সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিরোধীদের তীব্র প্রতিবাদ সত্ত্বেও সোমবার গভীর রাতে লোকসভায় পাশ হল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৯। দিনের শুরুতেই সংসদে বিলটি পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এবার রাজ্যসভায় বিলটি পাশ হলে তা আইনে পরিণত হবে।
নিম্নকক্ষে বিলটি পেশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিবাদে সরব হয় কংগ্রেস। উক্ত বিলটি সংবিধানে উল্লেখিত ধর্মীয় নিরপেক্ষতার অবমাননা। তা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ও সংবিধানের ১৪ ধারার উলঙ্ঘন বলে দাবি করেন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরি। তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায়ও বিলটির প্রতিবাদে সরব হন। তাঁর বয়ান, এহেন পদক্ষেপে আজ দেশের সংবিধান বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পালটা জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিলটি কোনওভাবেই সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নয়। অসমের কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ দাবি করেন, এই বিলটি স্পষ্টভাবে অসম চুক্তির অবমাননা করছে।
[আরও পড়ুন: আর্থিক অনটন, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ একধাক্কায় অনেকটা কমাচ্ছে মোদি সরকার!]
সোমবার সকাল থেকেই বিতর্কিত বিলটির প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে অসম ও ত্রিপুরা। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন প্রতিবাদকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয়ছে অতিরিক্ত বাহিনী। গুয়াহাটিতে ছাত্র সংগঠন ‘আসু’-র নেতৃত্বে চলছে বিক্ষোভ মিছিল। পাশাপাশি কংগ্রেসও সুর চড়িয়েছে। তবে এর আগে আরএসএস-এর ছাত্র সংগঠন ‘অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ’ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সমর্থনে পালটা মিছিল বের করে। মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মিজোরামেও কেন্দ্রের এই বিলটির বিরুদ্ধে সুর চড়ছে। এদিক, সোমবার ও মঙ্গলবার টানা ৪৮ ঘণ্টার বনধ ডেকেছে আসু-সহ একাধিক সংগঠন। ফলে স্বভাবিকভাবেই বিপর্যস্ত সাধারণ জনজীবন।
বিলটি গত লোকসভায় পাশ হলেও তা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক অব্যাহত। বিলে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় পীড়নের কারণে এ দেশে শরণার্থী হিসেবে হিন্দু, পার্সি, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা আশ্রয় নিতে বাধ্য হলে, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। সেখানে প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা মুসলিমদের বিষয়ে কোনও উল্লেখ নেই। ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে বাঁচতে এ দেশে আশ্রয় নেওয়া অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ বলেই জানাচ্ছে সরকার পক্ষ। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি প্রথম মোদি সরকারের আমলেই লোকসভায় পেশ হয়। নিম্নকক্ষে তা পাশও হয়ে যায়। কিন্তু বিরোধীদের আপত্তিতে তা আর রাজ্যসভায় পেশ করা যায়নি। নিয়ম অনুযায়ী, লোকসভার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বিলটিরও মেয়াদ ফুরায়। ফলে নতুন লোকসভায় তা আবার পেশ করা হয়। দুপুরে বিল পেশ হওয়ার, দীর্ঘ আলোচনা-বিতর্কের পর রাত ১২টার পর ৩১১ – ৮০ ভোটে পাশ হয়ে যায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৯।