সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নয় দিন কেটে গিয়েছে। এখনও উত্তর কাশীর সংকীর্ণ সুড়ঙ্গের ভিতরে আটকে রয়েছেন ৪১ জন শ্রমিক। এখন লড়াই, আটক শ্রমিকদের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়া, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখার। তাতেই এখন ব্যস্ত উদ্ধারকারীরা। তবে শুকনো খাবার আর নয়। চেষ্টা চলছে সুষম, সহজপাচ্য খাবার পৌঁছে দেওয়ার। যেমন মুগডালের খিচুড়ি, ফল, তরল খাবার। এদিকে, এই প্রথম আটকে থাকা শ্রমিকদের ছবি ধরা পড়ল ক্যামেরায়।
কীভাবে খাবার পাঠানো হচ্ছে? পাইপের সাহায্যে। তবে আগেরটি নয়। একেবারে নতুন পাইপ। খাবার পাঠানোর জন্য জঞ্জাল ভেদ করে ৬ ইঞ্চি চওড়া নতুন একটি পাইপ বসানো হয়েছে। যার একটি মুখ রয়েছে সুড়ঙ্গের ভিতরে শ্রমিকদের কাছে। সেই পাইপে করেই সুষম খাবার পাঠানো হচ্ছে। জানা গিয়েছে, চিকিৎসক তথা পুষ্টি-বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে শ্রমিকদের জন্য তৈরি হয়েছে বিশেষ ডায়েট প্ল্যান। তাতেই নাম রয়েছে মুগ ডালের খিচুড়ির। সোমবার খিচুড়ি পাঠানো হয়েছে পাইপের মাধ্যমে। তবে শুধু খাবার নয়, পরবর্তীতে ওই ৬ ইঞ্চির পাইপ যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবেও ব্যবহার হবে। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, চার্জার-সহ একটি ফোন শ্রমিকদের কাছে ওই পাইপের মাধ্যমে পাঠানো হবে, যার মাধ্যমে শ্রমিকরা কথা বলতে পারবেন। এদিকে, সোমবার রাতে প্রথমবার আটকে থাকা শ্রমিকদের ছবি ধরা পড়ল ক্যামেরায়। দ্রুত উদ্ধারের কাতর আবেদন শোনা গিয়েছে তাঁদের মুখে।
এদিকে সোমবার এই নিয়ে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাশাপাশি তিনি এদিন সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্দেশে বার্তাও দিয়েছেন। বলেছেন, কোনও পরিস্থিতিতেই যেন শ্রমিকরা মনোবল না হারিয়ে ফেলেন। তাছাড়াও ফোনে কথা বলার সময় ধামিকে মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, শ্রমিকদের উদ্ধারকাজে কেন্দ্রীয় সরকার সবরকম সাহায্য করছেন, পরেও করবেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ নভেম্বর ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ব্রহ্মখাল-যমুনোত্রী হাইওয়ের নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গের একাংশ ধসে পড়ে। সেই থেকে মাত্র সাড়ে আট মিটার লম্বা এবং প্রায় দুমিটার চওড়া সুড়ঙ্গে শ্রমিকরা আটকে রয়েছেন। তাঁদের উদ্ধারের জন্য ইতিমপধ্যে বহু চেষ্টা চলেছে। উদ্ধারকাজের গতি তদারকি করতে সোমবারই অকুস্থলে পৌঁছয় আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল। ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল টানেলিং অ্যান্ড আন্ডারগ্রাউন্ড স্পেস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আর্নল্ড ডিক্স। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘এখানে কাজ খুব ভালোভাবে এগোচ্ছে। আমাদের গোটা দল আছে। সকলে মিলে ঠিক শ্রমিকদের বের করে আনব।’’
বলে রাখা ভালো, শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য একটি নয়, একাধিক সংস্থা-সংগঠন কাজ করে চলেছে। যেমন ওএনজিসি, বিআরও (বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন), আরভিএনএল (রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড), এনএইচআইডিসিএল (ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড), এনএইচপিসি (ন্যাশনাল হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন), এসজেভিএনএল (সতলেজ জল বিদু্যৎ নিগম লিমিটেড) প্রভৃতি। জানা গিয়েছে, শ্রমিকদের উদ্ধার করতে কেন্দ্র এগোচ্ছে পাঁচ-দফা পরিকল্পনা নিয়ে। যে পাহাড়ি সুড়ঙ্গপথে শ্রমিকরা আটকে আছেন, তার তিন দিক দিয়ে খননকাজ চালানো হবে। রাস্তা কেটে তৈরি করা হবে শ্রমিকদের কাছাকাছি যাওয়ার। পাঁচটি উদ্ধারকারী সংস্থা-সংগঠন দায়িত্ব পেয়েছে।
এর মধ্যে দুটি রাস্তা খনন করা হবে আনুভূমিকভাবে, প্রধান সুড়ঙ্গের ডান এবং বাম দিক থেকে। আর তৃতীয়টি হবে উল্লম্বভাবে, উপরের দিক থেকে। বর্তমানে, উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল–খননকাজের জন্য ড্রিলিং মেশিন চালানো। কারণ এর আগে তা করতে গিয়েই ধস নেমেছিল। এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগে শ্রমিকদের পরিবার। আদৌ নিরাপদে তাদের উদ্ধার করা যাবে কি না, এই প্রশ্নই ঘুরছে তাদের মনে।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.