Advertisement
Advertisement
fake number

অ্যাপের মাধ্যমে ভুয়ো নম্বর থেকে ফোন করে বিচারপতিকে হুমকি, পুলিশের জালে যুবক

বেশ কয়েকজনের সঙ্গে এভাবে জালিয়াতি করেছিল অভিযুক্ত।

A youth allegedly threatened a justice by fake number | Sangbad Pratidin

ছবি: প্রতীকী

Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:April 5, 2021 6:14 pm
  • Updated:April 5, 2021 6:14 pm

অর্ণব আইচ: ভুয়ো অ্যাপ, যার মাধ্যমে নিজের মোবাইল থেকে কল করলেও ব্যবহার করা যাবে অন্য একজনের নম্বর। অর্থাৎ যাঁকে ফোন করা হয়েছে, তাঁর মোবাইলে যে নম্বরটি ভেসে উঠবে, সেটি আদৌ যিনি ফোন করেছেন, তাঁর নয়। নম্বরটি রীতিমতো জাল। এই ভুয়া অ্যাপের মাধ্যমে ফোন করে বিচারপতিকে কটূক্তি করার অভিযোগে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারপরই প্রকাশ্যে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

অ্যাপ বাইক সংস্থা থেকে তথ্য নিয়ে তদন্ত শুরু করে কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট থানার আধিকারিকরা। এই তদন্তে সাহায্য করে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। এই যৌথ তদন্তে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় আসল অভিযুক্ত অর্ণব আচার্য। এক কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিকের পুত্র এই ভুয়ো অ্যাপ ব্যবহার করে দিনের পর দিন বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে জালিয়াতি করেছে বলে অভিযোগ। শনিবার রাতে সল্টলেকের একটি বিলাসবহুল হোটেলে আমোদ করার সময়ই হাতেনাতে তাকে ধরে ফেলেন হেয়ার স্ট্রিট থানার আধিকারিকরা।

Advertisement

এই ঘটনার পর এই ধরনের ভুয়া অ্যাপ থেকে শহরবাসীকে পুলিশ সতর্ক করছে। অভিযুক্ত অর্ণব আচার্য জানিয়েছে, বিনামূল্যে সে এই অ্যাপটি ডাউনলোড করেছিল। পুলিশ খবর নিয়ে দেখেছেন, কয়েক মাস আগে পর্যন্ত কলকাতার অনেকে এই অ্যাপটি ডাউনলোড করেছে। যদিও ইদানীং এই অ্যাপ ডাউনলোড করছেন না বেশি কেউ। এই অ্যাপটির মাধ্যমে ফোন করার আগে যে কোনও ফোন নম্বর বসিয়ে দেওয়া যায়। যে ব্যক্তি ফোন পাবেন, তাঁর মোবাইলে ভেসে উঠবে ওই ভুয়ো নম্বর। পুলিশের ধারণা, এভাবে কেউ কোনও ভিভিআইপির নম্বর ব্যবহার করেও ফোন করতে পারে। ছড়াতে পারে জালিয়াতির জালও। সেই জালে পা দিতে পারেন অনেকে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘ফুরফুরা শরিফকে সম্মান করি, কিন্তু এটা অপদার্থ’, নাম না করে আব্বাসকে তোপ মমতার]

এক পুলিশ আধিকারিক জানান, কেউ এই অ্যাপের মাধ্যমে বন্ধু বা আত্মীয়র সঙ্গে মজা করতে পারে। কিন্তু জালিয়াতি করলেই তাকে গ্রেপ্তার হতে হবে। যেমন হয়েছেন অর্ণব আচার্য। পুলিশের কাছে তার দাবি, সে না জেনেই একটি নম্বর ব্যবহার করেছে। সে জানত না যে, এটি এক বিচারপতির নম্বর। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনাটির সূচনা মাসখানেক আগে। হাই কোর্টের এক বিচারপতির মোবাইলে একটি ফোন আসে। এক ব্যক্তি তাঁকে হুমকি দিয়ে বলে, তার পাঁচশো টাকা দিয়ে দিতে। বিচারপতি রং নম্বর মনে করে ফোন কেটে দেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি নিজেকে অ্যাপ বাইক চালক বলে পরিচয় দিয়ে হুমকি দিয়ে টাকা চাইতে থাকে। বিচারপতি একবার তাকে বলেন যে, গাড়ি করেই তিনি যাতায়াত করেন। তিনি কোনওদিন অ্যাপ বাইকে চড়েননি। তবুও হুমকি দিতে থাকে ওই অ্যাপ বাইক চালক। এর পর বিরক্ত হয়ে বিচারপতি হাই কোর্টের একটি বিশেষ দপ্তরকে বিষয়টি জানান। এই ব্যাপারে হেয়ার স্ট্রিট থানায় মামলা দায়ের হয়। পুলিশ তদন্ত করে তোলাবাজির চেষ্টার অভিযোগে অ্যাপ বাইক চালক বিজয় সিংকে গ্রেপ্তার করে। এই গ্রেপ্তারির পরই ঘুরে যায় পুরো ঘটনার তদন্তের মোড়।

ধৃত অ্যাপ বাইক চালক বিজয় জানায়, অ্যাপ বাইক সংস্থার মাধ্যমে এক যুবক রাইড বুক করে। বুকিংয়ের ভাড়া হয় চারশো টাকা। এ ছাড়াও ওই যুবক চালককে বলে, তাকে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হবে। অ্যাপ বাইকের বুকিংয়ের টাকা বাদে বারোশো টাকায় রফাও হয়। বেশ কয়েক জায়গায় ঘোরাঘুরি করে বাইপাসের কাছে একটি জায়গায় আসে যুবক। চালক জানান, তাঁর কাছে খুচরো নেই। পাঁচশো টাকার নোট আছে। চালকের কাছ থেকে ওই পাঁচশো টাকার নোট নিয়ে খুচরো করানোর নাম করে বাইক থেকে নামে সে। এর পর একটি বাড়ির আড়ালে গিয়ে উধাও হয়ে যায়। আশপাশে খোঁজ করেও তার সন্ধান মেলেনি। এর পর ওই টাকা জোগাড় করতে যে নম্বর থেকে যুবক বুক করেছিল, সেই নম্বরে সে ক্রমাগত ফোন করতে থাকে। টাকা আদায় করতেই কটূক্তি করে। বিজয়কে জেরা করে হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ আধিকারিকরা বুঝতে পারেন যে, এর পিছনে বড় চক্রান্ত রয়েছে।

এসটিএফের সাহায্য নিয়ে তাঁরা অ্যাপ বাইক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকেও ডেটা বা তথ্য পেতে সময় লাগে। শেষ পর্যন্ত মেলে ওই যুবকের আসল মোবাইল নম্বরের সন্ধান। হোয়াটস অ্যাপ নম্বর থেকে মেলে অর্ণব আচার্যের মতো ওই যুবকের ছবিও। মোবাইলের সূত্র ধরেই পুলিশ তার পিছু নেয়। জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যাটি সে সল্টলেকের একটি হোটেলে কাটাবে। সেইমতো পুলিশ হোটেলের বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে। একটু রাত হতেই হোটেলটিতে হানা দিয়ে ওই যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করে। ধৃত যুবকের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, আইটি আইনের ধারা লাগু করা হয়েছে। রবিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে তাকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। জানা গিয়েছে, ওই যুবক বিশেষ কোনও কাজ করে না। তার পারিবারিক সমস্যাও চলছে। এভাবে কখনও বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আবার কখনও জালিয়াতি করে বিলাসবহুল জীবনযাপনের চেষ্টা করে। সে কতজনকে এই ভুয়া অ্যাপের মাধ্যমে জালিয়াতি করেছে, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ