নন্দিতা রায়: বছর দুয়েক আগে লোকসভা নির্বাচনে ব্যাপক ভরাডুবির পরে কংগ্রেস নিজেদের হাল ফেরানোর চেষ্টা করবে বলেই সকলে মনে করছিল৷ কিন্তু বর্তমানে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে কংগ্রেসের অন্দরের একের পর এক যে চিত্র উঠে আসছে তাতে হাল ফেরানো তো দূর অস্ত, এই দু’বছরে দলের রক্তক্ষরণ থামাতেই তারা সমর্থ হয়নি বলে প্রমাণিত হয়েছে৷ যে কোনও নির্বাচনের আগে দেশের সর্বত্রই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে দলত্যাগ করে অন্য দলে যোগ দেওয়ার একটা হিড়িক দেখা যায়৷ তবে কংগ্রেসের ক্ষেত্রে এই যুক্তি বোধহয় একেবারেই খাটে না৷ নির্বাচন থাকুক বা নাই থাকুক, সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন রাজ্যেই দলের প্রথম সারির নেতা, বিধায়ক থেকে শুরু করে কর্মীদের মধ্যেও কংগ্রেস ত্যাগ করে অন্য রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে৷
এর আগে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেস ত্যাগ করার মতো ঘটনা বিচ্ছিন্নভাবে ঘটলেও মঙ্গলবার এক সঙ্গে জোড়া ধাক্কা খেয়েছে দল৷ একদিকে, মহারাষ্ট্রে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও দলের প্রথম সারির নেতা গুরুদাস কামাথ কংগ্রেসের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে রাজনৈতিক সন্ন্যাস নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন৷ অন্যদিকে, ষাটটি আসন সম্বলিত ত্রিপুরা বিধানসভায় প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের মোট দশজন বিধায়কের মধ্যে সাতজন এদিন কংগ্রেস ছেড়ে অন্য রাজনৈতিক দলে যোগদান করেছে৷ কংগ্রেসের সাত বিধায়কের মধ্যে ছ’জন তৃণমূল কংগ্রেস ও বাকি একজন ওই রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল সিপিএমে যোগদান করেছে বলেই জানা গিয়েছে৷ আবার মাসখানেক আগেই কংগ্রেস শাসিত রাজ্য উত্তরাখণ্ডের প্রথম সারির কংগ্রেস নেতা বিজয় বহুগুণা-সহ ন’জন কংগ্রেস বিধায়কও দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগদান করেছেন৷
মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতা কামাথ, গান্ধী পরিবারের দীর্ঘদিনের অনুগত বলেই পরিচিত৷ হঠাত্ করে কামাথের মতো নেতার দল ছাড়ার জন্য হাইকমান্ডের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে, রাজনৈতিক সন্ন্যাস গ্রহণ করার ঘোষণা সে রাজ্যে কংগ্রেসের কাছে বড় রাজনৈতিক ধাক্কা বলেই মনে করছে রাজনৈতিকমহল৷ কংগ্রেস সূত্রের খবর, মহারাষ্ট্র থেকে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে রাজ্যসভায় মনোনয়ন দেওয়াকে কেন্দ্র করেই প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়৷ রাজ্যের যোগ্য ব্যক্তিদের রাজ্যসভায় না পাঠিয়ে ভিন রাজ্যের চিদম্বরমকে কেন পাঠানো হল, তা নিয়ে কামাথ কড়া আপত্তি জানিয়েছিলেন৷ চিরকালই কংগ্রেসের যে কোনও সিদ্ধান্তই নেয় হাইকমান্ড৷ এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি৷ হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে ক্ষোভের কারণেই কামাথ পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গিয়েছে৷ ত্রিপুরায় কংগ্রেসের অধিকাংশ বিধায়ক অনেক দিন ধরেই বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন৷ পশ্চিমবঙ্গে বামেদের সঙ্গে কংগ্রেস হাত ধরার পর থেকেই এই বিদ্রোহ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল৷ পড়শি রাজ্যে দল প্রধান বিরোধী দলের হাত ধরায় ত্রিপুরার মানুষের মনে কংগ্রেসের প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি হচ্ছিল বলে কংগ্রেস নেতারা হাইকমান্ডকেও জানিয়েও ছিলেন৷ কিন্তু তাঁদের কথায় কেউ পাত্তা দেয়নি বলেই অভিযোগ৷ তাই এদিন ত্রিপুরার বিধায়করা বামবিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামের ব্যানারের নিচেই রাজ্যে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের রাস্তা বেছে নিয়েছেন৷
লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস খারাপ ফল এতদিন পর্যন্ত রাজ্যসভায় কংগ্রেসের আসন সংখ্যাই ছিল সর্বাধিক৷ কিন্তু আগামী শনিবার রাজ্যসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা যে কমতে চলেছে তা নিশ্চিত৷ যদিও তাতেও রাজ্যসভায় কংগ্রেসই সর্বাধিক আসন সম্বলিত দল থাকবে৷ এক্ষেত্রে অবশ্য একটা প্রশ্ন উঠে আসছে, দেশের বিভিন্ন রাজ্যগুলির নির্বাচনে কংগ্রেস একের পর এক যেভাবে ক্ষমতা হচ্ছে তাতে আগামী দিনে রাজ্যসভায় তাদের ক্ষমতা কমবে বই বাড়বে না৷ কারণ, আগামী বছর দেশের সব থেকে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজের রাজ্য গুজরাত, বিজেপি শাসিত গোয়া ও পাঞ্জাবের মতো রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে৷ এর মধ্যে একমাত্র পাঞ্জাব ছাড়া অন্য রাজ্যগুলিতে কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে৷ সব মিলিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রের আঙিনায় আগামী দিনে কংগ্রেসের আরও দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল৷