কিংশুক প্রামাণিক: চিনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হল কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে বেজিংয়ে প্রতিনিধিদল নিয়ে যাওয়ার জন্য চিঠি দিয়ে অনুরোধ করলেন খোদ বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।
চিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কলকাতায় এসে মমতাকে ভারতের সবচেয়ে সৎ রাজনীতিক বলে মন্তব্য করেছিলেন। শুধু তাই নয়, তাঁকে চিন যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণও করে যান। বলেন, চিনের কমিউনিস্ট পার্টি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী। মজার কথা হল, এ দেশে মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির সবচেয়ে বড় শত্রু মমতাই। মূলত তাঁর জন্যই দেশের মধ্যে বামদলগুলি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। কিন্তু কমিউনিস্ট চিনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতিতে সেই মমতাকেই চিনে পাঠাতে চাইছে কেন্দ্র। মনে রাখতে হবে কিছুদিন আগেই এই মমতা যখন চিন সফরে যেতে চান, তখন অনুমতির ব্যাপারে নীরব ছিল কেন্দ্র। কিন্তু এবার বেজিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক স্তরে বৈঠক করতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে টিম নিয়ে চিনে যেতে চিঠি পাঠালেন সুষমা।
[ গাড়ির ধাক্কায় ভাঙল হোটেল, ইন্দোরে মৃত অন্তত ১০ ]
প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বরাবরই ভারতের সম্পর্ক ভাল। জোট নিরপেক্ষ ভূমিকা নেওয়ার জন্য ভারতের কূটনীতি বিশ্বের দরবারে বারবার প্রশংসিত হয়ে এসেছে। কিন্তু বর্তমানের পরিস্থিতি ভিন্ন। কেন্দ্রের কিছু পদক্ষেপের কারণে পড়শিদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে দিল্লির। এই সুযোগটাই নিয়েছে চিন। পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি ভারতকে ঘিরে থাকা দেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করেছে তারা। এর প্রভাব শুধু ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে পড়েছে নয়, ভারত-চিন সীমান্তেও তার প্রভাব দেখা গিয়েছে। ডোকলামের মতো ইস্যু ছাড়াও সিয়াচেন এবং লাদাখের বেশ কিছু এলাকা উত্তপ্ত রয়েছে। এই অবস্থায় খানিকটা বিপাকে পড়েই কেন্দ্র চাইছে নানাভাবে বেজিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি।
[ হিন্দুত্ব প্রচার ভারতে কাজ করবে না, বিজেপিকে একহাত প্রকাশ রাজের ]
সূত্রের খবর, সেই উদ্দেশ্যেই চিঠি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়ে চিন যাওয়ার অনুরোধ। চিঠিতে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ লিখেছেন, ‘চিনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতিতে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় অংশ নিতে যে দল যাবে আপনি তার নেতৃত্ব দিন।’ বিদেশমন্ত্রী চাইছেন, এপ্রিলেই মমতা বেজিংয়ের উদ্দেশে রওনা দিন।
[ যোগীর রাজ্যে মূর্তি ভাঙার রাজনীতিতে ফের আক্রান্ত আম্বেদকর ]
আসলে রাজনৈতিকভাবে মমতার সঙ্গে যুদ্ধ চললেও তাঁকে এভাবে প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিতে বলা তাৎপর্যপূর্ণ। বর্তমানে তৃণমূল-বিজেপি সংঘাত চরমে। এমনকী ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদিকে সরাতে যে অবিজেপি জোট গঠনের ডাক দেওয়া হয়েছে তার পুরোভাগে রয়েছেন মমতাই। দিল্লির রাজনৈতিক সূত্র জানাচ্ছে, চিন নিয়ে কিছুটা বেকায়দায় কেন্দ্র। তারা খবর নিয়ে জেনেছে, কমিউনিস্ট পার্টি এখন মমতাকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশেষ করে তাঁর নানা সামাজিক কর্মকাণ্ড, কন্যাশ্রী প্রকল্পের বিশ্বজোড়া স্বীকৃতি সবই নজরে আছে কমিউনিস্ট পার্টির। এটা বুঝেই মমতাকে সামনে রেখে বেজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের রাস্তায় হাঁটতে চাইছে নয়াদিল্লি।