Advertisement
Advertisement

Breaking News

Kashmir

কাশ্মীর সমস্যার ‘ভিলেন’ কি নেহরুই? ইতিহাসের গোপন নথি দেয় ‘অন্য’ ইঙ্গিত

কেন সেই সময় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী?

Interesting facts on the history of Kashmir। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:March 11, 2023 6:55 pm
  • Updated:March 11, 2023 6:57 pm

বিশ্বদীপ দে: কাশ্মীর (Kashmir)। স্বাধীনতার আমল থেকে এই নামটি উচ্চারিত হওয়া মানেই যেন বিতর্কের মেঘ ঘনিয়ে আসা। ২০১৯ সালের আগস্টের পর ৩৭০ ধারার অবলুপ্তির পর সেই ইতিহাস নিয়ে চর্চায় আরও গতি এসেছে স্বাভাবিক ভাবেই। রাষ্ট্রসংঘে পাকিস্তান বারবার চেষ্টা করে গিয়েছে এই ইস্যুতে ভারতকে চেপে ধরতে। কিন্তু তাদের সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে ভারত জানিয়ে দিয়েছে, কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর এই বিষয়ে নাক গলানোর ন্যূনতম অধিকারও নেই ইসলামাবাদের। সেই সঙ্গে নয়াদিল্লি জোরের সঙ্গে জানিয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরও ভারতেই অংশ। সব মিলিয়ে হালফিলে কাশ্মীর বিতর্ক নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে বারবার।

আর আলোচনা একবার শুরু হলেই দেশের স্বাধীনতার সমসাময়িক সেই ইতিহাস নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে যায়। কী করে সৃষ্টি হল কাশ্মীর সমস্যার? এর জন্য দায়ী কি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু (Jawaharlal Nehru)? কেন পাকিস্তানের দখল করে নেওয়া কাশ্মীরের ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করা যায়নি? এই সব প্রশ্ন ও তার নানা ধরনের উত্তর ঘুরে ফিরে আসতে থাকে। এই লেখায় আমরা সেই দিকগুলি একবার ফিরে দেখব। বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করব সেই সময়ের ঘটনাবলি। খোঁজার চেষ্টা করব, সত্য়িই কি নেহরুর জন্য়ই সৃষ্টি হয়েছিল ওই পরিস্থিতির?

Advertisement

Jammu: Scores of protesting job aspirants were detained as the police resorted to lathi-charge

Advertisement

ব্রিটিশরা যখন ঘোষণা করল তারা এদেশ ছেড়ে চলে যাবে, সেই সময় তৈরি হয়েছিল এক আশঙ্কাও! আসলে ভারতে দেশীয় রাজ্য ছিল ৫৬৫টি। তারা সেই অর্থে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এই ৫৬৫টি করদ রাজ্য তথা ‘প্রিন্সলি স্টেট’ প্রাক-স্বাধীনতা পর্বে ভারতবর্ষের ৪৮ শতাংশ অংশ জুড়ে ছিল। ইংরেজরা যখন ঘোষণা করে তারা ভারত ছেড়ে চলে যাবে, তখন এই প্রদেশগুলির সঙ্গে ব্রিটেনের যে চুক্তি তারও সমাপ্তি ঘোষিত হয়।

[আরও পড়ুন: ফেসবুকে স্বেচ্ছামৃত্যুর পোস্ট গায়ক অনিন্দ্যর, ‘বন্ধু’কে সামলাতে কী করলেন ‘ক্যাকটাসে’র সিধু?]

ফলে দেশীয় রাজ্যগুলির সুযোগ ছিল ভারত কিংবা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে স্বাধীন থেকে যাওয়ার।
আর এই প্রশ্নেই সংশয়াচ্ছন্ন ছিলেন কাশ্মীরের রাজা হরি সিং। কখনও বম্বের রেসকোর্স, কখনও কাশ্মীরের অরণ্যে শিকার খেলা এই নিয়েই মত্ত ছিলেন তিনি। তার ফাঁকেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি স্বাধীনই থাকতে চান। তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক ছিল ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেনের। তিনি নিজে গিয়ে আলোচনা করতে চান হরি সিংয়ের সঙ্গে। প্রাথমিক কতাবার্তাও হয়। কিন্তু যেদিন স্রেফ দু’জনের মুখোমুখি আলোচনায় বসার কথা, সেদিন মহারাজা জানিয়ে দেন তাঁর পেটব্যথা। তিনি আলোচনা করবেন না। আসলে এভাবেই তিনি পাশ কাটিয়ে দিতে চেয়েছিলেন বিষয়টি। এর মধ্যেই এসে পড়ে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও কাশ্মীর নিয়ে তখনও মীমাংসা হয়নি।

এদিকে পাকিস্তানের পাশতুন উপজাতি বাহিনী জম্মু ও কাশ্মীর (Jammu and Kashmir) করে বসে এরপরই। বাধ্যত মাউন্টব্যাটেনের দ্বারস্থ হন হরি সিং। এরপরই মাউন্টব্যাটেনের প্রস্তাব মেনে ‘ইনস্ট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশনে’ স্বাক্ষর করেন তিনি। এর ফলে জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অংশ হয়ে যায়।

Lithium reserves have been found for the first time in the country in Jammu and Kashmir

[আরও পড়ুন: গ্রেপ্তারির পর প্রথমবার মুখ খুললেন নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত শান্তনু, কী বললেন?]

এই পরিস্থিতিতে শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। এতদিন যে লড়াইয়ে পাশতুন বাহিনীর সঙ্গে লড়ছিল ‘জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর স্টেট ফোর্সেস’, এবার সেই লড়াইয়ে অংশ নিল ভারতীয় সেনা। ১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর শুরু হয় যুদ্ধ। চলেছিল ১ বছর ২ মাস ২ সপ্তাহ সময়কাল ধরে। পরে ১৯৪৯ সালের ৫ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরিত হয়। তবে তার আগে ১৯৪৮ সালেই যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যায়। যুদ্ধবিরতির পর নিয়ন্ত্রণরেখা তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু জারি থেকে যায় বিতর্ক। পাক অধিকৃত কাশ্মীর আর পুনরুদ্ধার করা যায়নি। যা নিয়ে আজও প্রশ্ন ওঠে। কেন সেই সময় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিলেন নেহরু?

মাত্র কয়েকদিন আগে, ৮ মার্চ ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘গার্ডিয়ানে’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে কিছু গোপন নথির। যে সূত্রের কথা জানিয়ে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, নেহরু যে সেই সময় আচমকাই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করে দেন এর পিছনে ছিলেন তৎকালীন কমান্ডার-ইন-চিফ জেনারেল স্যার ফ্রান্সিস রবার্ট রয় বুচার। তিনি নেহরুকে জানিয়েছিলেন, যুদ্ধরত সেনা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় আর ‘অলআউট’ যাওয়া সম্ভব নয়। তিনি জানিয়েছিলেন একদিকে জুনিয়র অফিসারদের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব, ক্লান্তি। অন্যদিকে বাকি র‍্যাঙ্কের অফিসারদের মধ্যেও উদ্দীপনার ঘাটতি। এককথায় বলতে গেলে, এই মুহূর্তে বিশ্রাম প্রয়োজন সেনার।

Nehru

তাঁর এই চিঠির উত্তরে নেহরু উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, পাকিস্তান যে কোনও সময় ভারতে বোমা ফেলতে পারে আকাশপথে। পাশাপাশি পাকিস্তান রাস্তাও তৈরি করছে কাশ্মীরের সীমান্তে। এই আশঙ্কার জবাবে জেনারেল বুচার লেখেন, ‘আমার ভয়, এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের এই রাস্তা নির্মাণ রুখতে সেনাকে ব্যবহার করা সমস্যার। আমি মনে করি, এই সমস্যার সমাধান রাজনৈতিক উপায়ে করা উচিত।’

জেনারেল বুচারের এই যুক্তিই শেষ পর্যন্ত মেনে নেন জওহরলাল নেহরু। যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এরপর সেই বছরই ‘স্পেশাল স্টেটাস’ দেওয়া হয় জম্মু ও কাশ্মীরকে। ২০১৯ সালে সংবিধানের ৩৭০ ধারার অবলুপ্তির পর নতুন করে শুরু হয়েছে সেই বিতর্ক। মোদি সরকার কাঠগড়ায় তুলেছে নেহরুকেই। এই পরিস্থিতিতে গার্ডিয়ান প্রকাশিত নথি ঘিরে বিতর্ক নতুন মাত্রা পাচ্ছে বলাই বাহুল্য।

এর মধ্যেই জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা জানিয়ে দিয়েছেন, ”অখণ্ড ভারত এবার সত্য়িই হবে। পাক অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংসদে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সেটা এবার পূরণ করা হবে। পাকিস্তান অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের অংশ বৈষ্ণো দেবী ও বাবা অমরনাথের আশীর্বাদধন্য হবে।” তাঁর এহেন হুঁশিয়ারি নতুন করে বুঝিয়ে দিচ্ছে দশকের পর দশক পেরিয়ে আজও কাশ্মীর এমন এক ইস্যু, যা জ্বলন্তই রয়ে গিয়েছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ