Advertisement
Advertisement
Ashok stambh

কেন অশোকস্তম্ভকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল জাতীয় প্রতীক হিসেবে? জানুন ইতিহাস

অশোকস্তম্ভের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন নন্দলাল বসুর মতো কিংবদন্তি শিল্পীও।

Some interesting facts about Ashok Stambh। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:July 15, 2022 5:16 pm
  • Updated:July 15, 2022 5:45 pm

বিশ্বদীপ দে: অশোকস্তম্ভের (Ashok Stambh) নতুন স্থাপত্য ঘিরে বিতর্কে উত্তাল দেশ। নয়া সংসদ ভবনে সাড়ে ৯ হাজার কেজি ব্রোঞ্জের স্থাপত্যের এশীয় সিংহগুলির মুখের আদল অনেক বেশি ‘রাগী’ বলে মনে হচ্ছে অনেকেরই। আর তা থেকেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠেছে, যদি স্থাপত্যের পরিবর্তন সত্যিই করা হয়ে থাকে তবে তা কি আদৌ আইনসম্মত? আর সেই সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসছে অশোকস্তম্ভের ইতিহাস। উঠে আসছে এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সম্রাট অশোকের শাসনকালের ভারতবর্ষের আদর্শও। আর সেই সঙ্গেই এক বঙ্গতনয়কেও মনে পড়ে যাচ্ছে। তিনি নন্দলাল বসু। জওহরলাল নেহরু কিংবদন্তি শিল্পীকেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন সংবিধানে অশোকস্তম্ভের ছবি আঁকার।

উত্তরপ্রদেশের সারনাথের অশোকস্তম্ভের আদলেই গড়ে তোলা হয়েছিল স্বাধীন ভারতবর্ষের জাতীয় প্রতীককে। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি অশোকস্তম্ভকে জাতীয় প্রতীকের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেন? কেন ২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ওই স্থাপত্যকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল? সেকথা বলতে গেলে ওই স্থাপত্যের নকশা ও তার তাৎপর্যকে বোঝা দরকার।
নিঃসন্দেহে জাতীয় প্রতীকের স্থাপত্যের মধ্যে প্রথমেই নজর পড়ে চার সিংহের দিকে। শক্তি, সাহস, গর্ব এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতীক অশোকস্তম্ভের চার সিংহ। মৌর্য যুগে সিংহ ছিল রাজশক্তির প্রতীক। মনে করা হত, ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করতে রাজাধিরাজ তাঁর সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেন। তারই প্রতীক সিংহ। আধুনিক ভারতে সাম্য ও সামাজিক ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার কথা মাথায় রেখেই ওই সিংহদের নির্বাচন করা হয়েছিল।

Advertisement
modi Ashok stambha
নতুন সংসদ ভবনের জন্য নির্মিত এই অশোকস্তম্ভকে ঘিরেই ঘনিয়েছে বিতর্ক

[আরও পড়ুন: ‘এত কথা হচ্ছে কেন?’, লাগাতার কোহলির সমালোচনা শুনে ‘বিরক্ত’ রোহিত]

এই চার সিংহ যে বেলনাকার ভিত্তিভূমির উপরে প্রতিষ্ঠিত সেখানে দেখা মেলে একটি করে ঘোড়া, ষাঁড়, সিংহ ও হাতির। বহু ঐতিহাসিকের মতে, এই চারটি পশু বুদ্ধের জীবনের চার অধ্যায়ের প্রতীক। আবার কারও মতে, এরা অশোকের আমলে পৃথিবীর চারটি অংশকেই বোঝাচ্ছে। আর সিংহগুলির মুখ খোলা। তারা চারদিকে বুদ্ধের বাণীকেই ছড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া রয়েছে ধর্মচক্র। একটি করে ধর্মচক্র খোদিত রয়েছে ওই পশুগুলির মধ্যে। প্রতিটি চক্রে রয়েছে ২৪টি শলাকা। এছাড়া রয়েছে জাতীয় প্রতীকের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ‘সত্যমেব জয়তে’। দেবনাগরী হরফে লেখা মুণ্ডক উপনিষদের এই অংশটিকে নতুন স্থাপত্যে বাদ দেওয়া নিয়েও সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তবে জাতীয় প্রতীকের দ্বিমাত্রিক রূপে অবশ্য একটি চক্রই দৃশ্যমান হয়। যার একদিকে ষাঁড় ও অন্যদিকে ঘোড়াকে দেখা যায়।

Advertisement
Samrat_Ashok
শান্তি ও মৈত্রীর বাণীই প্রচার করতে চেয়েছিলেন অশোক

১৯০৪ সালে ব্রিটিশ প্রত্বতত্ত্ববিদ ফ্রেডরিখ অস্কার ইমানুয়েল ওয়ের্টেল সারনাথ অঞ্চলে খননের সময় খুঁজে পান গুপ্ত যুগের একটি মন্দির। পরে পাওয়া যায় অশোকস্তম্ভের স্থাপত্যটি। এর আগে সাঁচিতেও ওই রকমই একটি ভাস্কর্য খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু তুলনামূলক ভাবে সারনাথের স্থাপত্যটি অনেক ভাল অবস্থায় ছিল। পরে এই ভাস্কর্যের আদলেই তৈরি করা হয় জাতীয় প্রতীক। উল্লেখ্য, চণ্ডাশোক থেকে ধর্মাশোকে পরিণত হওয়ার ইতিহাস আমরা জানি। দেশে বিদেশে শান্তির বাণী প্রচার করতেই এই ওই স্তম্ভ নির্মাণ করিয়েছিলেন অশোক।

[আরও পড়ুন: উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন: সরকার পক্ষের প্রার্থী ঘোষণার অপেক্ষায় বিরোধীরা, ভাবনায় মহিলা মুখ]

Nandalal Basu
ভারতীয় সংবিধানের প্রথম পাতার অশোকস্তম্ভটি নন্দলাল বসুর আঁকা

এবার আসা যাক নন্দলাল বসু প্রসঙ্গে। জওহরলাল নন্দলাল বসুকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ভারতীয় সংবিধানের প্রথম পাতায় যে অশোকস্তম্ভ উৎকীর্ণ রয়েছে সেটি আঁকার। আর নন্দলাল অশোকস্তম্ভের স্থাপত্য তৈরির দায়িত্ব দেন দীননাথ ভার্গবকে। দীননাথ তাঁরই ছাত্র। কলাভবনে নন্দলালের অধীনে শিল্পশিক্ষা করা দীননাথ নাকি সেই সময় টানা তিন মাস কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানায় গিয়ে সিংহদের খুঁটিয়ে দেখে তবেই তিনি সিংহগুলিকে নির্মাণ করেছিলেন। জানা যায়, তিনি বারবার চিড়িয়াখানায় গিয়ে খুঁটিয়ে সিংহগুলিকে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, যাতে নির্মিত মূর্তিগুলির মধ্যে স্বাভাবিকতা বজায় থাকে। নিঃসন্দেহে ওই স্থাপত্যের শিল্পসৌকর্য অত্যন্ত উচ্চমানের। রাষ্ট্রপতি ভবন, সংসদ ভবন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে দেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ ভবনেই দেখা যায় জাতীয় প্রতীককে। সারনাথ, সাঁচির ইতিহাস ছুঁয়ে সেগুলিও তাদের সৃষ্টিসৌন্দর্যে একই রকম উজ্জ্বল।

Ashok Stambh

কিন্তু সম্প্রতি বিতর্ক ঘনিয়েছে নতুন সংসদ ভবনের জন্য নির্মিত অশোকস্তম্ভটিকে দেখে। সবথেকে বেশি নজর কেড়েছে সিংহগুলির পরিবর্তিত রূপ। বলা হচ্ছে, যে সত্য ও শান্তির বাণী নিহিত রয়েছে স্তম্ভে তা যেন সেভাবে ফুটছে না। বরং সিংহগুলির মুখ ব্যাদান যে হিংসা ও ক্রোধকেই প্রতিফলিত করছে। যা জাতীয় প্রতীকের ঐতিহ্যের পরিপন্থী। বলা হচ্ছে, বুদ্ধের শান্ত, সমাহিত রূপের প্রতিফলনের ছিঁটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না নতুন স্থাপত্যে। যদিও স্তম্ভের নির্মাণশিল্পীদের দাবি, মূল সমস্যাটা তৈরি হচ্ছে স্তম্ভটির এত বড় আকারের কারণেই। কেননা এর ফলে ছোট ছোট ডিটেইলস চোখে পড়ছে। আর তাই মনে হচ্ছে এটা সারনাথের স্তম্ভটির থেকে আলাদা। অনুপাত ও দৃষ্টিকোণের পার্থক্যের কারণে এমন বিভ্রম তৈরি হচ্ছে বলেই দাবি করছেন তাঁরা। তবে মূল অশোকস্তম্ভের আকারের সঙ্গে এর যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে তা মানছেন নির্মাণশিল্পীরা। যদিও সব মিলিয়ে মূলটির সঙ্গে ৯৯ শতাংশই মিল রয়েছে বলে মত তাঁদের। এখন দেখার, বিতর্ক শেষ পর্যন্ত কোনদিকে গড়ায়। বরং এই অবসরে ইতিহাসপ্রেমীরা একবার ঝালিয়ে নিচ্ছেন ইতিহাস। স্মরণ করছেন সদ্য স্বাধীন হওয়া ভারত কীভাবে এই জাতীয় প্রতীককে নির্মাণ করেছিল ইতিহাসের মণিরত্ন ছেঁচে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ