নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: দেশজুড়ে এনআরসি হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন। সেই বক্তব্যেই অনড় থাকলেন অমিত শাহ। ফের স্পষ্ট ভাষায় বললেন, “আমি ভাল করে সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই যে দেশে এনআরসি তৈরি হবে এবং তা সারা দেশেই হবে।” তবে একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এদিন জানিয়ে দিলেন পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে এনআরসির কোনও সম্পর্ক নেই। বুধবার একটি সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে শাহ বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নাম না করে বলেন, “যে সব দল এনআরসির বিরোধিতা করছে তাদের আমি দেশের জনতার সামনে প্রকাশ্যে জানতে চাইছি, দেশের সব মানুষের জন্য একটা রেজিস্টার থাকা কি জরুরি নয়? না কি ধর্মশালার মতো দেশের চলা উচিত?”
অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জির পর বাংলায় এনআরসি হতে দেবেন না বলে আগেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই ঘোষণার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে প্রসঙ্গে অমিত শাহর বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি এদিন বলেন, “মমতা ব্যানার্জি কী ঠিক বলবেন বা এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেবেন তা আমি ঠিক করতে পারি না।” আগামী বিধানসভা ভোটে এই এনআরসি ইস্যুতে মমতা যে বিজেপিকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করবেন তা অনুমান করেই আগাম এদিন দলের নীতি স্পষ্ট করে দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি।
বাংলাদেশ থেকে দীর্ঘদিন আগে ভারতে আসা শরণার্থীদের এ দেশের নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে সরব হন মমতা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও বলেন, “শ্রীলঙ্কা থেকে যখন তামিলরা এসেছিল, উগান্ডা থেকে যখন উদ্বাস্তুরা এসেছিল তখন তো কেউ প্রতিবাদ করেনি? পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশে নানা হামলা-অশান্তিতে যখন মানুষ নিপীড়িত হয়, তখন তারা আর কোথায় যাবে?” সব ধর্মের মানুষই এনআরসি আওতায় আসবেন তা ফের স্পষ্ট করে অমিত শাহ এদিন বলেন, “এনআরসিতে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই। নাগরিক সংশোধনী বিলে হিন্দুদের মতোই বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি ও খ্রিস্টান শরণার্থীদেরও আমরা নাগরিকত্ব দেব।” যদিও এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী স্পষ্ট করেননি কোন সালে আসা উদ্বাস্তুদের ভারতের বৈধ নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কাদের দেওয়া হবে না। যাঁরা এ দেশে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করা সত্ত্বেও সবক’টি প্রয়োজনীয় নথি দিয়ে নাগরিকত্বের প্রমাণ দেখাতে পারবেন না অসমের এনআরসি তালিকায় নাম না থাকা ব্যক্তিদের মতো তাঁদেরও কোনও ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হবে কি না তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি শাহ।
কয়েক সপ্তাহ আগেও রাজ্যসভায় এনআরসি নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শাহ বলেছিলেন, “সারা দেশে এনআরসি হবে। তবে কোনও ধর্মের মানুষের ভয়ের কারণ নেই। সবাইকে এনআরসির আওতায় আনার জন্য এটা একটা অত্যন্ত সাধারণ পদ্ধতি। অসমেও ফের নতুন এনআরসি হবে।” একইসঙ্গে তিনি এই এনআরসি আর নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এক নয় বলে দাবি করেছেন। অসমে এনআরসি তালিকায় নাম না ওঠা ব্যক্তিদের আতঙ্ক কমানোরও বার্তা দেন অমিত শাহ। এনআরসির খসড়ায় যঁাদের নাম নেই তঁাদের ট্রাইবুনালে গিয়ে আবেদন করার অধিকার দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। অসমের ট্রাইবুনালে আবেদন করার অর্থ না থাকলে সেই ব্যক্তিকে অসম সরকার আইনজীবীর খরচ দিয়ে সাহায্য করা হচ্ছে। এদিন এনআরসি ছাড়াও মহারাষ্ট্র সরকার বিজেপির হাতছাড়া হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গেও মুখ খুলেছেন অমিত শাহ। এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ারের বিধায়কদের সই নিয়ে মহারাষ্ট্রে দেবেন্দ্র ফড়নবিসের সঙ্গে দেখা করা প্রসঙ্গে শাহ বলেন, “অজিত পাওয়ার সেই সময় বিধায়কদের সই এনে বিজেপিকে দেখিয়েছিল। তাই ওদের সাহায্য নিয়েই বিজেপি মহারাষ্ট্রে সরকার গড়ে। এতে অসাংবিধানিক কিছু হয়নি। নির্বাচনের আগে শিবসেনার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী পদের ভাগাভাগি নিয়ে কোনও রফা হয়নি।”
[আরও পড়ুন: টাকা আটকে দিতে পারে মহারাষ্ট্রের নতুন জোট সরকার, সংকটে বুলেট ট্রেন প্রকল্প!]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.