি এই লক্ষ্য থেকে সরে এল সরকার?

৪. কৃষকদের জন্য বার্ষিক ৬০০০ টাকা সরকারি সাহায্য ঘোষণা কি যথেষ্ট?

৫. ফের মোদি সরকার ক্ষমতায় এলে, সাধারণ দেশবাসীকে ত্যাগের পরামর্শ দিয়ে আয়কর ছাড়ের উর্ধ্বসীমা কমিয়ে দেবে না তো?

তাই পীযূষ গোয়েলের পেশ করা বাজেট আপাতভাবে জনমুখী হলেও, বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় থাকছেই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ