সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অবসরেও ছাড় নেই। দরকার ছাড়পত্র। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে রাজ্য ও কেন্দ্র সংঘাতের দরুণ নয়া নিয়মের বেড়াজালে পড়েছে বাবুমহল। বিভিন্ন দপ্তরের অলিন্দে এনিয়ে চাপা অসন্তোষ থাকলেও আপাতত মুখে কুলুপ সকলের।
বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই তুঙ্গে রাজ্য বনাম কেন্দ্র তরজা। সম্প্রতি রাজ্যের সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে নবান্ন-নয়াদিল্লির সংঘাত নতুন মাত্রা পেয়েছে। এহেন পরিস্থিতি সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনের পক্ষ থেকে এক নয়া নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সেখানে সাফ বলা হয়েছে যে অবসরপ্রাপ্ত আমলাকে কোনও সরকারি পদে নিয়োগ করতে হলে এবার থেকে বাধ্যতামূলক ভাবে ভিজিল্যান্সের ছাড়পত্র নিতে হবে।
প্রশাসনিক মহলের একাংশের মতে, আমলাতন্ত্রের উপর নিয়ন্ত্রণের এই ফাঁসকে ভাল চোখে দেখছেন না অবসরের মুখে থাকা ‘বাবু’দের কেউ কেউ। তাঁদের বক্তব্য, সারাজীবন সৎভাবে কাজ করার নির্ণায়ক কেবল একটি ছারপত্র হতে পারে না। আধিকারিকের যোগ্যতা তাঁর পুরো কর্মজীবনের অর্জন। অবসরের পর এই নিয়মের গেরো না থাকলেই ভাল হতো। যদিও এনিয়ে এখনও প্রকাশ্যে কোনও আধিকারিকই মুখ খোলেননি। কেননা সেক্ষেত্রেও হয়তো নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আটকে যেতে পারে ছাড়পত্র। সব মিলিয়ে আলাপন ইস্যু আমলাতন্ত্রের উপর কাঁটা হয়েই জেগে রইল।
এই নয়া নির্দেশিকাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে বেনজির সংঘাতের ফল কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে রাজ্যে কর্মরত অল ইন্ডিয়া সার্ভিসের ‘অবাধ্য’ অফিসারদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে নয়াদিল্লি। তবে সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনের (CVC) এই নির্দেশিকা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে আর প্রযোজ্য হবে না। কারণ, ৩১ মে বিকেলে রাজ্যের মুখ্যসচিব হিসেবে অবসর নিয়ে ২৪ ঘণ্টা পর তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য উপদেষ্টা পদে যোগ দেন। আর ৩ জুন নতুন নির্দেশিকা জারি করে ভিজিল্যান্স। এই নির্দেশে ‘রেট্রোস্পেকটিভ এফেক্ট’-এর কথাও উল্লেখ নেই। বৃহস্পতিবারের ওই নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, আমলারা অবসর নেওয়ার আগে সরকারের যে সংস্থার হয়ে কাজ করেছেন, ছাড়পত্র নিতে হবে তাদের থেকেই। সে ক্ষেত্রে অবসর নেওয়ার আগে যদি ওই অফিসার একাধিক সংস্থার হয়ে কাজ করে থাকেন, তবে শেষ ১০ বছরে যে যে সংস্থার হয়ে তিনি কাজ করেছেন, তাদের প্রত্যেকের থেকে নিতে হবে ছাড়পত্র। এই ছাড়পত্রের জন্য সংশ্লিষ্ট ভিজিল্যান্স কমিশনের কাছে আবেদন করতে হবে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনের কাছেও আবেদনের কপি পাঠাতে হবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি এক নয়া নির্দেশিকা জারি করে কেন্দ্র জানিয়েছিল ভারত সরকারের গোয়েন্দা বা প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সংস্থা থেকে অবসরপ্রাপ্ত কোনও কর্মী বা আধিকারিক সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধানের অনুমতি ছাড়া নিজের কর্মজীবনের বিষয়ে কোনও বই প্রকাশ করতে পারবেন না। সেখানে আরও বলা হয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত কর্মী নিজের কর্মসূত্রে পাওয়া এমন কোনও নথি বা খবর প্রকাশ করতে পারবেন না যাতে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা বিপন্ন হয়। এর অন্যথায় শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.