Advertisement
Advertisement

Breaking News

নাগরিকপঞ্জির সিংহভাগ জুড়ে সীমান্ত লাগোয়া বাসিন্দারা, তালিকায় নেই ভূমিপুত্ররাই

নাগরিকপঞ্জির শংসাপত্র চেয়ে হেনস্তার অভিযোগ শিলং রোডে।

Meghalaya closes border, asks Assam people to show NRC doc
Published by: Shammi Ara Huda
  • Posted:August 5, 2018 12:52 pm
  • Updated:August 5, 2018 12:52 pm

মণিশংকর চৌধুরি, শিলচর: ভুলে ভরা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে অসন্তোষের শেষ নেই। দিন যত এগোচ্ছে ততই নিত্য নতুন সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে অসমে। পরিসংখ্যান বলছে নাগরিকপঞ্জিতে অসমের ভূমিপূত্রদের নামই বেশি কাটা গিয়েছে। তুলনায় নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি নাগরিকরা। এটা যে শুধু ফাঁকা অভিযোগ তা কিন্তু নয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রীতিমতো প্রমাণও রয়েছে। প্রথমেই আসা যাক অসম-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার কথায়। বাংলাদেশ থেকে কাঁটাতার পেরিয়ে চলে আসা অনুপ্রবেশকারীদের বেশিরভাগই সীমান্ত এলাকায় আস্তানা তৈরি করে। কিন্তু গত সোমবার জাতীয় নাগরিকপঞ্জির তালিকা প্রকাশ হলে দেখা যায় সীমান্ত লাগোয়া এলাকাবাসীর অধিকাংশেরই নাম রয়েছে। কিন্তু বোড়োল্যান্ডের বাসিন্দারা এনআরসি-র আওতায় আসেননি। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যের ভিন্ন প্রান্তে ক্ষোভ ছড়িয়েছে।

[নিজভূমে পরবাসী, ২১ দিন শিলচরের ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক যুবক]

পরিসংখ্যান বলছে, অসম-বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চল মরিগাঁওয়ের মাত্র ১৪.৯৬ শতাংশ বাসিন্দার নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে। নলবাড়ির বাসিন্দাদের মধ্যে এনআরসি-তে নেই মাত্র পাঁচ শতাংশের নাম। একইভাবে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী অধ্যুষিত ধুবড়ির ৮.৩ শতাংশ বাসিন্দা এনআরসি-র আওতায় আসেননি। উলটো ছবিটা আরও ভয়াবহ। আপার অসম, অর্থাৎ ভূমিপুত্ররাই যেখানকার বাসিন্দা। সেই তিনসুকিয়া জেলার ১৩.৪ শতাংশ বাসিন্দার নাম কাটা গিয়েছে এনআরসি-তে। একইভাবে কার্বিআংলং জেলার ১৪.৩৩ শতাংশ বাসিন্দারও আজ এনআরসি-র কোপে পরিচয় হারিয়েছেন। শিবসাগরে ৯.৯ শতাংশ মানুষের নাম নেই নাগরিকপঞ্জিতে। পরিসংখ্যান যত বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ক্ষোভের মাত্রা। হতাশায় অনেকেই বাকরুদ্ধ। কোন রাজনৈতিক নেতা কি বললেন, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই ভূমিপুত্রদের। একটাই কথা, সরকারি নিয়মের জালে চোদ্দপুরুষের ভিটেতেই আজ তাঁরা পরবাসী। হয়তো রাজনীতির চাপে মানবিক খাতিরে ভুল শোধরাতে ফের নাগরিকপঞ্জির রদবদল হবে। পরিমার্জন, সংশোধন, পরিবর্ধন হবে। তাতে কিছু ভূমিপুত্র ফিরে পাবেন নাগরিক পরিচয়। কিন্তু এই মানসিক অশান্তি, সম্মানহানি, বিদেশি বলে দেগে দেওয়া। রাস্তায় বেরলেই এনআরসি-তে আওতাভুক্ত কি না তা জানতে চেয়ে হেনস্তা। এর মূল্য কী ফিরে পাওয়া যাবে। সরকার মানসিক ক্ষতি পূরণ করে দিতে পারবে? প্রশ্ন সেখানেই।

Advertisement

[জমা পড়েনি আবেনপত্র, নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর নাম]

এদিকে এনআরসি-র শংসাপত্র দেখাতে না পেরে ইতিমধ্যেই হেনস্তার মুখে পড়েছেন অসমবাসী। সব থেকে ভয়াবহ পরিস্থিতি শিলং রোডে। অসম থেকে মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, অরুণাচলে যেতে হলে এই রাস্তাকেই ব্যবহার করা হয়। ব্যবসায়িক কাজে ও অন্যান্য প্রয়োজনে এখন এই রাস্তাই হয়ে উঠেছে বিভীষিকা। নাগরিকপঞ্জির প্রকাশের পরেপরেই অসম থেকে মেঘালয় যাওয়ার সীমান্ত সিল করে দেওয়া হয়েছে। মেঘালয় প্রশাসনের তরফে সীমান্ত এলাকায় কড়া নজরদারি চলছে। তবে যত না নজরদারি তার থেকে বেশি হেনস্তা করা হচ্ছে। এমনটাই দাবি অসমের বাসিন্দাদের। অভিযোগ, মেঘালয় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় খাসি ছাত্র সংগঠনের সদস্যরাও রাস্তায় নেমে পড়েছে। পণ্যবাহী গাড়ি আটকে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। চালকের কাছে পরিচয়পত্র হিসেবে এনআরসি-র শংসাপত্র চাওয়া হচ্ছে। মজার বিষয় হল, গত সোমবার নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ হয়েছে অসমে। ফের সেই তালিকা সংশোধন করা হবে। তারপর হয়তো শংসাপত্র দেওয়া হলেও হতে পারে। কিন্তু এসবের অনেক আগেই নাগরিকপঞ্জির শংসাপত্র চেয়ে অসমের বাসিন্দাদের বিব্রত করছে পুলিশ ও ছাত্র সংগঠন। যৌথভাবে পুলিশ ও ছাত্র সংগঠন যেটা চালাচ্ছে তা বেআইনি বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অসন্তোষ ও হেনস্তার খবর পৌঁছেছে অসম সরকারের কাছে। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে মেঘালয়ের মুখমন্ত্রী কনরাড সাংমার সঙ্গে কথা বলেছেন। এই টেলিফোনিক বার্তালাপের পরেই মেঘালয়ে অসমবাসীরা যাতে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারেন তার আশ্বাস দিয়েছেন সাংমা। পালটা প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, আইন-বহির্ভূত কোনও কাজ করতে দেওয়া হবে না। শুধু মেঘালয় নয়, একই সারিতে রয়েছে নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল। এহেন পরিস্থিতিতে সব থেকে বিপাকে পড়েছেন বরাকের বাঙালিরা। শিলং রোডে গাড়ি নিয়ে যেতে গেলেই চরম হেনস্তার মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে ক্ষোভ।

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ