সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিরোধীদের প্রবল প্রতিবাদ সত্ত্বেও বুধবার রাজ্যসভায় পাশ হল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। বিলটির পক্ষে পড়ে ১২৫টি ভোট এবং বিপক্ষে ১০৫টি। বিল নিয়ে ভোটাভুটির আগে বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো নিয়ে ভোটাভুটি হয়। সেখানেও বিরোধীদের দাবি খারিজ হয়ে যায়। এদিন ভোটাভুটির আগে ওয়াক আউট করেন শিব সেনার তিন সাংসদ। রাজ্যসভায় গরহাজির ছিলেন বসপার ২ সাংসদ। যথারীতি এনডিএ-এর পক্ষে সমর্থন আরও শক্তিশালী হয়। এই বিল পাশের মধ্যে দিয়ে পড়শি ইসলামিক দেশগুলিতে নিপীড়িত অ-মুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করল দ্বিতীয় মোদি সরকার।
সোমবারই লোকসভায় পাশ হয় বিতর্কিত বিলটি। ওই দিন অভিযোগ পালটা অভিযোগে সরব হয়ে ওঠে সংসদের নিম্নকক্ষ। বিলের প্রতিলিপি ছিঁড়ে ও অমিত শাহকে ‘হিটলার’ বলে বেশ নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি করেন হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা তীব্র বাদানুবাদের পর সেদিন মধ্যরাতে লোকসভায় বিলটি পাশ হয়। এদিকে, বুধবারও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় রাজ্যসভায়। বেলা ১২টা নাগাদ অধিবেশন শুরু হতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উচ্চকক্ষ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে পালটা দিয়ে এদিন কংগ্রেস সাংসদ আনন্দ শর্মা দাবি করেন, দ্বিজাতি তত্ত্বের জনক সাভারকর। কংগ্রেসের কখনওই দেশভাগের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেনি।
এদিকে, বুধবারও বিতর্কিত বিলটিকে ঘিরে অশান্ত অসম। গুয়াহাটি-সহ বঙ্গাইগাঁও, গোলঘাট, তিনসুকিয়া, ডিব্রুগঢ়, শিবসাগর, জোরহাট, মাজুলির মতো জেলাগুলিতে মশাল মিছিল ও পথ অবরোধ হয়। আপ কামরূপ এক্সপ্রেস-সহ বাতিল করা হয় একাধিক ট্রেন। গুয়াহাটি ও কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাও অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল করা হয়েছে।পুলিশের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। এদিকে, আন্দোলনরত পড়ুয়াদের গায়ে হাত দিলে ফল ভুগতে হবে বলে হুঙ্কার দিয়েছেন সন্ত্রাসবাদী সংগঠন উলফা’র প্রধান পরেশ বরুয়া। পরিস্থিতি সামাল দিতে কাশ্মীর থেকে আধা সামরিক বাহিনীর ২০ কোম্পানি অসমে পাঠান।
উল্লেখ্য, বিলটি গত লোকসভায় পাশ হলেও তা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক অব্যাহত। বিলে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় পীড়নের কারণে এ দেশে শরণার্থী হিসেবে হিন্দু, পার্সি, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা আশ্রয় নিতে বাধ্য হলে, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। সেখানে প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা মুসলিমদের বিষয়ে কোনও উল্লেখ নেই। ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে বাঁচতে এ দেশে আশ্রয় নেওয়া অ-মুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ বলেই জানাচ্ছে সরকার পক্ষ। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি প্রথম মোদি সরকারের আমলেই লোকসভায় পেশ হয়। নিম্নকক্ষে তা পাশও হয়ে যায়। কিন্তু বিরোধীদের আপত্তিতে তা আর রাজ্যসভায় পেশ করা যায়নি। নিয়ম অনুযায়ী, লোকসভার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বিলটিরও মেয়াদ ফুরায়। ফলে নতুন লোকসভায় তা আবার পেশ করা হয়।
[আরও পড়ুন: CAB ভোটাভুটিতে নেই দেব-মিমি, সতীর্থদের সমালোচনা হতেই কড়া জবাব নুসরতের]