Advertisement
Advertisement
Nano

গুজরাটের ন্যানো কারখানায় এখন শুধুই স্তব্ধতা, ফিরে গিয়েছেন বাঙালি কর্মীরা

কয়েক বছরের মধ্যেই চুপিসারে বন্ধ হয়েছে গাড়ির উৎপাদন।

Migrant workers from Bengal moved as Nano factory in Gujarat downs shutter। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:November 26, 2022 9:11 am
  • Updated:November 26, 2022 9:11 am

বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, সানন্দ: বাংলার সিঙ্গুর। গুজরাটের (Gujarat) সানন্দ। টাটাদের ন্যানো (Nano) গাড়ির কারখানা। আর বাঙালি শ্রমিক। কয়েক বছরের মধ্যেই সব ইতিহাস। মোদি-গড়ের সানন্দের ন্যানো কারখানায় এখন শুধুই স্তব্ধতা। চুপিসারে বন্ধ হয়েছে গাড়ির উৎপাদন। আবার তেমনই নিঃশব্দে বাংলার শ্রমিকদের কাউকে পাঠানো হয়েছে পুণে, তো কেউ আবার স্থানান্তরিত ঝাড়খণ্ডের টাটানগরে। তবে বহু স্বপ্ন বুকে বেঁধে ১২ বছর আগে যে ক’জন সানন্দে পাড়ি দিয়েছিলেন তাঁদের অধিকাংশ কয়েকবছরের মধ্যেই ঘরে ফিরেছেন অন্য রোজগারের সন্ধানে।

তাই বাংলা থেকে কেউ এসেছে কারখানার ভিতর– খবর গেলেই অতিরিক্ত সতর্ক কর্তৃপক্ষ। প্রবেশ ঠেকাতে তৈরি করা হয় নিয়মের বেড়াজাল। তবে মোদির রাজ্যের এই শিল্পতালুকে কান পাতলেই ভেসে আসে শোষণের নানা গল্প। কার্যত শ্রমিক শোষণের স্বর্গরাজ্য শিল্পতালুক। কেবল পেটের দায়ে পড়ে থাকা। স্বীকার করেন বাংলা থেকে কাজের খেঁাজে গুজরাতে যাওয়া শ্রমিকরাই। গুজরাটে ২৭ বছর ক্ষমতায় থাকা বিজেপি সারা ভারতে গুজরাট মডেল প্রয়োগে সচেষ্ট। আর তাই সে রাজ্যে ভোটে শিল্পতালুক সানন্দের প্রসঙ্গ উঠে আসা অনিবার্য। তাছাড়া, এক যুগ আগে বাংলার শিল্প-আলোচনায় জুড়ে গিয়েছিল সানন্দের নাম।

Advertisement

[আরও পড়ুন: নেপালে হিন্দু রাষ্ট্র ফেরাতে রাজতন্ত্রীদের হাতে হাত কমিউনিস্ট ওলির!]

সিঙ্গুর অধ্যায় গোটা ভারতবাসীর মনে দাগ কেটে যাওয়া সময়সরণি। দেশ উত্তাল করা এক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। এক রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণ। বাংলায় রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের উজ্জ্বল সাক্ষী হুগলির সিঙ্গুর। জমি অধিগ্রহণ। অনিচ্ছুক চাষিদের সঙ্গে কঁাধে কঁাধ মিলিয়ে বাংলার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ‌্যায়ের (Mamata Banerjee) রাজনৈতিক সংগ্রাম। শেষ পর্যন্ত ঐতিহাসিক জয়। রাজনৈতিক ও আইনি। সবই স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে ইতিহাসের পাতায়।

Advertisement

পরাজয় স্বীকার করে রাতারাতি সিঙ্গুর থেকে একলাখি গাড়ির কারখানা স্থানান্তরিত হয় গুজরাটের সানন্দে। বাংলা থেকে বেকার যুবক সুমন্ত সরকার, জয়দেব মণ্ডল, রজত মণ্ডলদের প্রশিক্ষণ শেষে নিয়ে আসা হয় সানন্দে। আনন্দেই কাটছিল দিনগুলো। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর অনেকেই সংসার পেতেছিলেন আমেদাবাদ থেকে সানন্দের শিল্পতালুকে যাওয়া ১৭ নম্বর রাজ্য সড়কের দু’পাশে। কর্তৃপক্ষের বাসে চেপে সাইরেন বাজার আগেই কারখানার গেটে হাজির হতেন প্রশিক্ষিত বাংলার যুবকরা। বছর চারেক কাটতে না কাটতেই সেই স্বপ্ন একটু একটু করে ভাঙতে শুরু করে। সাইরেনের শব্দ ক্রমশই ক্ষীণ হচ্ছে, বুঝতে সময় লাগেনি জয়দেব ও রজতদের। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় ন্যানো গাড়ির উৎপাদন। শুরু হয় টিয়াগো গাড়ির উৎপাদন। রাতারাতি ‘অদক্ষ’ শ্রমিক হয়ে যান তঁারা। একে একে কাজ ছেড়ে বাড়ি ফিরতে থাকেন।

[আরও পড়ুন: রাজনৈতিক ব্যর্থতার জন্যই বাংলাদেশ যুদ্ধে হার, বিস্ফোরক পাক সেনাপ্রধান বাজওয়া]

যে গুটিকয়েক যুবক দঁাত কামড়ে পড়ে ছিলেন তঁারও আজ উধাও। কারখানার গেটে দঁাড়িয়ে পূর্ণিয়া থেকে সানন্দে পাড়ি দেওয়া নবীন কুমার জানান, এখন আর এই কারখানায় বাংলার লোক খঁুজে পাওয়া যায় না। সিংহভাগই গুজরাটি। আর কিছু আছে প্রতিবেশী রাজ্য রাজস্থান, হরিয়ানা, দিল্লির শ্রমিক। ন্যানো কারখানার গেটে দঁাড়িয়েই ফোনে কথা বলার চেষ্টা হয় রজত ও জয়দেবদের সঙ্গে। কিন্তু এখনও যেহেতু ভিনরাজে্য একই সংস্থায় কর্মরত রয়েছেন তাই ন্যানো নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে তঁাদের কাছে ন্যানো তৈরির স্বপ্ন এখন ইতিহাস।

এখানেই গুজরাটের শিল্পায়নের শেষ নয়। শ্রমিক শোষণের যে স্বর্গরাজ্য তা প্রকাশ্যেই স্বীকার করলেন মালদহের গাজোল, মুর্শিদাবাদের ভরতপুর ও উত্তর দিনাজপুর থেকে আসা হবিবুর, জামিরুদ্দিন বা জয়ন্তরা। রাজ্য সড়কের পাশে চায়ের দোকানে দঁাড়িয়ে শোনালেন জীবনযন্ত্রণার গল্প। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর মাস শেষে হাতে আসে ৮ হাজার টাকা। অতিরিক্ত সময় কাজ করলে কোনও মাসে হয় ১০ হাজার। খরচ চালাতে গিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা হয়। বাড়িতে মা, বাবা, ভাই, বোনরা থাকলেও রোজগারের অংশ পাঠানো হয়ে ওঠে না। তঁাদের কথার প্রতিধ্বনি সিটু নেতা অশোক পালমারের গলাতেও। তিনি জানান, এটাই গোটা দেশে মোদি মডেল। মোদির শিল্পায়ন। মালিকের মুনাফাই একমাত্র লক্ষ্য মোদির-শাহদের বলে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ