Advertisement
Advertisement

ফেসবুক কাড়ছে ভোটের বিজ্ঞাপন, প্রচারে দলগুলির খরচ ১২ হাজার কোটি টাকা

গতবারের চেয়ে এবার ভোটে প্রায় ১৫০ শতাংশ বেশি টাকা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিনিয়োগ করছে দলগুলি।

Political parties campaign on social media
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:January 24, 2019 9:43 am
  • Updated:January 24, 2019 9:43 am

মৈনাক মণ্ডল: ভোট আসছে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের বৃহত্তম উৎসবের আর বেশি দেরি নেই। লোকসভা ভোট মানে ভারতে বৃহত্তম উৎসব। এই রাজসূয় যজ্ঞে প্রচারের জন্য টাকার থলি হাতে নেমে পড়েছে সবক’টি রাজনৈতিক দল। তবে এই একবিংশ শতকে যতগুলি লোকসভা ভোট হয়েছে তার সঙ্গে এবারের ভোটযুদ্ধে ফারাক গড়ে দিচ্ছে একটি প্রচার মাধ্যম। এতদিন সব লোকসভা ভোটে মানুষের কাছে সহজে পৌঁছনোর রাস্তা ছিল টিভি, রেডিও, খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন, লিফলেট, দেওয়াল লিখন, ব্যানার ফেস্টুন, পোস্টার। পরে এল মোবাইলে মেসেজ করে ‘অমুক প্রার্থীকে অমুক দিন ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন’ ইত্যাদি ধরনের বার্তা। কিন্তু স্মার্টফোনের জমানায় ইন্টারনেটের হাত ধরে গত পাঁচ বছরে অনেকটাই বদলে গিয়েছে সমাজ, দেশ, এমনকী প্রত্যন্ত গ্রামের মানসিকতা।

[রেলের পরীক্ষা ঘিরে উত্তেজনা সল্টলেকে, পরীক্ষার্থীদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ]

Advertisement

আগে ডেটা ছিল সোনা চাঁদির মতোই মূল্যবান। এখন জিও-র সৌজন্যে ডেটা সস্তা। মোবাইল পরিষেবাপ্রদানকারী সংস্থাগুলির মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা। ফলে জলের দরে ডেটা মিলছে। স্পিডও বেশি। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, চায়ের দোকানে রাজা উজির মারার আড্ডা কমেছে অনেকটাই। সিরিয়ালের নেশাযুক্ত টিভির পর্দার চেয়ে মানুষের চোখ এখন বেশি স্মার্টফোনের পর্দায়। কাজের ফাঁক পেলেই দেশের কোটি কোটি মানুষ ঘাড় গুঁজে দিচ্ছেন নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মতোই হু হু করে বাড়ছে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের সংখ্যা। অর্থাৎ ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামে না থাকাটা এখন ব্যাকডেটেড। একজন গরিব শ্রমিকও চাইছেন সস্তায় সেকেন্ড হ্যান্ড স্মার্টফোন কিনতে। আর এই সুযোগটাই লুফে নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। তারা দেখেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চালিয়ে একসঙ্গে লক্ষাধিক মানুষের কাছে নিজেদের বার্তা, পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। টিভি বা কাগজের থেকেও শক্তিশালী এই মাধ্যম। বিভিন্ন পরমার্শদাতা সংস্থাও বলছে, কোনও রাজনৈতিক সভার লাইভ সম্প্রচার যত জন মানুষ দেখছেন, তার চেয়েও বেশি মানুষ, ওই সভার নির্বাচিত ভিডিও ফুটেজ ও ছবি বার বার দেখছেন ইউটিউব ও ফেসবুকে।

Advertisement

মুম্বই ভিত্তিক কমিনিউকেশন এজেন্সি মোগা মিডিয়ার প্রধান সন্দীপ গয়াল, দক্ষিণ এশিয়ার দেঁতসু আজিস নেটওয়ার্কের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার আশিস ভাসিন স্পষ্ট জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের ভোটের সময় রাজনৈতিক দলগুলি যত টাকা সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারে বিনিয়োগ করেছিল এবার ২০১৯ সালের ভোটের আগে সেই বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়েছে বহুগুণ। গতবারের চেয়ে এবার ভোটে প্রায় ১৫০ শতাংশ বেশি টাকা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিনিয়োগ করছে দলগুলি। তাঁদের দাবি, এবার সবক’টি রাজনৈতিক দল মিলে অন্তত ১২ হাজার কোটি টাকা ঢালছে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের জন্য। তার মধ্যে শুধু ফেসবুকে ঢালা হচ্ছে ১০ হাজার কোটি টাকা। বাকি দুই হাজার কোটি টাকা অন্য সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেটে। বিশ্বের ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় ‘অ্যাডলিফ্ট’ একটি নামী এজেন্সি। তারা জানিয়েছে, ভারতে নানা সময় কিছু না কিছু উপনির্বাচন ও ভোট লেগেই থাকে। ফলে চলতি বছরে ভারতে সোশ্যাল মিডিয়ায় বা ডিজিটাল দুনিয়ায় বিজ্ঞাপনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলি এবার ১৬,৮০০ কোটি টাকা খরচ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২১ সালে ভারতেই এই বাজারটা বেড়ে হবে ২৪, ৯২০ কোটি টাকা। বিজেপি, কংগ্রেসের মতো সর্বভারতীয় দলগুলি ছাড়াও আঞ্চলিক দলগুলি এবং বামেরাও পিছিয়ে নেই এই টাকা ঢালার প্রতিযোগিতায়।

তবে এর সাইড এফেক্টও আছে। সেটা কী? জবাবে সোশ্যাল মিডিয়ার মার্কেটিংয়ের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এর ফলে খবরের কাগজ, এফএম চ্যানেল, টিভি চ্যানেলগুলির আয় ভালই মার খাবে। কারণ ফেসবুক একাই ‘ক্ষীর’ খাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলি বিজ্ঞাপনের জন্য যে টাকাটা কাগজ ও টিভিতে ঢালত সেই টাকাটা এখন ঢালছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ফলে শহর, মফস্বলে প্রেসগুলির আয়ও বেশ ধাক্কা খাবে।

[লোকসভার আগে কংগ্রেসের মাস্টারস্ট্রোক, সক্রিয় রাজনীতির ময়দানে প্রিয়াঙ্কা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ