Advertisement
Advertisement

রাজ্য দখলে টপকেছি ইন্দিরাকেও, কান্নাভেজা চোখে বললেন মোদি

'আজ বিজেপি ১৯টি রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে।'

Congress under Indira ruled 18 states, BJP now in one more: Modi
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:December 21, 2017 3:42 am
  • Updated:December 21, 2017 3:48 am

নন্দিতা রায়: থামলেন তিনি। পোডিয়ামের পিছনে মাথা নিচু। বালাযোগী অডিটোরিয়ামের বাতাস খুব ভারী। কে বলবে, একটু আগেই উপস্থিত সাংসদরা তাঁদের নেতাকে প্রবল উল্লাসে অভিবাদন জানিয়েছেন। এখন তাঁর চোখেই জল!

নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি। গুজরাত, হিমাচলে দলকে ভোট বৈতরণি পার করার মূল কান্ডারি। বুধবার সকালে অধিবেশন শুরুর আগে সংসদের লাইব্রেরি বিল্ডিংয়ে বালাযোগী অডিটোরিয়ামে সংসদীয় দলের সঙ্গে কথা বলার জন্য বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। মোদি আসতেই তাঁর নামে জয়ধ্বনি উঠল। তারপর সংবর্ধনা। এবার মোদির সন্দেশ দেওয়ার পালা। বলছিলেন গুজরাটে বিজেপির উত্থান নিয়ে। মার্কণ্ড দেশাই, অরবিন্দ মনিয়ার, বসন্তরাও গজেন্দ্র গড়করিদের কৃতিত্ব স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। আর এই সময়েই গলা বুজে আসে তাঁর। চোখের জল আড়াল করতে মাথা নিচু করে ফেলেন। কিছুক্ষণের জন্য থেমে যান। তার আগেই অবশ্য গুজরাটের জয়কে মহিমান্বিত করতে তাঁর মন্তব্য, ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস দেশের ১৮টি রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল। আজ বিজেপি তাদের টপকে ১৯টি রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে।

Advertisement

 

Advertisement

আসলে সাড়ে তিন বছরে প্রধানমন্ত্রীর এই আবেগের সঙ্গে দেশবাসীর পরিচয় হয়ে গিয়েছে। মনে করুন, ২০১৪-র মে মাসের সেই দিনটি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সংসদে প্রথম ভাষণের সময় তাঁর চোখে জল এসে গিয়েছিল, যখন তিনি তাঁকে সমর্থনের জন্য দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য নিজেকে সামলে নেন। তারপর গত বছরের ১৩ নভেম্বর। এর ঠিক পাঁচদিন আগে তিনি নোট বাতিলের ঘোষণা করেছেন। বিরোধী দলগুলির প্রবল চাপের মুখে তাঁর সরকার। গোয়ায় একটি অনুষ্ঠানে রাজনীতির জন্য তাঁর আত্মত্যাগের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। আরও একবার মেনলো পার্কে ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকেরবার্গের সঙ্গে আলাপচারিতায় মায়ের কথা বলতে গিয়ে তাঁর চোখে জল এসে গিয়েছিল।

কিন্তু সেদিনের থেকে বুধবারের আবেগ কিঞ্চিৎ অন্য।

গুজরাটে বিজেপি জিতলেও সেই জয়কে ‘বিপুল’ আর বলা যাচ্ছে না। অথচ নয়ের দশক থেকে পশ্চিম উপকূলের এই রাজ্যে এটাই নিয়ম হয়ে গিয়েছিল। এবার তার ব্যতিক্রম। জোর লড়াই দিয়েছে সভাপতি রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস। ১৯৮৫-র পর এই প্রথম কংগ্রেস সেখানে ৭৭ আসন জয় করতে পেরেছে। অন্যদিকে নয়ের দশকের পর এবারই গুজরাত বিধানসভায় সব থেকে কম আসন পেয়েছে বিজেপি, মাত্র ৯৯। ‘মিশন ১৫০’ ব্যর্থ। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বুধবারের সংসদীয় দলের বৈঠকে কংগ্রেসের ‘নৈতিক জয়’-এর দাবিকে ‘হাস্যকর’ বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু আসলে কি গুজরাতে সংখ্যা-পতন নিয়ে দল চিন্তিত নয়? দিল্লির রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, নিশ্চয় চিন্তিত। আর সেকারণেই দলের মনোবল চাঙ্গা রাখতে মোদির অতীতে ফেরা।

[উল্লাস নয় উন্নয়নে মন দিন, বিজেপি সাংসদদের বার্তা মোদির]

মোদি বলছেন, “লোকসভা নির্বাচনে গুজরাতে দল দুর্দান্ত ফল করার পর প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী ব্যক্তিগতভাবে আমাকে অভিন্দন জানিয়েছিলেন। আমার পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন। আমি তখন কিছুই ছিলাম না। আরএসএস থেকে বিজেপিতে সবে এসেছি। রাজ্যে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব। দলেই বিশেষ পরিচিতি নেই। এটা বাজপেয়ীর মহানুভবতা যে, মোদিকে তাঁর কাছে পৌঁছতে দিয়েছিলেন।” এরপরেই গুজরাটে সাবেক জনসংঘ ও বর্তমানে বিজেপির উত্থানের কথা বলতে গিয়ে দলের নেতাদের নাম উল্লেখ করতে থাকেন। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রয়াত। এই সময়ই আবেগে মোদির গলা বুজে আসে। চোখের কোণে জল চিকচিক করতে থাকে। মোদির চোখের জলের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ চলছে রাজধানীতে। বলা হচ্ছে, গুজরাতের জয়-পরাজয়ের সঙ্গে ব্যক্তি মোদির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। দল না চাইলেও তাঁর জবাবদিহির দায়িত্ব থেকেই যায়। মোদির চোখের জলে সেই দায়বদ্ধতাই প্রমাণ হয়েছে।

modi-2

ফল প্রকাশের পর থেকেই স্পষ্ট গুজরাটে বিজেপির জয় সহজ হয়নি। তাতে এদিন সিলমোহর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। তিনি বলেছেন, “এটা কোনও সহজ জয় ছিল না। কেউ যেন এই বিভ্রান্তিতে থাকবেন না যে এই জয় খুব সহজ ছিল।” দলের সাংসদদের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘নতুন ভারত’ ভিশন সফল করতে দলের যুব নেতৃত্বকে এগিয়ে আসতে হবে। নেতাদের সমাজের তৃণমূল স্তর পর্যন্ত যেতে হবে। মোদি আরও বলেন, “গুজরাটে বিজেপি কেশুভাই প্যাটেল ও শঙ্করসিন বাঘেলার মতো নেতাদের হারিয়েছে। তাঁরা কেউ শক্তিশালী সম্প্রদায়ের ছিলেন না। তারপরেও আমরা জিতেছি। এতে প্রমাণ হয় যে, তুমি মনোযোগ দিয়ে নিজের কাজ করলে মানুষের সমর্থন পাবে।”

[বিজেপিশাসিত হরিয়ানায় মহাভারত থিমে মিউজিয়াম, বিতর্ক তুঙ্গে]

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি গুজরাট সফর শেষ করি ১২ ডিসেম্বর। তারপরেই সর্বদল বৈঠকে যোগ দিয়েছিলাম। তারমধ্যেই আমি অনেকগুলি রাজ্য সফরও করেছি। আমি আপনাদের সবাইকে এমন ভাবেই কাজ করার জন্যই আহ্বান করছি৷ আপনারা একসঙ্গে কাজ করতে পারেন, কিন্তু জানবেন যে, আপনাদের আমার মতো কাজ করতে হবে। বড় থেকে বড় নেতারাও জয়ের খুশি অনুভব করেন যখন তা অত্যন্ত পরিশ্রমের সঙ্গে নিশ্চিত করতে হয়৷”

সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে অমিত শাহর নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। মোদি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে ‘মিলেনিয়াম জেনারেশন’ ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। তাদের কথা মাথায় রেখেই তিনি যুবনেতাদের দলের সংগঠনের সঙ্গে বেশি করে যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বৈঠকের পরে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমার জানান প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “দলকে শক্তিশালী করতে হবে৷ সারা দেশে দলের ভিত মজবুত করতে হবে৷ তার জন্য বুথ স্তর থেকে কাজ করা অত্যন্ত জরুরি। সঙ্গে মানুষের অভিনন্দন পেতে হবে যাতে নিজেদের পক্ষে ঢেউ তোলা যায়৷”

[ছোটা শাকিল কি মৃত? নয়া অডিও ক্লিপ ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ