সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘মেডে, নো থ্রাস্ট, লুজিং পাওয়ার, আনেবল টু লিফট’ অর্থাৎ ‘ইঞ্জিনে জোর নেই, পাওয়ার চলে যাচ্ছে, উপরে তুলতে পারছি না, মেডে।’ আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে ওড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এটিসিতে পাঠানো বিপদসংকেতে এমনটাই বলেছিলেন এয়ার ইন্ডিয়ার অভিশপ্ত বিমানের পাইলট সুমিত সভরওয়াল। ওই বিপদবার্তাতেই সম্ভবত লুকিয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের দুর্ঘটনার রহস্য।
বিমান দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও বিপর্যয়ের কারণ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশাই রয়ে গিয়েছে। অসামরিক বিমান চলাচল নিয়ামক সংস্থা ডিজিসিএ জানিয়ে দিয়েছে যে বিমানের ইঞ্জিনে পাখির ধাক্কাতেই ‘দুর্ঘটনা’। কিন্তু, বাস্তব পরিস্থিতি সেই দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেই বিশেষজ্ঞদের মত। তাঁদের অনেকেই বিমানের রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা, দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন বিভাগের কর্তব্যে অবহেলা এবং প্রশাসনিক ত্রুটির দিকে গুরুত্বের সঙ্গে নজর দেওয়ার কথা বলছেন। ধংস বিমানের ব্ল্যাকবক্স ঘটনাস্থল, মেঘানিনগরে চিকিৎসকদের হস্টেলের ছাদ থেকে উদ্ধার হয়েছে। সেটি এখন এনএসজি-র প্রহরায় রাখা হয়েছে। ব্ল্যাকবক্সের তথ্য বিশ্লেষণ করে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণের আভাস মিলবে। কিন্তু, শুধু স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত নয়, ওই বিপর্যয়ে দায়ীদের বিচার ও জবাবদিহির দাবি উঠেছে দেশজুড়ে। সবার একটাই মত, বারবার ‘দোষী’দের আড়াল করতে করতে বিমান ও রেল পরিবহণে সুরক্ষা বলে আর কিছু নেই।
দুর্ঘটনার ঠিক আগের মুহূর্তে ফ্লাইট এআই-১৭১-এর পাইলটের শেষ কথাগুলি এখন তদন্তের কেন্দ্রবিন্দুতে। রানওয়ে থেকে টেক-অফের পরমুহূর্তেই পাইলট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে (এটিসি) ‘মেডে’ বার্তা পাঠান। মেনটেন্যান্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং টিম, বিমানটিতে যদি আগে থেকেই ফ্ল্যাপ, থ্রাস্ট কন্ট্রোল বা এলিভেটরে সমস্যা থেকে থাকে, তা হলে কেন সেটা ওড়ার আগে মেরামত করা হল না? এর পরেও ‘এয়ারক্রাফ্ট ফিট ফর ফ্লাই’ সার্টিফিকেটে কে সই করেছিলন? কোনও চেকলিস্ট কি ইচ্ছাকৃতভাবে স্কিপ করা হয়েছিল? বলা হচ্ছে, প্রথম দায় তাদেরই যারা বিমানটিকে ওড়ার ছাড়পত্র দিয়েছিল। এয়ার ইন্ডিয়া অপারেশনস ও ম্যানেজমেন্ট প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। মাত্র ২ ঘণ্টার ব্যবধানে দিল্লি-আহমেদাবাদ-লন্ডন রুট চালানো কি যুক্তিযুক্ত ছিল? দুর্ঘটনার পর থেকেই এই গুরুতর প্রশ্নটি উঠতে শুরু করেছে। এখনও পর্যন্ত অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, ডিজিসিএ কিংবা এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে কোনও জবাব দেওয়া হয়নি। তবে ওই বিমানের গত সাতদিনের মেনটেন্যান্স চেকলিস্ট চেয়েছে ডিজিসিএ। এর থেকে মনে হচ্ছে, তদন্তকারীরা এই সম্ভাব্য গলদ নিয়েও তদন্ত করে দেখতে চাইছে।
দ্বিতীয়ত, এই সময়ের মধ্যে কি বিমানের পূর্ণাঙ্গ সেফটি ও ফুয়েল চেক সম্ভব? যদি দ্রুত বিমানটি ছাড়ার চাপ থেকে ভুল হয়ে থাকে, তা হলে ম্যানেজমেন্ট দায় এড়াতে পারে না। জ্বালানি সরবরাহকারী সংস্থা ও গ্রাউন্ড স্টাফদের ভূমিকা কী ছিল? বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘নো থ্রাস্ট’-এর কারণ হতে পারে জ্বালানির প্রবাহে বাধা। কন্টামিনেটেড ফুয়েল, ক্লগড ফিলটার্স অথবা ফুয়েল প্রেশার রেগুলেটর ফেলিওর-সবই দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসাবে উঠে আসছে। জ্বালানি পরীক্ষায় কোনও গাফিলতি ছিল কিনা, তাও খতিয়ে দেখা জরুরি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.