সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যে এসপিজি কমান্ডোরা থাকেন, তাঁদের মধ্যে একজনের হাতে একটি কালো রঙয়ের ব্রিফকেস নিশ্চয় আপনার নজরেও পড়েছে! ওই ব্রিফকেসেই কি রয়েছে পরমাণু বোমার ট্রিগার? রিমোট মারফত যেখান থেকে খুশি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারেন প্রধানমন্ত্রী মোদি? এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়! জেনে নেওয়া যাক সত্যি ওই ব্রিফকেসে কী থাকে?
একাধিক জাতীয় সংবাদমাধ্যমে সম্প্রচারিত খবর অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যান, তাঁর নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে একটি নির্দিষ্ট আকৃতির, কালো রঙয়ের চামড়ার ব্রিফকেস থাকে। কোনও প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানই হোক বা প্রজাতন্ত্র দিবস, মোদির সর্বক্ষণের সঙ্গী ওই কালো রঙের ব্রিফকেস। এখন সকলের মনেই প্রশ্ন কী থাকতে পারে ওই ব্রিফকেসে? জেনে নিন সত্যিটা।
আমেরিকা বা রাশিয়ার মতো এটিও একটি নিউক্লিয়ার ব্রিফকেস। প্রটোকল মেনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে সর্বক্ষণ এই ব্রিফকেস নিজের কাছে রাখতে হয়। যখন খুশি, যেখান থেকে খুশি, এই নিউক্লিয়ার ব্রিফকেসের ট্রিগার টিপে ছুড়ে দেওয়া যায় পরমাণু বোমা সমৃদ্ধ ক্ষেপণাস্ত্র। এখন প্রশ্ন হল, এতদিন তো দেশের কোনও প্রধানমন্ত্রীকে সেভাবে নিউক্লিয়ার ব্রিফকেসকে দেহের এত কাছাকাছি নিয়ে ঘুরতে দেখা যায়নি। তাহলে মোদিই কেন?
এরও একটি কারণ দর্শিয়েছে একটি জাতীয় সংবাদমাধ্যম। তাদের সম্প্রচারিত খবর মোতাবেক, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর থেকেই কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জাতীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে কয়েকগুণ বেশি উদ্বিগ্ন। প্রজাতন্ত্র দিবসেও প্রধানমন্ত্রীর উপর ফিদায়েঁ হামলার আশঙ্কা ছিল। নোট বাতিল করে জঙ্গিদের ভাতে মেরেছেন মোদি। সবমিলিয়ে পাকিস্তান এখন মোদির বিরুদ্ধে রীতিমতো ক্ষোভে ফুঁসছে। যে কোনও সুযোগে গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই পাক জঙ্গিদের মদতে মোদির উপর হামলা করতে প্রস্তুত। এমনকী, সর্বশেষ গোয়েন্দা রিপোর্টে এটাও জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে একাধিক লঞ্চপ্যাডে ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করছে কয়েকশো ফিদায়েঁ জঙ্গি। শরীরে বোমা বেঁধে ভারতে ঢুকে বড়সড় হামলা করতে প্রস্তুত তারা।
শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের সেনাকর্তারা একাধিকবার ভারতে পরমাণু হামলার হুমকিও দিয়ে রেখেছে। সম্ভবত এই কারণেই প্রধানমন্ত্রী এখন সর্বক্ষণ এই নিউক্লিয়ার ব্রিফকেস সঙ্গে নিয়ে ঘোরেন। জানেন কি, এই নিউক্লিয়ার ব্রিফকেস কীভাবে কাজ করে ও কতটা ভয়াবহ? এসপিজি কমান্ডোদের হাতে থাকা এই ব্রিফকেসটির ওজন ১০-১২ কিলোগ্রাম। এর মধ্যে থাকে পরমাণু বোমার ট্রিগার, একটি ছোট অ্যান্টেনা। একটি বিশেষ কোডের সাহায্যে পরমাণু বোমাকে ‘আর্মড’ বা ছোড়ার জন্য প্রস্তুত করা যায়। ওই কোড শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীই জানেন। প্রধানমন্ত্রী বদল হলে ওই কোডও বদলে যায়। এই ব্রিফকেসের অন্যতম কার্যকারিতা হল, বিশ্বের যে কোনও প্রান্ত থেকে এর সাহায্যে পরমাণু হামলা করা যায়।
মার্কিন মুলুকে এই ব্রিফকেসকে বলে নিউক্লিয়ার ফুটবল। রেডার ও কমান্ডার সেন্টারের সঙ্গে এই ব্রিফকেসের সরাসরি সংযোগ থাকে। এই ব্রিফকেসের সঙ্গে একটি ল্যাপটপও যুক্ত থাকে। যার সাহায্যে ওই পরমাণু বোমার গতিপথ নিয়ন্ত্রিত হয়। ভারত এই মুহূর্তে জল, মাটি ও বায়ু- থেকে পরমাণু বোমা ছুড়তে সক্ষম। যুদ্ধ বাধলে দেশের যে কোনও নিরাপদ প্রান্তে বসে মোদি ট্রিগার টিপে পারমাণবিক বোমা সমৃদ্ধ মিসাইল ছুড়তে পারেন।
১৯৮০-তে এই ধরনের ব্রিফকেস ব্যবহার করত রাশিয়া। ১৯৮৫-তে মিখাইল গর্বাচেভ রুশ স্ট্র্যাটেজিক নিউক্লিয়ার ফোর্সের দফতরে প্রবেশের পরপরই এর ব্যবহার শুরু হয়। এর নিয়ন্ত্রণ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্তাদের হাতে থাকত। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গেও এখন দিনভর এই ব্রিফকেস থাকে। শোনা যায়, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও চিফ অফ জেনারেল স্টাফের কাছেও এই ধরনের আরও দু’টি ব্রিফকেস রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তারক্ষীদের কাছেও সর্বক্ষণ এই ধরনের ব্রিফকেস থাকে। মার্কিন মুলুকে একে বলে ‘নিউক্লিয়ার ফুটবল’, ‘দ্য বটন’ বা ‘ব্ল্যাক বক্স’। কালো চামড়ায় মোড়া ওই প্যাকেজের ওজন ২০ কিলোগ্রামের বেশি হয় না। হোয়াইট হাউসের এক মিলিটারি কর্তা বিল গালে এই তথ্য প্রকাশ্যে এনেছিলেন তাঁর এক বইতে। বিল গালে লিখেছেন, ওই ব্রিফকেসের ভিতর আট-১০ পাতার একটি এমার্জেন্সি ব্রডকাস্ট সিস্টেম ম্যানুয়াল থাকে। সঙ্গে থাকে তিন বাই পাঁচ ইঞ্চির একটি অথেনটিকেশন কোড। ব্রিফকেসের ভিতর ৯ বাই ১২ ইঞ্চির ৭৫ পৃষ্ঠার স্টেপল করা একটি ফাইল থাকে। কী করে নিউক্লিয়ার হামলা করতে হবে ও হামলা হলে কী করে রুখতে হবে বা পাল্টা হামলা চালানো যাবে, সেটা লাল ও কালো অক্ষরে লেখা থাকে ওই পৃষ্ঠাগুলিতে।
তবে আর একটি সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, ওই ব্রিফকেস আসলে একটি বুলেটপ্রুফ ভেস্টও হতে পারে। আকারে একটি ব্যাগের মতো দেখতে হলেও খুলে ফেললে একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিকে ‘লেভেল থ্রি’ মানের নিরাপত্তা দিতে পারে ওই বুলেটপ্রুফ ভেস্ট। জঙ্গিরা যদি কখনও প্রধানমন্ত্রীর উপর খুব কাছ থেকে আক্রমণ করে গুলিবর্ষণ করতে থাকে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে এসপিজি কমান্ডোরা প্রধানমন্ত্রীকে ওই ঢালের সাহায্যে ঘিরে ফেলে প্রাণে বাঁচানোর চেষ্টা করবে।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.