ক্ষীরোদদীপ্তি ভট্টাচার্য: ‘ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট’ দূরের কথা। কোনওরকম নথিপত্র বা সই সাবুদেরই বালাই নেই। স্রেফ মুখের কথাতেই বিকিয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার শেয়ার।
কলকাতার বড়বাজার-সহ রাজ্যের নানা জায়গায় এহেন ‘দু’নম্বরি শেয়ার কারবার গজিয়ে ওঠার খবরে নবান্নের কপালে ভাঁজ পড়েছে। ব্যাপারটা নিয়ে খোঁজ শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের অধীনস্থ দুর্নীতি দমন শাখা (এসিবি)। এখনও কেউ ধরা পড়েনি। তবে অবৈধভাবে নামী দামি সংস্থার শেয়ার যাতে বিক্রিবাট্টা না হয়, সেদিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, অসাধু কারবাররা রীতিমতো ‘স্টক এক্সচেঞ্জ’ ফেঁদে বসেছে। ঠিক যেভাবে শেয়ার বিক্রি বা ট্রেডিং করা হয় অবিকল সেভাবেই একলপ্তে শেয়ার বিক্রি হচ্ছে। সবটাই নগদে। খোলা বাজারে ঠিক যেমনভাবে শেয়ারের দাম ওঠানামা করে এখানেও হুবহু একই ঘটনা। একইভাবে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ বা মুম্বই স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার বিক্রি হয়। তফাত একটাই। সবটাই মুখে মুখে। সবটাই নগদে। ক্রিকেট বেটিং যেভাবে হয় তেমনভাবেই এই খেলা চলে। সরকারকে কর দেওয়ার কোনও ব্যাপার নেই। বস্তুত, অন্ধকার জগতের এমন শেয়ার বিক্রির খেলা ‘ডাব্বা ট্রেডিং’ নামেই বেশি পরিচিত।
রাতারাতি কোটিপতি হওয়া নাকি কোনও ব্যাপারই নয়। আর এই কারণেই ‘ডাব্বা ট্রেডি’-এর ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন বেশ কয়েকজন। স্বরাষ্ট্র দপ্তর সূত্রে খবর, সব হারানো এই মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আরও সূত্র জোগাড়ের কাজ চলছে জোর কদমে। অভিযোগ, যে বা যাঁরা শেয়ার কেনাবেচার এমন খেলায় হেরেছেন টাকা আদায়ের জন্য তাঁদের উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করা হয়েছে দিনের পর দিন।
ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ বা মুম্বই স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার দরকে কাজে লাগিয়ে অন্ধকার জগতের এমন টাকার খেলা দেশে নতুন নয়। মুম্বই, সুরাট বা গোয়ার মতো শহরে কয়েক বছর ধরেই রমরমিয়ে চলছে বেআইনিভাবে শেয়ার বিক্রি। এখন কলকাতাতেও হাজির। বিশিষ্ট শেয়ার বিশেষজ্ঞ ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যাট অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “ডাব্বা ট্রেডিং এক ধরনের জুয়া খেলা। এই খেলা বন্ধ করার মূল দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। কারণ ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ বা মুম্বই স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে অর্থ ও বাণিজ্যমন্ত্রক। ওই সব কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছেই আগে খবর থাকা উচিত”। একধাপ এগিয়ে তিনি বলেছেন, দেশের বৈধ শেয়ারের টাকা অন্ধকার জগতে চলে যাচ্ছে ডাব্বা ট্রেডিংয়ের দৌলতে। এমন ঘটনা বন্ধ করতে সরকার উদ্যোগ নিলে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।” একটি সূত্র বলছে, সম্প্রতি অন্তত আটটি নামী সংস্থার শেয়ার নিয়ে কেনাবেচা চলছে ‘ডাব্বা ট্রেডিং’য়ে।
কেন্দ্রীয় সংস্থা থেকে তেমন উদ্যোগ চোখে না পড়লেও সেবি কিন্তু বরাবর এমন বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। তবে কাজের কাজ কতটা হয়েছে তা নিয়ে সংশয় রয়েই গিয়েছে। একটি সূত্র বলছে ২০১০-১১ অর্থবর্ষ থেকেই এমন বেআইনিভাবে শেয়ার বিক্রি শুরু প্রথম নজরে আসে।
শুধু শেয়ারই নয়। সোনা, রুপোর মতো দামি জিনিস নিয়েও ‘ডাব্বা ট্রেডিং’ চলছে কলকাতা-সহ বিভিন্ন বড় শহরে। তবে এখনও পর্যন্ত এমন কারবারে বাঙালি খুব একটা দেখা যায়নি। বেশিরভাগই অবাঙালি। সপ্তাহের ছ’দিন শেয়ার কেনাবেচা হলেও টাকা দেওয়া বা নেওয়ার জন্য বরাদ্দ মাত্র দু’দিন।
[চিত্র: প্রতীকী]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.