Advertisement
Advertisement
দিল্লি

হিংসার মধ্যে প্রাণের সঞ্চার, পেটে লাথি খেয়েও সুস্থ সন্তানের জন্ম দিলেন দিল্লির মহিলা

হাসপাতাল থেকে বেরনোর পর কোথায় থাকবে সদ্যোজাত, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় প্রসূতি ও তাঁর পরিবার।

Kicked in the abdomen, woman gives birth of a baby boy
Published by: Sayani Sen
  • Posted:February 28, 2020 2:29 pm
  • Updated:February 28, 2020 5:11 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হিংসার আগুনে জ্বলছে দিল্লি(Delhi)। হিংসাকারীদের রোষানল থেকে বাদ যাচ্ছেন না মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা কেউই। ঠিক তেমনই হামলার শিকার হন বছর তিরিশের অন্তঃসত্ত্বা শাবানা পারভিন। তাঁর পেটে একাধিকবার লাথি মারে হামলাকারীরা। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন। যেকোনও মুহূর্তে ঘটতে পারত বিপদ। প্রাণহানি হতে পারত গর্ভস্থ সন্তান কিংবা মায়ের। কিন্তু দুঃসময়েও ঘটল বিস্ময়কর ঘটনা। হামলার শিকার হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতালে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিলেন তিনি। বাড়িঘর পুড়ে যাওয়ার পরেও ‘বিস্ময় শিশু’ই যেন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে শাবানা এবং তাঁর পরিজনদের।

জাফরাবাদ, মউজপুর, বাবারপুর, যমুনা বিহার, ভজনপুরা, চাঁদবাগ, শিববিহার তখন জ্বলছে। ঘরের ভিতরে স্বামী, দুই সন্তান, শাশুড়িকে নিয়ে চুপ করে বসেছিলেন শাবানা পারভিন। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মানসিক চাপ যে কি বিপজ্জনক, তা জানেন শাবানা। তাই বারবার আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছিলেন। খাওয়াদাওয়া সেরে সকলেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু আচমকাই ঘুম ভাঙে হামলাকারীদের চিৎকারে। ঘুম ভেঙে দেখেন একদল লোক তাঁর স্বামীকে বেধড়ক মারধর করছে। শরীরের অবস্থার কথা ভুলে গিয়ে স্বামীকে বাঁচাতে দৌড়ে গিয়েছিলেন। তবে উন্মত্ত হামলাকারীদের কাছে একজন পুরুষও যা আর অন্তঃসত্ত্বা কোনও মহিলাও একই। তাই শাবানাকেও মারধর করতে শুরু করে তারা। পেটে একের পর এক লাথি মারতে থাকে হামলাকারীরা। পুত্রবধূর উপর এমন হামলা দূর থেকে দেখে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারেননি শাবানার শাশুড়ি। তিনিও অন্তঃসত্ত্বাকে বাঁচাতে দৌড়ে যান। বৃদ্ধাও মারধরে জখম হন ভালই। পরিবারের সদস্যদের মারধর করেও শান্ত হয়নি হামলাকারীরা। কেউ ভাঙছে বাড়ির জিনিসপত্র, তো কেউ লাগিয়েছে আগুন। চোখের সামনেই সাজানো সংসার ছারখার করে দিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় হামলাকারীরা।

Advertisement

[আরও পড়ুন: অশান্তি থেকে নবদম্পতিকে বাঁচাতে ঢাল মুসলিম প্রতিবেশীরা, চাঁদবাগে সম্প্রীতির ছবি]

ততক্ষণে অবশ্য যন্ত্রণায় প্রায় গোটা শরীর অবশ হয়ে গিয়েছে শাবানার। তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আল-হিন্দ হাসপাতালে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয় চিকিৎসা। বেশ কিছুক্ষণ পর গত বুধবার সুস্থ পুত্রসন্তানের জন্ম দেন শাবানা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ত্রিশ বছর বয়সি শাবানা এবং সদ্যোজাত দু’জনেই সুস্থ। কয়েকদিন পর্যবেক্ষণে রেখেই ছেড়ে দেওয়া হবে মা ও সন্তানকে। দুঃসময়ে সদ্যোজাতের জন্মে বেজায় খুশি শাবনার পরিজনেরা। ওই মহিলার বড় ছেলে খেলার সঙ্গী পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। ছ’বছরের আলি ছোট্ট ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “আমি সবসময় ওর যত্ন নেবো। যেকোনও বিপদ থেকে আগলে রাখব ভাইকে।”

বারবারই নিজের বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন শাবানার শাশুড়ি। তবে বাড়িতে আর আস্ত নেই কিছুই। না রয়েছে আসবাবপত্র। না রয়েছে অন্য জিনিসপত্র। যেখানেই হাত দিচ্ছেন শুধু ছাই আর ছাই। নাকে ভেসে আসছে পোড়া গন্ধ। সাজানো সংসারের এমন দশা দেখে প্রায় কেঁদে ফেলছেন ওই বৃদ্ধা। ছোট্ট নাতিকে যে কোথায় রাখবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না কিছুতেই। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেই শাবানা এবং সদ্যোজাতকে সঙ্গে নিয়ে কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়া ছাড়া আর গতি নেই তাঁদের। কিন্তু কবে যে আবার আগের মতো সুখের সংসার সাজিয়ে তুলতে পারবেন, সেই চিন্তায় চোখের কোণ ভিজছে সকলের।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement