সুব্রত বিশ্বাস: ‘সারা জনমে কত জনেরে কত কী দিলাম/ যাইবার সময় কারুর দেখা না পাইলাম…’ – পরিস্থিতি এমনই। তা সে মৃত্যুতে হোক বা চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার মতো ঘটনা। যাই হোক, অফিসে কাছের মানুষগুলোর সঙ্গে শেষবেলায় দেখা করার সুযোগ, হাত ধরে বিদায় নেওয়ার প্রচলিত রীতিগুলোও হারিয়ে গিয়েছে করোনা আতঙ্কে।
দীর্ঘ কর্মজীবনে নানা ওঠাপড়ার সঙ্গী সহকর্মীদের সঙ্গে আর দেখা হল না। রেলের চাকরি থেকে শনিবার নিঃশব্দে বিদায় নিলেন ২৩২০ জন কর্মী। যার মধ্যে পূর্ব রেলের (Eastern Railway) অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর সংখ্যা ২৯৫ ও দক্ষিণ পূর্বের ৮৭ জন। অবসারপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন আধিকারিক। রয়েছেন ক্লার্ক থেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। এছাড়া প্রায় সব বিভাগের কর্মীই রয়েছেন এই তালিকায়। দক্ষিণ পূর্ব রেলের এক সিনিয়র পারসোনাল অফিসার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে যাঁদের ষাট বছর পূর্ণ হয়েছে, এমন ৮৭ জনকে শনিবার অবসর দেওয়া হয়েছে স্রেফ ভারচুয়ালি।
এই প্রথম রেল কর্মীদের এভাবে ভারচুয়াল (Virtual) মাধ্যমে বিদায় জানানো হল। শনিবার রেলমন্ত্রী ও রেলবোর্ড কর্তাদের সঙ্গে জোনের আধিকারিকরা ভারচুয়াল আলোচনার মাধ্যমে এই ধরনের বিদায়পর্বের আয়োজন করেন। কাগজ-কলমে দেনাপাওনা মেটানোর মতো ঘটনা থাকলেও বিদায়কালীন সংবর্ধনা পেলেন না অবসর নেওয়া কর্মীরা।
পূর্ব রেল থেকে বিদায় (Retired) নেওয়া দুই করণিকের কথায়, ”চৌত্রিশ বছর সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করেছি। অনেকের বিয়ে থেকে সন্তানের অন্নপ্রাশন খেয়েছি। অনেকে অবসর নিয়েছেন। দিয়েছি বিদায় সংবর্ধনা। বৃদ্ধ বয়সের সঙ্গী লাঠি, ছাতা দেওয়াটা অবসরে দেওয়ার রেওয়াজ। আমরা দিয়ে এসেছি। কিন্তু আমরা বিদায়কালে সহকর্মীদের শুভেচ্ছাটুকুও পেলাম না। এমনি মহামারী এল যে বিদায় বেলায় ঘুরে দেখতে পারলাম না চেয়ারটাকে। যেখানে জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে। সেখানে বসেই জুটেছে রোটি-কাপড়া অওর মকান। স্মৃতির সরণি এভাবে ঝাপসা হবে, ভাবিনি।” তবুও সবই মেনে নিতে হচ্ছে। কর্মজীবন ছেড়ে অবসরের পথে হাঁটার কষ্ট একলাই বইতে হল তাঁদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.