সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক দৌত্য অবশেষে সাফল্যের মুখ দেখল। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানি উদ্বোধন করলেন ভারতের টাকায় নির্মীয়মাণ ইরানের চাবাহার সমুদ্রবন্দর। এর জেরে ভারত-ইরান-আফগানিস্তান অক্ষ আরও জোরদার হল বলে মনে করছেন অনেকেই। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে আর পাকিস্তানের ভূখণ্ড ব্যবহার না করেই আফগানিস্তান, ইরান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্য-সম্পর্ক জোরদার করতে ইরানের চাবাহারে সমুদ্রবন্দর গড়ে তুলতে ভারত দিয়েছিল মোট ৫০ কোটি ডলার।
[কেন ভারতের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দর? জানতে পড়ুন- পাকিস্তানে চিনের গ্বদরের জবাবে ইরানে চাবাহার গড়ছে ভারত]
২০১৬-র মে মাস। তখনই ভারত-ইরান-আফগানিস্তান এই তিন দেশ চাবাহার নিয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়। পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত তথা জলসীমার খুব কাছে অবস্থিত চাবাহার বন্দরের আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয় ভারত। বিনিময়ে মেলে চাবাহার বন্দর ব্যবহারের অধিকার। এদিন এক আফগান কূটনীতিক বলেছেন, “রবিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে চাবাহার বন্দর খুলে গেল এবং তাতে ভারত-আফগান বাণিজ্য আরও গতি পাবে বলেই আশা করছি।” উদ্বোধনের মঞ্চে হাজির ছিলেন ভারত, কাতার, আফগানিস্তান, পাকিস্তান-সহ অন্য বেশ কিছু দেশের সদস্যেরা। বিদেশমন্ত্রকের তরফে জানা গিয়েছে, ভারতের তরফে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী রাধাকৃষ্ণন। প্রাথমিক ভাবে চাবাহার বন্দরের যে অংশটির কাজ শেষ হয়েছে, তার নাম শাহিদ বেহেস্তি বন্দর। আপাতত ওই বন্দরের দু’টি বার্থ ব্যবহার করবে ভারত। আগামী বছরের শেষের দিকে পাকাপাকিভাবে মাল ওঠা-নামার কাজ শুরু হয়ে যাবে ওই বন্দরে। বন্দরের নির্মাণকাজ দেখতে রাশিয়া সফর শেষে ভারতে ফেরার পথে শনিবার তেহরানে পৌঁছন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। সেই সময় তাঁর সঙ্গে কথা হয় ইরানের বিদেশমন্ত্রী জাভেদ জারিফের।
[আফগানিস্তানে গম পাঠাতে এই প্রথম চাবাহার বন্দর ব্যবহার করল ভারত]
গত অক্টোবরেই ভারত জাহাজে চাপিয়ে আফগানিস্তানে গম পাঠিয়েছিল চাবাহার বন্দর দিয়ে। গত বছরই চাবাহার প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলে ইসলামাবাদ। বলা হয়েছিল, পাকিস্তানের মাটিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে আফগানিস্তানকে ব্যবহার করার লক্ষ্যেই ভারত এই বন্দর তৈরি করছে। চাবাহার নিয়ে উদ্বেগে চিনও। চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের (সিপিইসি) অঙ্গ হিসেবে আরব সাগরের তীরে পাকিস্তানের গ্বদরে ইতিমধ্যেই একটি বন্দর তৈরি করেছে চিন। মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সহজ যোগাযোগের স্বার্থে পাকিস্তানের মাটিতে চিনা উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই বন্দরের উপর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে নির্ভর করতে হবে বলে চিন আশা করেছিল। কিন্তু গ্বদর থেকে জলপথে ২০০ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত চাবাহারে ভারত যে পালটা বন্দর তৈরি করবে, তা চিন-পাকিস্তান আশা করেনি।
চাবাহার বন্দর খুলে যাওয়ার পরে কূটনৈতিকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, মধ্য এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের প্রশ্নে গ্বদরের চেয়ে চাবাহারের অবস্থান অনেক বেশি সুবিধাজনক। তাই গ্বদর থেকে যে ভাবে অর্থনৈতিক লাভ পাওয়ার আশা করেছিল চিন-পাকিস্তান, তা ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা তো থাকছে। আরব সাগরের বুকে চিনা ঘাঁটির শ’খানেক কিলোমিটারের মধ্যেই ভারতের পাল্টা আস্তানা- চাবাহার। তাই কৌশলগত কারণেই কপালের ভাঁজ আরও গভীর হচ্ছে বেজিং এবং ইসলামাবাদের কর্তাদের।