সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শত্রুর বুলেট বুকে নিয়ে ছেলে চলে গিয়েছে এক দশকের উপর৷ এখন স্মৃতিটুকু সম্বল৷ আর সম্বল বলতে সন্তানের ছবি৷ হাতে সেই ছবি নিয়েই মাতৃ দিবসে বসে আছেন মা৷ চোখে চিক চিক জল৷ দৃষ্টিতে অনেকখানি শূন্যতা৷ তবু তার মধ্যেই যেন ঠিকরে পড়ছে আশার আলো৷ সন্তান চলে গেলে কোন মায়েরই বা ভাল লাগে! তবু তিনি চান, ভারতমাতার জন্য যে বীর জওয়ানরা কাজ করছেন তাঁদের ভাল হোক, দেশের ভালর জন্যই কাজ করুন তাঁরা৷
[ গিনেস বুকে নাম ভারতের ‘আদিযোগী’র আবক্ষ মূর্তির ]
ইনি শহিদ শিব সিং ছেত্রীর মা গীতা দেবী৷ ছোটবেলা থেকেই ছেলে ছিল লম্বা-চওড়া৷ খেলাধুলোয় চৌকস৷ স্বপ্ন ছিল সেনায় যোগ দেওয়ার৷ সে স্বপ্ন পূরণও হয়েছিল৷ ১৯৯৫ সালে ভারতীয় সেনার গোরখা রেজিমেন্টে যোগ দেন গোরক্ষপুরের শিব সিং৷ তারপর দেশের হয়ে লড়াইয়ের শপথ ও অঙ্গীকার রক্ষা৷ ছেলের স্বপ্ন পূরণে খুশি ছিলেন গীতা দেবীও৷ আজ ছেলের ছবির দিকে তাকিয়ে মন পড়ে যায় পুরনো সেই দিনের কথা৷ ছুটিছাটাতে বাড়ি এলে খুব হইহল্লা করতে ভালবাসতেন শিব৷ বন্ধুদের সঙ্গে দেদার আড্ডা দিতেন৷ কিন্তু একবার গিয়ে আর ফিরলেন না৷ শেষবার যাওয়ার আগে মাকে প্রণাম করার সময় গীতা দেবী আশীর্বাদ করে বলেচিলেন, ভাল থেকো৷ কিন্তু তখন কে জানত, আর ফের হবে না শিবের! ১৯৯৯ সালের ২২ আগস্ট খবর আসে শহিদ হয়েছেন শিব৷ কুপওয়াড়া সেক্টরে জঙ্গি হামলায় লড়াই চলাকালীন দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন তিনি৷
তারপর কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর৷ সন্তান হারানোর শোক তো মেটার নয়৷ গীতাদেবীর চোখের খাঁ খাঁ শূন্যতা যেন আজও সে কথাই মনে করিয়ে দেয়৷ তবু তো তিনি জওয়ানের মা৷ আর তাই সব শূন্যতার মধ্যে তিনিই দেখাতে পারেন আশার আলো৷ এক সর্বভারতীয় সংবাধমাধ্যমের তরফে যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, অন্যান্য জওয়ানের মায়েদের উদ্দেশ্যে তিনি কী বলবেন? গীতা দেবী জানান, কারও সন্তান চলে গেলে তো কেউ ভাল থাকে না৷ কিন্তু যাঁরা কাজ করছেন তাঁরা তো দেশের জন্যই কাজ করছেন? সায় দেন গীতাদেবী৷ নিজে সন্তান হারিয়েও তিনি চান ভারতমাতার ভালর জন্যই কাজ করুন দেশের বীর সন্তানরা৷
[ শহিদ জওয়ানের নামে জম্মু ও কাশ্মীরে স্কুলের নাম রাখল ভারতীয় সেনা ]
শহিদ শিব সিংয়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তাঁর বাড়ির সংলগ্ন এলাকাতেই তৈরি হয়েছে মূর্তি৷ আজও মানুষ সেই মূর্তির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় শ্রদ্ধায় মাথা নোয়ান৷ সম্মান দেন ভারতের বীর শহিদকে৷ আর সেই সম্মান-সম্ভ্রম-সমবেদনার মধ্যেই শোক আর স্মৃতি আগলে জেগে থাকেন মা গীতা দেবী৷ গর্ব করে বলেন, ছেলে ছোটবেলা থেকেই খুব বাহাদুর ছিল৷ ছেলে বাহাদুর তো বটেই৷ আর যে মা শহিদ সন্তানের ছবি হাতে নিয়েও ভারতমাতার মঙ্গল চাইতে পারেন, তিনি ছাড়া সেই বীরের জননী আর কেইবা হতে পারেন!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.