Advertisement
Advertisement

Breaking News

স্বজনহারার কান্নায় এখনও ভারী পুখরায়ানের বাতাস

স্থানীয় হাসপাতালগুলিতে এখনও উপচে পড়া ভিড়৷

Kanpur train derailment, still local hospitals are packed with patients
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:November 22, 2016 12:18 pm
  • Updated:November 22, 2016 12:18 pm

জ্যোতির্ময় কর্মকার, পুখরায়ান: রবিবার কানপুরের কাছে পুখরায়ানে দুর্ঘটনায় পড়া পাটনা-ইন্দোর এক্সপ্রেসে উদ্ধার কাজ শেষ৷ সোমবার সকালেও গ্যাস কাটার দিয়ে ট্রেনের একাধিক কামরা কেটে বেশ কয়েকটি দেহ উদ্ধার করা হয়৷ উদ্ধার করা হয়েছে রেলযাত্রীদের মালপত্র৷ আপাতত ঘটনাস্থলেই ওই সব জিনিসপত্র রাখা হয়েছে৷ পরে তা যাত্রীদের ঠিকানায় পাঠানো হবে৷ দুর্ঘটনার পর এই মুহূর্তে স্থানীয় হাসপাতালগুলিতে উপচে পড়া ভিড়৷ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আহতদের চিকিৎসা চলছে৷ ডাক্তার-নার্স সকলেই দিন-রাত এক করে আহতদের সুশ্রূষা করে চলেছেন৷

পুখরানার স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে যেন পা রাখারও জায়গা নেই৷ হাসপাতালের সব শয্যা তো আগেই ভর্তি হয়ে গিয়েছে৷ রোগীর ভিড়ে মেঝেতেও পা রাখার জায়গা নেই৷ এরই মধ্যে চোখেমুখে গভীর ক্ষতের দাগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে দু’ বছরের আরোহী৷ রবিবারের দুর্ঘটনা আরোহীকে যেন বড় একা করে দিয়েছে৷ হাসপাতালে এক আত্মীয়ের কোলে থাকা আরোহী অনবরত কেঁদে চলেছে৷ ছোট্ট এই শিশুর মা প্রতিভা সোনি কানপুরের সরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন৷ খুড়তুতো দিদি পূজা আর কাকিমা হেমন্ত সোনির দেহ সোমবার উদ্ধার হয়েছে৷ আরোহীর প্রিয় ঠাকুমা কৌশল্যার এখনও কোনও হদিশ নেই৷

Advertisement

বাবা রীতেশ সোনি সোমবার সকালেই ইন্দোর থেকে পুখরানায় এসে পৌঁছেছেন৷ রীতেশ পাগলের মতো আরোহী-সহ পরিবারের অন্য সদস্যদের খুঁজে চলেছেন৷ ইন্দোরের এই সোনি পরিবার যাচ্ছিল গাজিপুর, আরোহীর কাকা রাকেশ সোনির বিয়েতে৷ কিন্তু বিয়ের আনন্দ তো দূরের কথা, পুরো পরিবারটাই এখন বিষাদে ঢেকে গিয়েছে৷ নিয়ম-কানুনের জেরে মেয়ে আরোহীকে দেখতে পেলেও তাকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারছেন না রীতেশ৷ যদিও হাসপাতালে বাবাকে দেখতে পেয়েই তাঁর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ছোট্ট আরোহী৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উপযুক্ত প্রমাণ পেশ করে আরোহীকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন রীতেশ৷

Advertisement

আরোহীর পাশের বেডেই পা ভাঙা অবস্থায় শুয়ে রয়েছে চার বছরের আদর্শ পাণ্ডে৷ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন রবিবারের দুর্ঘটনায় জখম হওয়া যাত্রীরা ভয়ংকর আতঙ্কে ভুগছেন৷ আহতদের চোখ-মুখ থেকে কোনওভাবেই আতঙ্ক কাটছে না৷ ফলে এই সমস্ত যাত্রীদের স্নায়ুর রোগ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা৷ তবে পুখরানার স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আলাদা কেবিনে আরোহী ও আদর্শকে রাখা হয়েছে৷ ডাক্তার ও নার্সরা আলাদা করে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন এই দুই শিশুকে৷

পুখরানা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে ভর্তি ছয়টি বাচ্চা ৪০ ঘণ্টায় একবারও চোখের পাতা এক করেনি৷ চিকিৎসক শিবম তিওয়ারির দাবি, রবিবার ভোর ৩টা ৩৫ মিনিটে দুর্ঘটনায় জখম হওয়া প্রথম রোগী হাসপাতালে আসেন৷ তারপর জলের স্রোতের  মতো একের পর এক রোগীকে নিয়ে আসা হয়েছে৷ কারও হাত-পা ছিন্নভিন্ন, কারও শরীরের একাধিক হাড় ভেঙে টুকরো হয়ে গিয়েছে৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রবিবার ৯৯ জনকে জীবিত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল৷  ১০ জনকে আনা হয়েছিল মৃত অবস্থায়৷ এর পরই পুখরানা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকরা জীবনের সবেচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় আসরে নামেন৷

কানপুরের দিহাত জেলার প্রত্যন্ত এক এলাকা পুখরানা৷ স্বাভাবিকভাবেই সেখানকার হাসপাতালে নামকাওয়াস্তে অপারেশন থিয়েটার, এক্সরে ক্লিনিক, এমআরআই সেণ্টার থাকলেও কাজের সময় সবই অকেজো৷ এহেন পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনায় পড়া মুমূর্ষু মানুষগুলোর কোনওরকমে জীবন বাঁচানোই ছিল একমাত্র লক্ষ্য৷ সেকথা স্বীকার করে নিয়েছেন ডাক্তার তিওয়ারি৷ তিনি জানিয়েছেন, আহতদের অনেকেরই জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন করার প্রয়োজন ছিল৷ কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায় জীবনদায়ী ন্যূনতম প্রাথমিক চিকিৎসার পরই বেশিরভাগ আহতকে কানপুর বা মালসার বড় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে৷ আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে ইতিমধ্যেই রক্তদানের আহ্বান জানানো হয়েছে৷ কানপুর  ও সংলগ্ন এলাকার হাসপাতালগুলির সামনে সোমবার সকাল থেকেই ছিল উদ্বিগ্ন মানুষের ভিড়৷ স্বজনহারার কান্নায় বাতাস ছিল ভারী৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ