শুভঙ্কর বসু: মিনারেল ওয়াটার ভেবে যা খাচ্ছেন তা কি আদৌ বিশুদ্ধ? নাকি আসল ভেবে যা খাচ্ছেন তাতেও রয়েছে নকলের থাবা!
কয়েক দিন আগেই প্যাকেজড ড্রিঙ্কিং ওয়াটার পরীক্ষা করতে গিয়ে ভিরমি খেয়েছিলেন কলকাতা পুরসভার বিশেষজ্ঞরা। বেশ কয়েকটি নামজাদা কোম্পানির জলে মিলেছিল ব্যাকটিরিয়া! হাবড়ায় আবার বাড়ির মধ্যেই বোরিং মেশিনে জল তুলে তাতে মারণ রাসায়নিক বেরিয়াম হাইড্রক্সাইড অক্টাহাইড্রেট মিশিয়ে চলছিল রমরমা ব্যবসা।
আরও একধাপ এগিয়ে এবার ‘প্যাকেজড ড্রিঙ্কিং ওয়াটার’ নিয়ে কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রক যে তথ্য দিয়েছে তাতে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য! দেশে যত ধরনের ‘প্যাকেজড ডিঙ্কিং ওয়াটার’ বিক্রি হয় তার ৩০ শতাংশই হয় জাল নয়তো রাসায়নিকযুক্ত, যা পান করলে স্বাস্থ্যহানি অনিবার্য। আর এই ধরনের জাল ‘প্যাকেজড ওয়াটারই’ বিকোচ্ছে বাজারে।
কেন্দ্রীয় ক্রেতা সুরক্ষা ও খাদ্যমন্ত্রী সি আর চৌধুরির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬’১৭ অর্থবর্ষে নিয়ামক সংস্থা ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা এফএসএসএআই মোট ৭৪৩টি প্যাকেজড ড্রিঙ্কিং ওয়াটারের নমুনা পরীক্ষা করে। দেখা যায় এর মধ্যে ২২৪টি পানীয় হিসাবে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেক নিম্নমানের। তাই স্বাভাবিক ভাবেই নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এফএসএসএআই-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, উৎসস্থল থেকে জল সংগ্রহ করার পর ডিসটিলাইজেশনের মতো পদ্ধতিতে তা জীবাণুমুক্ত করার পর তার গুণগত মান পরীক্ষার জন্য ‘ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড’ বা বিআইএস-এর কাছে পাঠাতে হবে। ‘প্যাকেজড ড্রিঙ্কিং ওয়াটার’টি গুণগত মানের কি না তা নির্ধারণ করে ‘ফিট’ সার্টিফিকেট দেবে বিএসআই। তারপরই তা বাজারে বিক্রি করা যাবে। কিন্তু এই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিএসআই-এর ‘সার্টিফিকেশন মার্ক’ ছাড়াই বাজারে রমরমিয়ে বিকোচ্ছে নামী-অনামী হাজারো ‘প্যাকেজড ড্রিঙ্কিং ওয়াটার’।
এরাজ্যেও থাবা বসিয়েছে নকল জল। দুই ২৪ পরগনায় রীতিমতো নকল জলের হাব তৈরি হয়েছে বলে প্রসাশনের কাছে খবর। উত্তর ২৪ পরগনার রাজারহাট, গোপালপুর, বাগুইআটি, কেষ্টপুর, লেকটাউনের মতো এলাকায় প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে জলের কারখানা রয়েছে। যেখানে অতি সহজে একটি বোরিং মেশিনের সাহায্যে মাটির নিচ থেকে জল তোলা হচ্ছে। তারপর স্বাদ বদলাতে ম্যাগনেশিয়াম সালফেট বা পটাশিয়াম বাই-কার্বোনেটের মতো মিনারেলের বদলে তাতে মেশানো হচ্ছে বেরিয়াম হাইড্রক্সাইড অক্টাহাইড্রেটের মতো মারণ রাসায়নিক। যা বেশি পরিমানে পেটে গেলে খাদ্যনালী জ্বলেপুড়ে খাক হতে পারে। আর এমন জলেই অভ্যস্থ হয়ে পড়েছেন শহরতলীর মানুষজন। নকল জল ধরতে কয়েক দিন আগেই একটি টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট। কোন কোন ওয়ার্ডে জলের কারখানা রয়েছে তা জানাতে বলা হয়েছে কাউন্সিলরদের।
গত তিন বছরে বিএসআই কর্তৃপক্ষের কাছে নকল জল নিয়ে অন্তত ৫৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যারা কোনওরকম শংসাপত্র ছাড়াই বাজারে ‘প্যাকেজড ওয়াটার’ বিক্রি করছে। এর মধ্যে ২৩টি কোম্পানির বিরুদ্ধে এখনও ব্যবস্থা নেওয়া গিয়েছে বলে খবর। ক্রেতা সুরক্ষা ও খাদ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর, গত বছর ১৯২টি জাল জলের কারখানা বা বটলিং ইউনিটে হানা দিয়েছেন এফএসএসএআই-এর আধিকারিকরা। মোট ১৩১টি জাল কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা শুরু হয়েছে। তা সত্ত্বেও নজর এড়িয়ে রমরমিয়ে চলছে নকল জলের কারবার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.