সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একেই করোনা আতঙ্কে নাজেহাল। তার উপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত গাফিলতি। দুয়ে মিলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হল এক পরিবারকে। মৃতদেহ কবর দিয়ে আসার পর আত্মীয়রা জানতে পারলেন, তাঁদের রোগী ‘স্থিতিশীল’!
হ্যাঁ, এমনই আজব ঘটনা ঘটেছে আহমেদাবাদে। গত ২৮ মে দুপুরে আচমকাই সুগার লেভেল বেড়ে যায় ৭১ বছরের দেবরামভাই মোহনগুরাও ভিসিকরের। সর্দি-কাশিও ছিল। এক মুহূর্ত দেরি না করে তাঁকে আহমেদাবাদের সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যান বাড়ির লোকেরা। চেস্ট এক্স-রে’র পর রোগীকে কোভিড ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন ডাক্তাররা। সন্ধেতে তাঁকে ওই হাসপাতালের ক্যাম্পাসেই GCRI-এ (গুজরাট ক্যানসার অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট) স্থানান্তরিত করা হয়। ২৯ মে পরিবারকে জানানো হয়, বিরাটনগরের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। পরিবারে নামে শোকের ছায়া। পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় মৃতদেহ। তবে কোভিড নিয়ম মেনে গোটা দেহই প্লাস্টিকে মোড়ানো ছিল। তাই রোগীর মুখ দেখতে পাননি বাড়ির সদস্যরা। কিন্তু রোগীর সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র পাওয়ার পর তাঁরা নিশ্চিত হন ইনিই দেবরামভাই। নিজেদের সামলে নিয়ে সেদিন রাতেই মৃতদেহ কবর দিয়ে দেন তাঁরা।
এতদূর পর্যন্ত ঘটনায় কোনও ধন্দ নেই। কিন্তু ঠিক এরপরই জটিল হয়ে ওঠে গোটা পরিস্থিতি। বৃদ্ধকে কবর দিয়ে রাত ১১টায় বাড়ি ফেরেন জামাই নীলেশ। রাত দেড়টা নাগাদ ফোন আসে। এত রাতে অচেনা নম্বর দেখে প্রথমে মৃতের মেয়ে। ৩০ তারিখ সকালে একই নম্বর থেকে ফের ফোন আসে। ওপারে গলা হাসপাতালের কল সেন্টারের কর্মীর। যিনি জানান, দেবরামভাইয়ের করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তাঁকে কোভিড ওয়ার্ড থেকে স্থানান্তরিক করা হয়েছে। আপাতত তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। নিজেদের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না রোগীর পরিবার। তাহলে গতকাল রাতে যাঁকে কবর দিয়ে আসা হল, তিনি কে?
মনে নানা প্রশ্ন নিয়েই হাসপাতালে হাজির হন তাঁরা। সেখানে আবার আরেক গল্প। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, দেবরামভাইয়েরই মৃত্যু হয়েছে। সকালে হয়তো ফোন করতে গিয়ে তাঁদের কাছে কল চলে গিয়েছে। এই শুনে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। দুপুর আড়ইটে নাগাদ ফের হাসপাতালের ফোন। এবার বলা হয়, না। কোনও ভুল হয়নি। দেবরামভাইবাবু বেঁচেই আছেন। অনেকটাই সুস্থ তিনি।
হাসপাতালের গাফিলতিতে চূড়ান্ত ভোগান্তির শিকার হয় পরিবারটি। কর্তৃপক্ষের উপর ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা। যদি নিজেদের উপর থেকে সব দায় ঝেড়ে ফেলছে হাসপাতাল। তাদের দাবি, কন্ট্রোল রুম থেকে যিনি কল করেছিলেন, তিনি সমস্তটা গন্ডগোল করেছেন। তথ্য না জেনেই রোগীর পরিবারকে ফোন করেছিলেন তিনি। তবে দোষ যারই হোক, লকডাউনের আবহে পরিবারকে যা সহ্য করতে হল, তা সত্যিই কল্পনাতীত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.