Advertisement
Advertisement

Breaking News

মমতার সায় ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে জলচুক্তি চায় না কেন্দ্র, বললেন সুষমা

তিস্তা চুক্তি হলে উত্তরবঙ্গের চাষের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে প্রথম থেকেই দাবি করে আসছেন মমতা।

Center does not want water treaty with Bangladesh without Mamata, said Sushma
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:May 29, 2018 8:54 am
  • Updated:May 29, 2018 8:54 am

নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মতি ছাড়া তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি করতে রাজি নয় কেন্দ্র। কারণ, পশ্চিমবঙ্গই এই বিষয়ে বড় অংশীদার। সোমবার নয়াদিল্লিতে একথা স্পষ্ট জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তিনদিন আগে শান্তিনিকেতনের বাংলাদেশ ভবনে মোদি-হাসিনার আধঘণ্টার একান্ত বৈঠকে তিস্তার জলবন্টন নিয়ে দু’দেশের জট কি কাটানো সম্ভব হয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে সুষমা জানান, “তিস্তার জলবণ্টন প্রস্তাব শুধুমাত্র দুই দেশের সরকারের মধ্যে হতে পারে না। কারণ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এক্ষেত্রে বড় শেয়ার হোল্ডার। তাই মমতাকে বাদ দিয়ে এটা করা কখনোই সম্ভব নয়। পশ্চিমবঙ্গকে সঙ্গে না নিলে কীভাবে তিস্তা চুক্তির অগ্রগতি হবে? কারণ, জল তো পশ্চিমবঙ্গ থেকেই বাংলাদেশে যাবে।”

মোদি-হাসিনা একান্ত বৈঠকের পর তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশকে এদিন কোনও আশার বাণী শোনাতে না পারলেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে এদিন বাংলাদেশের পক্ষেই সওয়াল করেছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী। বলেছেন, “রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মায়ানমারের প্রধানমন্ত্রী আন সাং সু চি-র সঙ্গে ভারতের কথা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া নিয়ে একটি তালিকাও বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে। সবপক্ষই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান দ্রুত হবে।”

Advertisement

[ মহিলাদের সুরক্ষায় বিশেষ পদক্ষেপ, মুম্বইজুড়ে নজরদারি চালাবে ড্রোন ]

Advertisement

শান্তিনিকেতনে চার দিন আগে মোদি-হাসিনার মধ্যে একান্ত বৈঠক হয়েছে। ঢাকা উড়ে যাওয়ার আগে শনিবার শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহে তাজবেঙ্গলে এসে তাঁর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। দুই নেত্রীর মধ্যে দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে নানা কথা হলেও পশ্চিমবঙ্গ সফরে তিস্তার মতো স্পর্শকাতর ইস্যু সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এমনকী ঢাকা বা দিল্লির তরফেও দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকের ফলাফল নিয়ে গত তিনদিনে কিছু উচ্চবাচ্য করা হয়নি। কিন্তু এদিন দিল্লিতে বিদেশমন্ত্রকের বাৎসরিক সাংবাদিক বৈঠকে এক প্রশ্নের উত্তরে সুষমা স্বরাজ জানান, “মমতাকে ছাড়া তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে কিছুই কথা এগবে না।” এতদিন ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তার জল নিয়ে উত্তরবঙ্গবাসীর জন্য যে আশঙ্কার কথা বলছিলেন তা এদিন ঘুরিয়ে স্বীকার করে নিয়েছেন সুষমা। বলেছেন, “জল তো পশ্চিমবঙ্গ থেকেই যাবে।” অর্থাৎ উত্তরবঙ্গের নদীর জল তুলে নিলে ওই রাজ্য এবং এলাকাই কার্যত যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা সুষমার কথায় স্পষ্ট।

ঢাকা সফরে গিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বার্তা দিয়েছিলেন, তাঁর সরকারের সময়কালেই তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি সম্পন্ন হয়ে যাবে। কিন্তু এখনও ইতিবাচক কিছুই হয়নি। সাংবাদিকরা সেই বার্তার বিষয়টি উল্লেখ করে সুষমাকে চেপে ধরতেই তিনিও মোদি সরকারের উপর ভরসা রাখতে বলেন। বিদেশমন্ত্রীর কথায়, “আমাদের সরকারের হাতে এখনও একবছর সময় আছে। তাই এখনই এই চুক্তি বাস্তবায়নে আমরা ব্যর্থ হয়েছি তা বলার সময় আসেনি।”

[ Jio-কে কড়া চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এবার টেলিকম ব্যবসায় রামদেবের পতঞ্জলী ]

চলতি বছরেই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন। তাই ভোটে জেতার জন্যই আওয়ামি লিগ নেত্রী শেখ হাসিনার তরফে তিস্তার চুক্তি করা নিয়ে ক্রমাগত ভারতের উপর চাপও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ছিটমহল বিনিময়ের মতো তিস্তার জলবণ্টন চুক্তির ক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সংকেত ছাড়া যে এক পা-ও দিল্লি সরকার এগতে পারছে না, তা স্বীকার করেছেন সুষমা। ২০১১ সালের খসড়া মেনে যদি চুক্তি করা হয় তা হলে উত্তরবঙ্গের চাষের ব্যাপক ক্ষতি হবে, চাষিরা বিপদে পড়বেন বলে প্রথম থেকেই দাবি করে আসছেন মমতা। তিস্তা প্রস্তাবের বিকল্প হিসাবে অন্য তিনটি নদীর জল ঢাকাকে দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি। সেই বিষয়টি উল্লেখ করে সুষমা জানিয়েছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতবারেই একটা বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনটি অন্য নদী থেকে বাংলাদেশকে জল দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সেই প্রস্তাবে। এই বিকল্প প্রস্তাব কেন্দ্র ও রাজ্যের বিশেষজ্ঞরা খতিয়ে দেখছেন। তবে তার চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনও দিল্লির হাতে আসেনি।” স্বভাবতই যতই মোদি-হাসিনা একান্ত বৈঠক হোক না কেন, মমতা সায় না দিলে এক চুলও যে তিস্তা নিয়ে দিল্লি এগোবে না তা এদিন স্পষ্ট করেছেন বিদেশমন্ত্রী।

তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে গত চার দশক ধরেই পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের টানাপোড়েন চলছে। গতবছর দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে মোদি-মমতা-হাসিনা বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের পরে দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতেও তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশার কথা শোনানো হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের কৃষক ও সাধারণ মানুষের জলসংকট হবে না এমন বিকল্প প্রস্তাব এখনও কেন্দ্র প্রস্তুত করতে পারেনি। তাই মমতার সম্মতি চাওয়ার বিষয়ে এগোতেও পারেনি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ