অভিরূপ দাস: একজন বিখ্যাত কান-নাক-গলার চিকিৎসক, অন্যজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। সম্প্রতি তাঁদের বিয়ের ২৫ বসন্ত পেরিয়েছে। কিন্তু করোনা (Corona Virus) আবহে সকাল থেকে রাত পিপিই কিট পরে রোগী দেখতে দেখতেই কেটে গিয়েছে। ফলে সেলিব্রেশন তো দূর, সারাদিনে দু’জনের দেখাই হয়নি ঠিকমতো। তাই চিকিৎসক দম্পতির বিবাহ বার্ষিকী উদযাপনের ব্যবস্থা করলেন সহকর্মীরাই। হাসপাতালেই ফের মালাবদল সারলেন ওই দম্পতি।
হাসপাতাল ভিড়ে ঠাসা। জ্বর জ্বর ভাব, হাঁচি-কাশির রোগী দেখতে দেখতে ইএনটি বিশেষজ্ঞ কর্তা সময়ই পাচ্ছেন না। একই অবস্থা তাঁর স্ত্রীয়েরও। রোগী দেখার ফাঁকে দুপুরে দু’মিনিট সময় পেয়েছিলেন। সার্জিক্যাল ক্যাপ, মাস্ক পরেই হাসপাতালের রেস্ট রুমে এসে অবাক! সেখানে মালাবদলের সরঞ্জাম রেডি! সহকর্মীরা বললেন, “আর দেরি নয়, শুভস্য শিঘ্রম।” সেখানেই টুক করে মালাবদল সেরে ফেললেন চিকিৎসক যুগল। ডা. অর্জুন দাশগুপ্ত এবং ডা. চন্দ্রিমা দাশগুপ্তর সেই মালাবদলের ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। সহকর্মীরা জানিয়েছেন, ডাক্তারবাবুর কাজের চাপ এখন ভয়ংকর। সেলিব্রেশন করার সময়ই নেই। তাই হাসপাতালেই মালাবদল।
দম্পতির কথায়, পরিকল্পনা ছিল অনেক। বিয়ের সিলভার জুবিলি স্মৃতির মণিকোঠায় ধরে রাখতে তাঁরা ঠিক করেছিলেন ধুমধাম করেই বিবাহ বার্ষিকী করবেন। কে জানত করোনা অন্য পরিকল্পনা করে রেখেছে। গত ২৫ মার্চ থেকে টানা লকডাউন। সামাজিক দুরত্ব মেনে চলাফেরায় হাজারও বিধিনিষেধ। নিমন্ত্রণ করা যাবে না ২৫ জনের বেশি। কী উপায়? মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. অর্জুন দাশগুপ্তর কথায়, “সব দেখে শুনে আমরা ঠিক করেছিলাম বড় করে অনুষ্ঠান করব না। করোনার কারণে দীর্ঘ লকডাউনে অনেকেই কাজ হায়িয়েছেন। দুবেলা খাবার জুটছে না অগুনতি মানুষের। সেখানে সেলিব্রেট করার কোনও মানেই হয়না।” হতদরিদ্র মানুষের জন্য যাদবপুরে একটি ক্যান্টিন চলছে। সেই শ্রমজীবী ক্যান্টিনে মাত্র কুড়ি টাকায় খাবার পাচ্ছেন দিন আনি দিন খাই মানুষগুলো। ডা. দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, “আমি আর চন্দ্রিমা শ্রমজীবী ক্যান্টিনের একবেলার ভার নিই।” এটাই তাঁদের উদযাপন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.