সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রায় ১১ মাস আগে তিব্বতী ধর্মগুরু দলাই লামার অরুণাচল প্রদেশ সফরের পর থেকেই খানিকটা রুষ্ট ছিল বেজিং। ডোকলামেও অচলাবস্থা কেটেছে প্রায় আড়াই মাস পর। এই অবস্থায় চিনকে ‘তুষ্ট’ করতেই কি সরকারি কর্মীদের ধর্মগুরু দলাই লামার অনুষ্ঠান এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিল কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রক?
কেন্দ্রীয় বিদেশসচিব বিজয় গোখলে ক্যাবিনেট সচিব পি কে সিনহাকে এক নোটে জানিয়েছেন, দলাই লামার অনুষ্ঠান এড়িয়ে যেতে। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদনের অন্তত এমনটাই দাবি। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দীর্ঘদিনের জমানো বরফ গলিয়ে বিদেশসচিব উড়ে যান বেজিংয়ে। সেখানে চিনা বিদেশমন্ত্রী ও স্টেট কাউন্সিলরের সঙ্গে তিনি একদফা বৈঠক করেন। গতবছর বিদেশসচিব এস জয়শংকরের চিন সফরের পর এটাই এবছরের প্রথম দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দলাই লামার অরুণাচল প্রদেশ সফরকে কেন্দ্র করে ভারত ও চিনের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়। কার্যত রুষ্ট হয়েই গোটা বছর জুড়ে ভারতের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক ও সামরিক আগ্রাসন দেখায় বেজিং। শেষ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে মধুর করতেই গোখলেকে বেজিং যেতে হয়।
[নজরে চিন-পাকিস্তান, পারমাণবিক শক্তিধর পৃথ্বী ২-র সফল উৎক্ষেপণ করল ভারত]
চিনের অনড় মনোভাব আঁচ করতেই পেরেই গোখলে সম্ভবত কেন্দ্রীয় কর্মীদের দলাই লামার যে কোনও অনুষ্ঠান এড়িয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন। নয়াদিল্লি যদিও বারবারই বলে এসেছে, দলাই লামা একজন ধর্মীয় নেতা। তিনি ভারতের অতিথি। এ দেশের যে প্রান্তে খুশি তিনি যেতে পারেন। এমনকী, অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেণ রিজিজুও একই কথা বলেন। কিন্তু চিন কিছুতেই দলাই লামাকে একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার বাইরে ভাবতে নারাজ। বেজিং তাঁকে ‘ভেড়ার পোশাক পরা এক নেকড়ে’ বলে ডাকে। দলাই লামার অরুণাচল সফরের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করে তৎকালীন চিনা বিদেশমন্ত্রী গতবছরের এপ্রিল মাসে তাঁর ভারত সফর বাতিল করেন। আর তারপর মে মাস থেকে শুরু হয়ে যায় ডোকলামে অচলবস্থা। শেষ পর্যন্ত জুনে ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একমত হন, যে নানা বিষয়ে মতভেদ থাকলেও দুই দেশের সামগ্রিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে তার প্রভাব পড়বে না। নয়াদিল্লি হাড়ে হাড়ে টের পায়, আধুনিক চিনকে ‘পাকিস্তান’ ভেবে সামরিক হুমকি দেখিয়ে লাভ হবে না। বরং কূটনৈতিক স্তরে গিয়ে বেজিংয়ের আগ্রাসনের জবাব দিতে হবে। পাশে টেনে নিতে হবে আমেরিকার মতো দেশকে।
যদিও বিদেশমন্ত্রকের তরফে আজও জানানো হয়েছে যে, দলাই লামা ভারতের সর্বত্র ধর্মীয় কাজে সফর করতে পারেন। ওই সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টকে উড়িয়ে কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রকের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, দলাই লামার সম্পর্কে ভারত নিজের অবস্থান থেকে একচুলও নড়বে না। মন্ত্রক এক বিবৃতি আজ জানিয়েছে, ‘দলাই লামার মতো একজন উচ্চমার্গের ধর্মীয় নেতার প্রতি ভারত সর্বদা শ্রদ্ধাশীল। তিনি ভারতের সর্বত্র ঘুরতে পারেন। যে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন। চিনকে তুষ্ট করতে ভারত দলাই লামার গতিবিধির উপর যে কোনওরকম বিধিনিষেধ আরোপ করছে না, সে কথা আজ স্পষ্ট করেছে বিদেশমন্ত্রক।