Advertisement
Advertisement
Coromandel Express Accident

Coromandel Express Accident: ‘মরণপুরীতে নবজন্ম’, ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ বাঁচলেও আতঙ্কে কাঁটা যাত্রী

আর্তনাদ, অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেন সব মিলিয়ে মৃত্যুপুরী বালেশ্বর।

Coromandel Express Accident: Passenger of Coromandel Express shares personal experience of train accident । Sangbad Pratidin
Published by: Sayani Sen
  • Posted:June 3, 2023 9:34 am
  • Updated:June 3, 2023 12:25 pm

বালেশ্বরের কাছে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মৃত্যুমিছিল। দুর্ঘটনার বর্ণনায় ওই ট্রেনের যাত্রী গৌতম মুখোপাধ্যায়। 

চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে মৃতদেহ। যেদিকে চোখ যাচ্ছে চাপ চাপ রক্ত। নিকষ আঁধার চিরে আসা হাহাকারে বারবার শিউরে শিউরে উঠছি। উফ! কী ভয়ংকর! চোখের সামনে এমন ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে হবে, সত্যিই কখনও ভাবিনি। এক একবার মনে হচ্ছে, বেঁচে আছি তো! ওই তো রেললাইনের ধারে পরপর ছিটকে পড়ে ট্রেনের পরপর বগি। অদূরের খালে ছিটকে পড়া বগি দু’টি থেকে আর্ত চিৎকার ভেসে আসছে লাগাতার। এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর বেঁচে থাকাটাই যেন বড় আশ্চর্য ঠেকছে। সত্যি বলতে কী, যেন পুনর্জন্ম হল আজ! সস্ত্রীক আমার তো বটেই, সহযাত্রী আরও কয়েকজনেরও।

Advertisement

শালিমার থেকে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে ভুবনেশ্বরের উদ্দেশে যখন যাত্রা শুরু করেছিলাম, এমন অঘটন কল্পনাতেও ছিল না। সন্ধে নাগাদ এ-১ বগিতে তখন আমরা সবাই বেশ রিল্যাক্সড মুডে। কেউ বসে, কেউ বা গা এলিয়ে দিয়েছেন সিটে। আচমকাই বিকট ঝাঁকুনিতে যেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ওলটপালট হয়ে গেল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখলাম, সহযাত্রীরা ঝুলন্ত বার্থ থেকে কেউ আছড়ে পড়লেন, কেউ ছিটকে গেলেন অনেকটা দূরে। যারা বসেছিলাম, তারাও হুমড়ি খেয়ে সজোরে আছড়ে পড়লাম বগির মেঝেতে।

Advertisement

কারও মাথা ফাটল, কাতরানি দেখে বেশ বুঝলাম হাত-পা ভাঙল আরও অনেকেরই। ততক্ষণে বেশ মালুম হয়েছে, দুর্ঘটনায় পড়েছে করমণ্ডল। কামরার একটা দিক বেশ খানিকটা উঁচু হয়ে ছিল, আর একদিক নিচে। তড়িঘড়ি দরজা খুলে বেরোতে গিয়েও পারলাম না। কারণ, বগির পরপর জানালা, দরজার কাচ ভেঙে খুঁটি আর তার তালগোল পাকিয়ে ভিতরে ঢুকে এসেছে যে!

[আরও পড়ুন: ‘উচ্চপর্যায়ের তদন্ত হবে, দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করবেন না’, মৃত্যুমিছিলের মাঝে আরজি রেলমন্ত্রীর]

ভাগ্যিস স্থানীয় বাসিন্দারা তড়িঘড়ি ছুটে এসেছিলেন!  ওরাই কোনওরকমে আমাদের বগি থেকে টেনে টেনে বের করলেন। বাইরে এসে দেখলাম, রেললাইনের ধার বরাবর একের পর এক বিদ্যুৎ লাইনের খুঁটি দুমড়ে-মুচড়ে আছড়ে পড়েছে বগির গায়ে। অত লম্বা করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কোনও বগিই আর লাইনে দঁাড়িয়ে নেই! জানলাম, মালগাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষেই এমন ভয়াবহ অঘটন। কিন্তু কী করে একই লাইনে এসে পড়ল দু’টি গাড়ি! সত্যি বলতে কী, আমরা সকলেই তখন কমবেশি জখম। চোখের সামনে ছড়িয়ে থাকা লাশ আর আহতদের আর্তনাদ যেন আরও বেশি করে অসুস্থ করে তুলছিল আমাদের।

যে দৃশ্য দেখছি, সম্ভবত শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আহত হয়তো কয়েক শতাধিক। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় ক্রমশ ঘটনাস্থল ছেড়ে খানিক এগোলাম। আর্তনাদ, অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেন সব মিলিয়ে এ যেন এক মৃত্যুপুরী! বরাতজোরে প্রাণে বেঁচে ফিরে ঈশ্বরকে বারবার স্মরণ করছিলাম। একই সঙ্গে আকুল প্রার্থনায় বিড়বিড় করেছি বারবার, এমন ভয়াবহ দৃশ্যের সাক্ষী যেন আর কাউকে না হতে হয়, কোনওদিন!

[আরও পড়ুন: করমণ্ডল দুর্ঘটনা LIVE UPDATE: ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যুমিছিল, এখনও পর্যন্ত প্রাণহানি অন্তত ২৩৮ জনের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ