Advertisement
Advertisement
অরুণাদেবী

ভাত ছেড়েছিলেন উদ্বাস্তুদের জন্য, আজও চা-বিস্কুট খেয়ে দিন কাটান শতায়ু অরুণাদেবী

অরুণাদেবীর হাত ধরে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন বেশকিছু ছিন্নমূল পরিবার।

This 103 year old woman from Guwahati, Arunadevi is an inspiration for all
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:September 4, 2019 4:11 pm
  • Updated:September 5, 2019 8:42 am

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক:  ’৪৭ সাল। দেশভাগের সময়। দেশভাগের ক্লেশ-ক্লান্তিতে জেরবার ওপারের মানুষজন। চারিদিকে হাহাকার। থরে থরে লাশ। কাতারে কাতারে উদ্বাস্তুদের ভীড়। দু’মুঠো অন্ন তো দূরের কথা, কোনও কোনও বাড়ির অন্দর থেকে ফেলে দেওয়া গরম ভাতের ফ্যানই তখন সই পেটের জ্বালা মেটানোর জন্য। সীমান্ত পেরিয়ে ভারতই তখন তাঁদের একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়। প্রাণে বাঁচার। ভীড় করা এই উদ্বাস্তুদের দেখে নাক কুঁচকে ছিলেন অনেকেই। কিন্তু এঁদের মধ্যেও তো ব্যতিক্রম ছিলেন কয়েকজন, যাঁরা নিজের সম্বলটুকু দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সেই সব মানুষগুলোর। কেঁপে উঠেছিলেন ওঁদের কাতর আর্তিতে। ঠিক সেরকমই একজন অরুণাদেবী। গুয়াহাটির বাসিন্দা। এখন অবশ্য চুলে পাক ধরেছে। কানে শোনেন না। ছোবল পড়েছে বার্ধ্যকের।

[আরও পড়ুন: ডাক্তার পেটালে ১০ বছরের জেল, নয়া বিল কেন্দ্রের]

ছিন্নমূলদের আশ্রয় তখন ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে। অসমও সেই তালিকায় ছিল। গুয়াহাটি স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছিলেন বহু শরণার্থী। সেসব ছিন্নমূলদের পাশে দাঁড়াতে অরুণাদেবীর জীবনসংগ্রাম হাজারও মানুষদের কাছে রীতিমতো অনুপ্রেরণার মতো। এখন তাঁর বয়স অবশ্য ১০৩। বার্ধ্যকের ছোবল পড়লেও দমে যাননি। বরং এক ছায়াসঙ্গীকে নিয়ে দাপটের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন স্কুল। সাতচল্লিশের দেশভাগের সময় অরুণাদেবী তখন যুবতী। শরণার্থী বাচ্চাগুলোর কান্নায় কেঁপে উঠেছিল তাঁর হৃদয়। আর তাই বোধহয় ওই করুণ খুদে মুখগুলির দিকে তাকিয়ে বালতি বালতি দুধ নিয়ে গুয়াহাটি স্টেশনে ছুটতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। কারণ তিনি নিজে বিক্রমপুরের মেয়ে। স্বামী যদুলাল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনি তার অনেক আগেই এদেশে চলে এসেছেন। অরুণাদেবীর সেই সংগ্রামের সঙ্গী তখন যদুলালও।

Advertisement

Advertisement

স্টেশনে গিয়ে দেখেছিলেন মানুষগুলো কটা অন্নের জন্য হা-মুখে চেয়ে রয়েছেন। বাচ্চাগুলোর খিদে দুধে মিটলেও, ওরা কী খাবে! শিশুগুলির মায়েদেরও কাতর আর্তি, “মা গো আমাদেরও খেতে দিন, আমরাও বাঁচতে চাই”। মর্মস্পর্শী সেই কথাগুলো ভুলতে পারেননি অরুণাদেবী। অতগুলি মানুষের খাবার-আশ্রয়ের সংস্থান করা সম্ভব নয়। তাই একপ্রকার স্বামীর অমতে গিয়েই কয়েকটি পরিবারকে ত্রিপল খাটিয়ে আশ্রয় দেন বাড়ির বাগানে। স্বামী, ৪ ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে তাঁর সউকের সংসার তখন মাথায় উঠল। কারণ অরুণাদেবী তখন শুধু ওই ৫ জনের মা নন, অসহায় উদ্বাস্তুদেরও ‘মা’।

স্বামী যদুলাল অর্থাভাবের কথা বললে, অভিমানে সারাদিন শুধু চা-বিস্কুট খেয়ে থাকতেন। তাঁর খাওয়ার খরচ যা লাগত, সেই টাকায় ওই মানুষগুলির মুখে অন্ন তুলবেন বলে। কিন্তু সম্বল তো বেশি নেই তাঁর তখন। অতঃপর শুরু হল স্বামী-সন্তানদের আড়ালে ঠোঙা তৈরির কাজ। বিক্রি করে যা জুটত, তাতে নিজেই বাগানে কুড়নো খড়কাঠ দিয়ে রান্না করতেন ওদের জন্য। মাসখানেকের মধ্যে সরকারের তরফে শরণার্থীদের জন্য ব্যবস্থা হলেও থামেনি অরুণাদেবীর লড়াই। এদেশে কী করে ওদের অর্থ উপার্জন হবে, মাথায় ভীড় করল সেই চিন্তাও। ওদের জন্য শুরু করলেন সেলাই, বাটিকের নকসা, রান্না শেখানোর স্কুল। অনেক ছিন্নমূল পরিবার ঘুরে দাঁড়িয়েছিল তাঁর হাত ধরে।

[আরও পড়ুন: NRC বিতর্ক এড়াতে পদক্ষেপ, ‘প্রোটেক্টেড এরিয়া’-র আওতায় আনা হল অসমকে]

আজও দরিদ্রদের মুখে অন্ন জোটে না বলে, তিনি নিজে ভাত খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। খান চা-বিস্কুট। শীতে গরম পোশাক তাদের গায়ে চড়ে না বলে নিজেও গায়ে তোলেন না শীতবস্ত্র। শতবর্ষ পেরলেও আজও তিনি একইরকম উদ্যমে চলছেন। অরুণাদেবী আপনি ধন্য। নীরবেই বিপ্লব চালিয়ে যাচ্ছেন দারিদ্রতার বিরুদ্ধে। মানবসভ্যতার অনেক কিছুই শেখার রয়েছে এই ‘শতায়ু তরুণী’র কাছ থেকে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ