৯ চৈত্র  ১৪২৯  শুক্রবার ২৪ মার্চ ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

অতৃপ্ত প্রেমকে যেখানে পাহারা দেয় জিনরা

Published by: Sangbad Pratidin Digital |    Posted: May 29, 2016 8:37 pm|    Updated: May 29, 2016 8:37 pm

The Jinns Of Jamali-Kamali

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রেম মনে থাকে না শরীরে?
অনেকে বলতেই পারেন, শরীরটাও উপেক্ষা করার মতো নয়। শরীর ছুঁয়েই মনের প্রেম স্পর্শ করে স্বর্গের সপ্তম শিখর।
আর যখন মৃত্যুর পরে সেই শরীর মিশে যায় আকাশে-বাতাসে? তখন প্রেমের কী হয়? কোথায় যায় সেই অনুভূতি যা ছুটিয়ে মেরেছিল সারা জীবন?
দিল্লির জামালি-কামালি জোড়া গম্বুজের সামনে এসে দাঁড়ালে উত্তর মিলবে। বোঝা যাবে, শরীর হারিয়ে গেলেও প্রেম কোথাও যায় না! জীবনের সমস্ত ভালবাসা-ঢালা কবিতা নিয়ে তখন শুরু হয় তার দ্বিতীয় সফরনামা।
দিল্লির কুতুব মিনার রয়েছে যে এলাকায়, তার কাছেই শুরু হয়েছে মেহরৌলি এলাকা। এই মেহরৌলি এলাকাতেই মৃত্যুর পরে স্থান নিয়েছেন দুই বন্ধু জামাল আর কামাল। তাঁদের প্রেম মৃত্যুর পরেও ফুরিয়ে যায়নি। বরং, মৃত্যুর পর সবার আড়ালে তাঁদের নিভৃতির আয়োজন করে দিতে এই জোড়া সমাধি পাহারা দেয় জিনেরা!
সমকামী প্রেম? আর তা নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে মৃত্যুর পরপারেও?

jamalikamali1_web
জামাল সম্পর্কে ইতিহাসে বক্তব্যের শেষ নেই। ভারতে যখন লোদি বংশের শাসন চলছে, সেই সময়েই জন্ম নেন এই সন্ত-কবি। পুরো নাম শেখ ফজলুল্লাহ। কিন্তু, সে নামে ডাকত না বড় কেউ! ডাকনাম জামাল-ই পেয়েছিল স্বীকৃতি।
জানা যায়, এই জামাল ছিলেন সুলতান ইব্রাহিম লোদির শিক্ষক। পরে যখন লোদি বংশের শাসনের পর হুমায়ুন এবং বাবর ভারতের তখতে আসীন হন, তখনও বেঁচে ছিলেন জামাল। সম্মান তাঁর এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে তাঁর নামে আলাদা করে একটা মসজিদ নির্মিত হয়। সালটা ১৫২৮ কী ১৫২৯! ১৫৩৫ সালে মৃত্যুর পরে ওই মসজিদ সংলগ্ন এলাকাতেই তাঁর সমাধি গড়ে তোলা হয়।
বেশ কথা! আর, কামাল?
অদ্ভুত ভাবে ইতিহাস তাঁকে নিয়ে নীরব। প্রায় কিছুই জানা যায় না তাঁকে নিয়ে। এতটাই নিভৃত জীবনযাপন করতেন তিনি।
তবে, সেই জীবন জামালকে ছেড়ে নয়!
অনেক গবেষক দাবি তোলেন, কামালের নিভৃত জীবনযাপনের একমাত্র কারণ ছিল কবিতা। যে সব কবিতা লিখে বিখ্যাত হয়েছিলেন জামাল, সে সব না কি তাঁরই লেখা! অনেকে আবার এতটাও উচ্চকিত নন জামাল আর কামালের কাব্যিক সম্পর্ক নিয়ে। তাঁদের দাবি, জামালের সব কবিতাই সম্পাদা করতেন কামাল। তার পরেই সুধীজনের দরবারে তা পেশ করা হত!
তবে, একটা ব্যাপারে সবাই একমত- তাঁদের মধ্যে যে দুর্দান্ত প্রেম ছিল, তাই ফুটে উঠেছিল কবিতা হয়ে।

jamalikamali3_web
সেই প্রেম একদিন জীবন থেকে রওনা দিল মৃত্যুর দিকে। প্রকৃতির নিয়মেই জীবন ফুরিয়ে গেল জামাল আর কামাল- দুই প্রেমাস্পদের।
মানুষ দুই প্রেমিকের নশ্বর দেহ পাশাপাশি সমাধিস্থ করে কর্তব্য সমাধা করে। এর ঠিক পরেই শুরু হয় অলৌকিক কারনামা!
জামাল, কামালের প্রেমকে এবার নিভৃতিতে মুড়ে রাখে জিনরা। দিনের বেলা তারা এই চত্বরে মানুষকে রেয়াত করলেও সন্ধের পর ছেড়ে কথা বলে না।
শোনা যায়, সন্ধের পরেই না কি সূক্ষ্ম শরীরে আজও মিলিত হন জামাল আর কামাল। তাঁদের কথা বয়ে চলে কবিতার খাতে। এই ভালবাসা যাতে মানুষের অবাঞ্ছিত উপস্থিতিতে আঘাত না পায়, সেই জন্যই জিন বা অশরীরী দৈত্যদের এহেন নজরদারি!
অনেকেই বলেন, সূর্য ডুবে যাওয়ার পরে জামালি-কামালির জোড়া গম্বুজ কোনও দিক থেকেই নিরাপদ নয়। সন্ধে যত বাড়ে, অশরীরীর পায়ের আওয়াজ স্পষ্ট শোনা যায় এই জোড়া গম্বুজের অন্দরে। কখনও বা শোনা যায় খিলখিল হাসির রব! মাঝে মাঝেই কানে আসে শ্বাপদের ক্রুদ্ধ ‘গররর’ ডাক! যদিও এই সব শব্দের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।
এক পর্যটক একবার পূর্ণিমা রাতে জোড়া গম্বুজের অন্দরে ছবি তুলতে গিয়ে অশরীরীর থাপ্পড় খেয়েছিলেন! মাথা ঘুরে তিনি পড়ে যান! পরে তাঁর অজ্ঞান দেহ উদ্ধার হয় জোড়া গম্বুজের অনেকটা দূরে!

jamalikamali2_web
আপনি প্রশ্ন তুলতেই পারেন, যিনি সন্ত এবং কবি, তিনি শুধুমাত্র নিভৃতির জন্য অশরীরীর সাহায্য নিয়ে কেন ব্যতিব্যস্ত করে তুলবেন নিরীহ মানুষকে?
ভেবে দেখুন তো ভাল করে! মনের মানুষটির সঙ্গে যখন আপনি সবার থেকে লুকিয়ে আলাদা করে দেখা করতে গিয়েছেন, তখন যদি খুব প্রিয় বন্ধুও সেখানে আচমকা হাজির হয়, রাগ কি আসে না?
জামাল আর কামালেরও অস্বস্তি তো হবেই! সারা জীবন তাঁদের প্রেম অটুট থেকেছে লোকচক্ষুর অন্তরালেই! জামালকে ভালবেসে কামাল বেছে নিয়েছেন সবার থেকে দূরত্ব!
সেই প্রেমে যদি অন্যের পা পড়ে, তবে কেন তা সহ্য হবে?

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে