সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সম্ভবত এবারও আলোচনার শিকে ছিঁড়ছে না পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কপালে। কাশ্মীর সমস্যা-সহ যাবতীয় দ্বিপাক্ষিক সমস্যার সমাধান করতে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে মরিয়া ইমরান। নিজের এবং সরকারের ভাবমূর্তি উদ্ধার করতে ভারতের সঙ্গে একটা দরকষাকষির সুযোগ চাইছেন তিনি। কিন্তু মোদি জমানায় প্রথম থেকেই ভারত সরকার পুরনো নীতিতেই অনড়। তা হল, সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না। সীমান্তে রক্ত এবং সিন্ধু নদীর জল একসঙ্গে বইতে পারে না। তাই পাকিস্তান সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গি মদত, নাশকতা, সন্ত্রাস বন্ধ যতক্ষণ না করচে ততক্ষণ ভারত কোনও আলোচনাতেই বসবে না। দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও মোদি সরকার এই নীতিই কঠোরভাবে বজায় রাখল।
[আরও পড়ুন: ‘দূষণ ও পরিচ্ছন্নতার বিন্দুমাত্র বোধ নেই ভারতের’, তোপ ট্রাম্পের]
বৃহস্পতিবার তারই প্রতিফলন ঘটেছিল ভারতের সরকারি ঘোষণায়। খুব কৌশলে মোদি সরকার এদিন একবারও বলেনি যে, “আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসব না।” এতে ভুল বার্তা যেত। তাই ভারতের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে সাফ জানিয়েছেন, ১৩ থেকে ১৪ জুন কাজাখস্তানের রাজধানী বিসকেকে ‘সাংহাই-ফাইভ’ গোষ্ঠীর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুখোমুখি এবং দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কোনও কর্মসূচি নেই। দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকের সম্ভাবনা থাকলে তা আগেই নির্দিষ্টভাবে ঘোষণা করা হত।
এই অবস্থায় চিনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম মিসরি এদিনই স্পষ্ট জানিয়েছেন, সাংহাই-ফাইভ সম্মেলনের ফাঁকে বিসকেক শহরেই একান্তে মুখোমুখি বৈঠকে বসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তাঁদের এই সাক্ষাৎকার ছিল পূর্বনির্ধারিত। তাছাড়া লোকসভা ভোটের আগেই মোদির জয় কামনা করেছিলেন জিনপিং। ভোটের পর মোদিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফের দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন জিনপিং নিজেই। পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং চিন-ভারত সুসম্পর্ক মজবুত করার এই সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ মোদি। তিনিও সাংহাই-ফাইভ সম্মেলনের ফাঁকেই তাই কিছুক্ষণের জন্য দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সেরে ফেলতে চান। কারণ ডোকলাম কাণ্ডের পর লাগাতার কূটনৈতিক আলোচনার জেরে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা এবং ভুল বোঝাবুঝি আর নেই। জিনপিংয়ের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে চিনের ইউহানে তাঁর সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনায় অংশ নিয়েছেন মোদি। ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব এবং ভরসার জায়গা আরও মজবুত করেছেন মোদি। ফের সেই ইতিবাচক পরিবেশ এবং সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না ভারত। চায় না চিনও।
এই পরিস্থিতিকে উসকে দিয়ে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর এদিনই স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার সার্ক গোষ্ঠীতে সমস্যা রয়েছে। তাঁর ইঙ্গিত ছিল পাকিস্তানের দিকেই। অন্যদিকে, বিমস্টেক গোষ্ঠীতে রয়েছে প্রচুর সম্ভাবনা। জয়শংকরের ইঙ্গিত, পাকিস্তানের সন্ত্রাসে মদত এবং কাশ্মীর নিয়ে জেদাজেদির জন্যই সার্ক জোটের দেশগুলির উন্নতি, সহযোগিতা মার খাচ্ছে। সার্ক একটা কাগুজে জোট হয়ে গিয়েছে। পাকিস্তানের ডাকা বৈঠক বয়কট করছে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, ভারত সবাই। পাকিস্তানকে সবাই মনে করছে সন্ত্রাসের মদতদাতা দেশ। অন্যদিকে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি (থাইল্যান্ড, মায়ানমার, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ)-র সংগঠন বিমস্টেকে রয়েছে আর্থিক সমৃদ্ধি, বাণিজ্য বৃদ্ধি, আর্থিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগের পরিবেশ।
[আরও পড়ুন: সভ্যতার অভিশাপ! এভারেস্টে স্বচ্ছতা অভিযানে উদ্ধার ১১ হাজার কেজি জঞ্জাল]