সুমিত বিশ্বাস: প্রার্থী তো রয়েইছেন। তবুও দেওয়াল থেকে সোশাল সাইটের ওয়ালে লেখা ‘এই’ চিহ্নে ভোট দিন। মিটিং, মিছিল, সভা, সমিতিতে স্লোগান ভোট দেবেন কোনখানে? ‘এই’ চিহ্নের মাঝখানে। আসলে দেশে এখনও এমন অনেকেই আছেন যাঁদের অক্ষর জ্ঞান নেই। চিহ্ন দেখেই বুঝতে হয় পছন্দের প্রার্থীকে। তাই নির্দল দলের প্রার্থীদের জন্য এবারের লোকসভা ভোটে ১৯০ টি প্রতীক চিহ্ন অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন। তাতে কি নেই? ডাস্টবিন থেকে চপ্পল। বালিশ থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা। দহনজ্বালায় ভোটের কথা মাথায় রেখে এয়ারকন্ডিশনার, আইসক্রিম, রেফ্রিজারেটর, রুম কুলারও রয়েছে।
তবে ১৯০টি প্রতীকই যে দেশের সব রাজ্য ব্যবহার করতে পারবে তা নয়। কয়েকটির ক্ষেত্রে কিছু বাধ্যবাধকতা রেখেছে কমিশন। যেমন ‘আপেল’ চিহ্নটি অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, ত্রিপুরা, পুদুচেরি, তামিলনাড়ু, কেরালা ও কর্নাটক ব্যবহার করতে পারবে না। তেমনই অটো-রিকশা ব্যবহার করতে পারবে না অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা। ডোর হ্যান্ডেল বা দরজার হাতল চিহ্ন ব্যবহার করতে পারবে না উত্তরপ্রদেশ উত্তরাখাণ্ড। আবার ‘আইসক্রিম’ ব্যবহার করা যাবে না তামিলনাড়ুতে। একইভাবে ‘লেডি পার্স’ প্রতীক ব্যবহার হবে না বাংলা, ত্রিপুরা, সিকিম, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয়, মণিপুর, আসাম, অরুণাচল প্রদেশে।
এই ১৯০ টি প্রতীকের মধ্যে নির্বাচনে ভোট প্রচার বা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ চিহ্ন যেমন রয়েছে। তেমনই একেবারে মানানসই নয় সেই প্রতীকও আছে। অবশ্য সেই প্রতীকও ভোটের বাজারে নজর কাড়তে পারে এমন কথাও বলছে অস্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলো। তবে জঙ্গলমহলে আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা ( প্রধান নেতা ) তথা পুরুলিয়া কেন্দ্রের প্রার্থী অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ” আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে যে প্রতীক সামঞ্জস্যপূর্ণ আমরা সেই চিহ্নের জন্যই আবেদন করব। যার মধ্য দিয়ে সংগ্রামী মনোভাব ফুটে উঠবে বা জঙ্গলমহলের কোন সাংস্কৃতিক দিক।” একইভাবে পুরুলিয়া কেন্দ্রের এসইউসিআই প্রার্থী সুস্মিতা মাহাতো বলেন, ” প্রতীক এমন হবে যার মধ্য দিয়ে পার্টির আদর্শ প্রতিফলিত হয়। সেই সঙ্গে অবশ্যই যা সহজে বোঝা যায়।”
ভোট মানেই সভা, সমিতি। গলাবাজি। তাই মাইক যেমন রয়েছে কমিশনের প্রতীক তালিকায়। তেমনই নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিতই নয় এমন প্রতীক প্যান, নুডুলস বাউল, নেল কাটার, রেজার, সেফটিপিন, সোফা, স্টেপলার, সুইচ বোর্ডও আছে। ওই তালিকায় রয়েছে বেবি ওয়াকারও। কমিশনের তালিকায় বর্তমানে সাতটি জাতীয় দল ও ৬৪ টি আঞ্চলিক দলের প্রতীক চিহ্ন সংরক্ষণ করা থাকলেও একই প্রতীক অঞ্চল ভেদে আলাদা রাজনৈতিক দল ব্যবহার করে থাকে। সেজন্যই কমিশনের কিছু বাধ্যবাধকতা।
দেশ স্বাধীনের পরে যখন নির্বাচন পদ্ধতি চালু হয় অর্থাৎ ১৯৫১ সালের শেষ দিকে। সেই সময় দেশে স্বাক্ষরতার হার ছিল কম। দেশের প্রথম লোকসভা নির্বাচনে ১৪টি প্রতীক চিহ্ন অনুমোদন করে কমিশন। সেই সময়ই নির্বাচন কমিশনের এক কর্তা এম এস শেঠি কয়েকটি ছবির পেন্সিল স্কেচ তৈরি করেন। এমন কিছু ছবি তিনি আঁকেন যা রোজকার ব্যবহৃত বা সহজেই দেখা মেলে। তার মধ্যে ছিল বেলচা, কোদাল, ফুল, গাছের পাতা, উদীয়মান সূর্য। তাঁর সেই আঁকা ১০০ টি ছবির মধ্যে বেশ কয়েকটি আজও নির্দলদের জন্য প্রতীক দেয় কমিশন। এবারের ১৯০-র তালিকায় সেই প্রতীকের কয়েকটি রয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.