সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সংকটে দীর্ণ পাঞ্জাব অ্যান্ড মহারাষ্ট্র কোঅপারেটিভ (পিএমসি) ব্যাংক। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর আশ্বাস সত্ত্বেও গ্রাহকদের আতঙ্ক কাটছে না। অবস্থা এমনই যে, তার জেরে সোমবার ব্যাংকের এক গ্রাহকের মৃত্যু হয়েছে। পিএমসি ব্যাংকে তিনি ৯০ লক্ষ টাকা জমা রেখেছিলেন। সেই অর্থ ফেরত পাবেন কি না, তা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই উদ্বেগে ছিলেন ৫১ বছরের সঞ্জয় গুলাটি।
[আরও পড়ুন: সাভারকরকে ভারতরত্ন দেওয়ার প্রস্তাব, বিতর্কে মহারাষ্ট্র বিজেপির নির্বাচনী ইস্তেহার]
মুম্বইয়ের একটি আদালতে ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই ওশিয়াড়ায় নিজের বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।
জেট এয়ারওয়েজের ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন সঞ্জয়। সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি কর্মহীন হয়ে পড়েন। তার উপর ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা অর্থের কথা ভেবে তিনি আরও উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাই সোমবার গ্রাহকদের বিক্ষোভে ৮০ বছর বয়সি বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে শামিল হয়েছিলেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আর এক গ্রাহক মানালি নারকরের সঙ্গে তাঁর উদ্বেগের বিষয়ে আলোচনাও করেন। ওশিয়াড়া থানার এক কর্তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, নৈশভোজের টেবিলে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বৃদ্ধ পিতা ছাড়াও তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। যাঁদের মধ্যে এক পুত্র বিশেষভাবে সক্ষম। মঙ্গলবার তাঁর বাড়িতে জড়ো হন সঞ্জয়ের আত্মীয়পরিজন, বন্ধু ও পিএমসি ব্যাংকের বহু আমানতকারী। এক প্রতিবেশী জানান, “আমাদের ক্ষেত্রেও যে কোনও সময় একই পরিণতি হতে পারে। আমার পরিবারের ছ’জনের পিএমসি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে।” আর এক মহিলা গ্রাহকের প্রশ্ন, “সরকার ও রিজার্ভ ব্যাংকের ঘুম কবে ভাঙবে?” তাঁর পরিবারের তিনজনের অ্যাকাউন্ট আছে ওই ব্যাংকে।
[আরও পড়ুন: জিজ্ঞাসাবাদের পরই তিহার জেল থেকে চিদাম্বরমকে গ্রেপ্তার করল ইডি]
আবাসন সংস্থা এইচডিআইএল-এর ৪,৩৫৫ কোটি টাকা ঋণ খেলাপের জেরে আর্থিক সংকটে রাষ্ট্রায়ত্ত পিএমসি ব্যাংক। এবং ভুয়ো অ্যাকাউন্ট দেখিয়ে এই ঋণখেলাপের ঘটনা চেপে রেখেছিলেন ব্যাংকের শীর্ষ কর্তা। তাই গত মাস থেকে রিজার্ভ ব্যাংক এই ব্যাংকের উপর একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। যেমন, গ্রাহকরা ৪০ হাজারের বেশি টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে তুলতে পারবেন না। ২১ অক্টোবর মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন। তার প্রচারে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাসও দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “সাধ্যমতো চেষ্টা করব। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি দেখছি। যাতে গ্রাহকদের টাকা পেতে সমস্যা না হয়, সে জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলছি।” পিএমসি ব্যাংকে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে। গত মাস থেকেই রাজ্যের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন আমানতকারীরা। এমনকী, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের সামনেও তাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। কেলেঙ্কারির জেরে এইচডিআইএল-এর মালিক-সহ চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তাঁদের মধ্যে ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা এমডি-ও রয়েছেন। কেলেঙ্কারির জেরে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থা মানুষের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ঋণখেলাপ, অনুৎপাদক সম্পদের বৃদ্ধি ও নানা কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলির অবস্থা শোচনীয়। যদিও কেন্দ্র এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।