নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: বাংলার নির্দোষ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এই কথা বলে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৃহস্পতিবার লোকসভায় রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর ধন্যবাদ জ্ঞাপনের সময় এই ভাষাতেই তৃণমূলকে নিশানা করলেন তিনি। শুধু তাই নয়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যে তিনি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন, এদিন সেই ইঙ্গিতও প্রধানমন্ত্রীর কথাতেই মিলেছে।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের তখন প্রায় আটান্ন মিনিট পার হয়ে গিয়েছে। সংবিধান বাঁচানোর নামে দিল্লিতে কী হচ্ছে তা মানুষ দেখছে বলে সবেমাত্র লাইনটি শেষ করেছেন মোদি। তার মধ্যেই বিরোধীদের তরফে তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় টিপ্পনি কাটলেন, ‘কিন্তু শাহিনবাগে গুলি চালানো ঠিক হবে না।’ এতক্ষণ সংবিধান ও অন্য ইস্যুতে কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
এবার সৌগতর কটাক্ষ শুনেই নিশানা বদলে ফেললেন মোদি। ব্যঙ্গ করে বাংলা নিয়ে পালটা তৃণমূলের দিকে জবাব দিলেন তিনিও। প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘দাদা, পশ্চিমবঙ্গের পীড়িত লোকেরা এখানে বসে রয়েছে। সেখানে কী চলছে তারা যদি সবার সামনে সেই মুখোশ খুলে দেয় তাহলে আপনাদের অসুবিধা হবে। ওখানে কীভাবে নির্দোষ লোকেদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে তা মানুষ ভালভাবেই জানে।’ প্রধানমন্ত্রীর কথায় তীব্র প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন তৃণমূল সাংসদরা। দলের মুখ্যসচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে জোর গলায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তীব্র আপত্তি জানাতে থাকেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের বিতর্কিত ‘গোলি মারো’ মন্তব্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান তিনি।
কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী ততক্ষণে অন্য প্রসঙ্গে বলা শুরু করে দেওয়ায় বাংলার প্রসঙ্গ সেখানেই চাপা পড়ে যায়। পরে সৌগতবাবুর টিপ্পনিকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী আবার কটাক্ষ করে বলেন, ‘দাদা আপনি কি কংগ্রেসে চলে গিয়েছেন? মমতা দিদি ভাষণ শুনছেন কিন্তু।’ প্রধানমন্ত্রীর এদিন রাজ্য নিয়ে মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরেই বিজেপির তরফে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হিংসার অভিযোগ করা হচ্ছে। শাসকদল বিজেপি কর্মীদের খুন করছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।
এদিন লোকসভার অন্দরে দাঁড়িয়ে সেই একই অভিযোগ শোনা গেল প্রধানমন্ত্রীর মুখেও। প্রধানমন্ত্রীর এদিনের মন্তব্য কার্যত রাজ্য বিজেপিকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হিংসার অভিযোগ সামনে তুলে ধরার নির্দেশ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন রাজনৈতিক আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে তাঁকেই রেখেছেন, তেমনি মোদিও একই কাজ করলেন বলেই মনে করা হচ্ছে। এদিন প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে আক্রমণের প্রধান অভিমুখ কংগ্রেসের দিকে থাকলেও তৃণমূলকেও যে তিনি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করছেন, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এবং এই সবকিছুর পিছনে যে বিজেপির বাংলা বিজয়ের পরিকল্পনা কাজ করছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একসময়ে বাংলায় রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে লাগাতার সরব হয়েছে বিজেপি। এখন প্রধানমন্ত্রী নতুন করে সেই বিষয়টি আবার সংসদের অন্দরে দাঁড়িয়ে উল্লেখ করাতে বিজেপির আগামিদিনের রাজনৈতিক রণকৌশলের আঁচ মিলছে বলেই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
বর্তমানে দেশে সবথেকে আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা CAA,NRC ও NPR। এদিন প্রধানমন্ত্রী NRC নিয়ে মুখ না খুললেও CAA নিয়ে লোকসভায় দীর্ঘ বক্তব্য রেখেছেন। অন্যদিকে রাজ্যসভায় মুখ খুলেছেন এনপিআর নিয়ে। সিএএ নিয়ে বিরোধীরা যে বিজেপির দিকে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তুলছে, তার পালটা হিসেবে কংগ্রেসকেই দুষেছেন তিনি। আর মজার ছলে কটাক্ষ করেছেন বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরিকে।
অধীর চৌধুরিকে ফিট ইন্ডিয়ার প্রচারক বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘সংসদে অধীর চৌধুরিকে আমি যখন বলতে দেখি, মনে মনে ক্রীড়ামন্ত্রী কিরণ রিজিজুকে ধন্যবাদ দিই। উনি যে ফিট ইন্ডিয়া প্রকল্প চালু করেছেন, আমাদের সাংসদ অধীর চৌধুরি সেই প্রকল্পের বড় প্রচারক। উনি বক্তব্য রাখার সঙ্গে একটু জিমও করে নেন। কেন্দ্রের ফিট ইন্ডিয়া প্রকল্পের এমন প্রচার এবং প্রসারণের জন্য অধীর চৌধুরিকেও ধন্যবাদ।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.