Advertisement
Advertisement
মিজো

ব্রুদের দাবি মেনে বিপাকে কমিশন, ভোটের আগে সন্ত্রাসের আবহ মিজোরামে

বোড়ো শরণার্থী শিবিরে জঙ্গিদের আনাগোণা! আতঙ্কে পূর্ব ত্রিপুরার বাসিন্দারাও।

Mizoram civil society threatens LS poll boycott over refugee vote
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:April 2, 2019 5:50 pm
  • Updated:April 17, 2019 1:30 pm

মণিশংকর চৌধুরি, আগরতলা: লোকসভা ভোট আদৌ শান্তিপূর্ণ হবে তো? আপাতত এই আশঙ্কাতেই দিন গুনছেন পূর্ব ত্রিপুরা এবং মিজোরামের বাসিন্দারা। ব্রু শরণার্থীদের দাবি মানতে গিয়ে রীতিমতো উভয় সংকটে পড়ে গিয়েছে কমিশন। একদিকে, মিজোরামের মিজোপন্থীদের হুঁশিয়ারি। অন্যদিকে, পূর্ব ত্রিপুরার বাসিন্দাদের সন্ত্রাস-ভীতি। দুইয়ের মাঝে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা মিজোরামের একমাত্র আসন, এবং ত্রিপুরা পূর্ব লোকসভা আসনের ভোট ঘিরে।

[আরও পড়ুন: আলাদা কৃষক বাজেট থেকে অ্যাকাউন্টে ৭২ হাজার, ইস্তাহারে কল্পতরু কংগ্রেস]

ব্যাপারটা একটু পরিষ্কার করে বলতে হলে চলে যেতে হবে ১৯৯৭ সালে। মিজোরাম তখন অগ্নিগর্ভ। ব্রু জনগোষ্ঠী এবং মিজো জনগোষ্ঠীর সংঘর্ষে রীতিমতো উত্তপ্ত পরিস্থিতি। কয়েকশো মানুষের মৃত্যু হয়েছে সেই সংঘর্ষে। সেসময় মিজোরাম ছেড়ে সীমান্তবর্তী ত্রিপুরার কাঞ্চনপুর এলাকায় চলে আসেন প্রায় হাজার চল্লিশেক ব্রু উপজাতির মানুষ। এখনও প্রায় ৩০ হাজার ব্রু শরণার্থী রয়ে গিয়েছেন কাঞ্চনপুরে। তাঁদের জন্য ৬টি শরণার্থী শিবিরও তৈরি করেছে প্রশাসন।

Advertisement

ত্রিপুরার নিরাপদ আশ্রয়ে থাকলেও ভোটের সময় সমস্যায় পড়ে ব্রু শরণার্থীরা। আসলে, হাজার হাজার মানুষকে ভোট দিতে যেতে হয় মিজোরামেই। খুব, স্বাভাবিকভাবেই মিজো অধ্যুষিত এলাকায় ভোট দিতে যাওয়ার সময় নিরাপত্তার অভাবে ভোগেন তাঁরা। ব্রু জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের দাবি, শরণার্থী শিবিরেই আলাদা ভোটকেন্দ্র তৈরি করে দিতে হবে। এর আগে একাধিকবার লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটের আগে এই দাবি জনিয়েছেন ব্রু শরণার্থীরা। এবারেও এমবিডিপিএফ (মিজোরাম ব্রু ডিসপ্লেসড পিপলস ফোরাম) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে শরণার্থী শিবিরের মধ্যেই পোলিং বুথ তৈরির দাবি জানিয়েছিল। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ব্রুনো মিসা নিজেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে চিঠি লিখে একথা জানিয়েছেন। এতদিন দাবি পূরণ না হলেও দু’দশকেরও বেশি সময় পরে এবারে দাবি মেনেছে নির্বাচন কমিশন। মিজো সীমান্তের কানাহমুন গ্রামে শরণার্থীদের জন্য ১৫টি পোলিং বুথ তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই ভোট দিতে পারবেন ১২ হাজার ৬০০ ব্রু শরণার্থী। 

Advertisement

[আরও পড়ুন: দ্রুত শুনানির আরজি খারিজ, সুপ্রিম কোর্টেও ধাক্কা খেলেন হার্দিক প্যাটেল]

মূল সমস্যার সূত্রপাত এখান থেকেই, মিজো পন্থী একাধিক সংগঠন নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছে না। তাদের দাবি, ব্রুরা যেহেতু মিজোরামের বাসিন্দা, তাই তাদের মিজোরামে গিয়েই ভোট দিতে হবে। কমিশন যদি, তাদের আলাদা পোলিং বুথে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে, তাহলে প্রতিবাদ করবেন তাঁরা। প্রাথমিক হুঁশিয়ারিতে কাজ হয়নি। কমিশন মিজো সীমান্তে পোলিং বুথ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। এবার রীতিমতো হুমকি দিল মিজোরামের কয়েকটি নাগরিক সমাজ এবং ছাত্র সংঘটনের ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ। তাঁরা জানিয়ে দিয়েছে, যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ব্রু শরণার্থীদের জন্য আলাদা পোলিং বুথ তৈরির সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তাহলে আগামী ৮ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য মিজোরামে ধর্মঘট পালন করা হবে। 

এমনকী, ভোটের জন্য কমিশনের পাঠানো কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গেও অসহযোগিতা করার নিদান দেওয়া হয়েছে মিজোরামের বাসিন্দাদের। রাজ্যের পরিবহণ সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর যাতায়াতের জন্য যাতে কোনও গাড়ি সরবরাহ না করা হয়। নাগরিক সমাজ এবং ছাত্র সংঘটনের ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ এমজিওসিসির সচিব লালহমাচুয়ানা একপ্রকার হুমকি দিয়ে রেখেছেন। তিনি বলছেন, “আমাদের দাবি না মেনে যেভাবে গ্রামে পোলিং বুথ তৈরি হয়েছে, আমরা তাঁর তীব্র প্রতিবাদ করছি। এটা চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এবং তার দায় আমরা নেব না।” ফলত, কমিশন যদি সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তাহলে ভোটে হিংসা যে হবে-তা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নির্বাচন কমিশন যদি ব্রুদের দাবি মেনে আলাদা পোলিং বুথ তৈরির সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেয়। তাহলে, আগামী দিনে ঐক্যবদ্ধভাবে পৃথক রাজ্যের দাবি আরও জোরালো করতে পারে ব্রুরা । যা মিজোরামের সংহতির জন্য খারাপ খবর। এভাবেই যদি ব্রু শরণার্থীদের মিজোরামের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় তাহলে, নাগালিমের (বৃহত্তর নাগা রাজ্য) আদলে বৃহত্তর ‘ব্রুল্যান্ড’ দাবি করতে পারে তারা। এনএসসিএন জঙ্গি গোষ্ঠী উত্তরপূর্বের নাগা অধ্যুষিত এলাকাগুলিকে একত্রিত করে বৃহত্তর নাগা রাজ্য তৈরির দাবি জানিয়ে আসছে। মিজো গোষ্ঠীগুলির আশঙ্কা, ব্রুরাও আগামী দিনে সেই পথেই হাঁটবে। 

[আরও পড়ুন:  ওমরের ‘স্বাধীন কাশ্মীর’-এর মন্তব্যকে তীব্র কটাক্ষ নেতা গম্ভীরের]

এ তো গেল মিজোরামের কথা। সমস্যা রয়েছে ত্রিপুরাতেও। পূর্ব ত্রিপুরার বাসিন্দারা এমনিতেই আশঙ্কায় মিজো সীমান্তে অশান্তি হলে তার আঁচ ত্রিপুরাতেও আসবে। পাশাপাশি, যে ব্রু শরণার্থীরা কাঞ্চনপুরে রয়েছে তাদের সঙ্গে অসমের পার্বত্য় জেলা ডিমা হাসাউয়ের একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। তাছাড়া ত্রিপুরার দুই উপজাতিপন্থী দল আইপিএফটি এবং এনপিটির সঙ্গেও খুব একটা সদ্ভাব নেই এই ব্রু শরণার্থীদের। তাই ভোটের আবহে ব্রু সন্ত্রাসবাদীদের মদতে এরা ত্রিপুরাতেও অশান্তি করতে পারে বলে আশঙ্কা কাঞ্চনপুর এবং সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের। সব মিলিয়ে যা পরিস্থিতি, ভোটের দশদিন আগেও পূর্ব ত্রিপুরা এবং মিজোরামের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দারা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না, আদৌ তাঁরা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারবেন কি না।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ