সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্বামী অভেদানন্দ তাঁর ‘মরণের পারে’ বইতে একটা কথা লিখে গিয়েছিলেন। লিখেছিলেন, স্বর্গ বা নরক বলে আদতে না কি কিছু হয় না।
বক্তব্যের স্বপক্ষে রীতিমতো যুক্তিও ছিল স্বামীজির কাছে। তাঁর মতে, মানুষের কোনও কিছুর প্রতি অতিরিক্ত টানই তার সকল সমস্যার মূল! এমনকী, মৃত্যুর পরেও সেই বৈষয়িক টান-ই স্বর্গ বা নরকের সংজ্ঞাটি প্রস্তুত করে দেয়।
ধরে নেওয়া যাক, কেউ জীবদ্দশায় মদ্যপান করতে অত্যন্ত পছন্দ করতেন। মৃত্যুর পরে তাঁর আত্মা যদি মুক্তি না পায় এবং মদ্যপানের জন্য ছটফট করতে থাকে, তবে সেটাই তখন তার নরক! আর যদি সেই টান মৃত্যুর পরে না থাকে? তবে সেই অবস্থাকে বলা যায় স্বর্গসুখের সমান!
স্বামী অভেদানন্দের এই ব্যাখ্যা ধরে এগোতে গেলে বলতেই হয়, লুধিয়ানা স্টেশনের এক প্রান্ত পরিণত হয়েছে নরকে! যা এক প্রয়াত প্রাক্তন রেলকর্মীর পক্ষে তো নরক বটেই! এমনকী, জীবিত যাঁরা, তাঁদের কাছেও নরকের মতোই ভয়াবহ!
এমনিতে অবশ্য লুধিয়ানা স্টেশন নিয়ে বড় একটা ভয়ের গল্প শোনা যায় না। দিনের বেলা, রাতের বেলা সব সময়েই যাত্রী-সমাগমে জমজমাট এই জংশন স্টেশন।
কেন না, লুধিয়ানা স্টেশনের যে জায়গাটি ভয়ের এবং মৃত্যুর সমার্থক, তা যাত্রীদের বড় একটা ভাবায় না! ওই জায়গাটা তাঁদের এক্তিয়ারেও নেই!
রয়েছে রেলকর্মীদের। তাঁরাই দিনের পর দিন ভয় আর মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে লড়তে অবশেষে পরিত্যাগ করেছেন স্টেশনের ওই অংশে কাজ করা!
শোনা যায়, লুধিয়ানা স্টেশনে এক সময়ে কাজ করতেন সুভাষ নামে এক ব্যক্তি। তিনি ছিলেন লুধিয়ানা স্টেশনের কম্পিউটার রিজার্ভেশন সিস্টেম অফিসার। তাঁর অফিস ছিল স্টেশনের এক প্রান্তে রিজার্ভেশন সেন্টারের পাশেই! সেই ঘরেই কাজপাগল এই মানুষটি ২০০৪ সালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
সেই শুরু! তার পরেই এক লহমায় বদলে যায় লুধিয়ানার রেলকর্মীদের শান্ত জীবন।
কাহিনি বলে, এর পরে ওই ঘরে আর কোনও রেলকর্মী কাজ করতে পারতেন না! ঘরে পা দিলেই তাঁদের মনে হত, কেউ হিমশীতল চোখে লক্ষ্য করে চলেছে তাঁদের প্রতিটি কার্যকলাপ!
এই ব্যাপারটা তাও অগ্রাহ্য করা যায়! যদি না কোনও ক্ষতির আশঙ্কা থাকে!
কিন্তু, যত দিন যেতে থাকল, ব্যাপারটা গড়াতে থাকল ক্ষতির খাতেই।
কোনও রেলকর্মী সুভাষের ওই জায়গায় বেশি দিন কাজ করতে পারতেন না। এমনকী, বসতেও পারতেন না সেই চেয়ারে, যেখানে একদিন বসে কাজ করতেন সুভাষ! যিনি-ই ওই চেয়ারে বসতেন, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়তেন!
এখানেই শেষ নয়! শোনা যায়, মাঝে মাঝেই সুভাষ না কি সব কাজ ঘেঁটে দেন। কমপিউটারে কাজ শেষ করে একটু চোখে-মুখে জল দিয়ে এসে অনেক রেলকর্মীই দেখেছেন, সব কাজ ঘেঁটে রয়েছে!
এছাড়া, ঘাড়ে নিশ্বাস পড়া, কানের কাছে ফিসফিস করে হঠাৎ শুনতে পাওয়া কারও কণ্ঠস্বর- এ সব তো রয়েছেই!
সহকর্মীরা অবশ্য বিরক্ত হননি! ভয়ও খুব একটা পাননি। তাঁরা জানতেন, সুভাষ কতটা কাজপাগল ছিলেন। তাই নিজেদের মতো করে তাঁরা এই সমস্যা থেকে মুক্তির একটা চেষ্টা করেন। পিণ্ড দান করেন সুভাষের নামে। আর, পুরোহিত ডেকে স্বস্ত্যয়ন করান ওই ঘরের!
কিন্তু, আখেরে লাভ হয়নি! সুভাষ ওই ঘর ছেড়ে কোথাও যাননি।
এর পর বাকি ছিল একটাই পথ- ঘরটা তালাবন্ধ করে রাখা! ওই ঘরে কাজ না করা!
সেই রাস্তাটাই বেছে নিয়েছেন লুধিয়ানার রেলকর্মীরা। তাঁরা কেউ ওই ঘরে আর যান না। এমনকী, পারতপক্ষে দরজার সামনে দাঁড়ানও না!
বলা তো যায় না, যদি সুভাষ অসন্তুষ্ট হন!