ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: প্রবাদ আছে, রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। সাতাত্তরের দরজায় এসে ভাঙা শরীরে দাঁড়িয়ে আছেন যে ত্রয়ী রাজনীতিক, তাঁরাও চাইছেন বঙ্গ রাজনীতিতে যেন কখনওই
সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প না ঢোকে।
তাঁদের একজন কুমুদ ভট্টাচার্য। অবিভক্ত রাজ্য কংগ্রেসের ছাত্র পরিষদের শেষ রাজ্য সভাপতি। দ্বিতীয়জন প্রদেশ কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের সহসভাপতি দেবব্রত বসু তথা বেণুদা। দুই হাঁটু বদলেও যতটা চনমনে ছিলেন, কোভিড পরবর্তী ক্রনিক আমাশায় কোমর থেকে শরীর বেঁকে ঝুঁকে যাওয়ার পরও তরতাজা। এর পরও ইচ্ছে দিল্লিতে রাজনীতি করার। তৃতীয়জন জয়ন্ত ভট্টাচার্য। যিনি নিজেকে সব কিছু থেকে সরিয়ে রেখেছেন। দু’বারের সাংসদ। কিন্তু বর্তমান রাজনীতির প্রতি বিতৃষ্ণ। পারকিনসনস ও আংশিক অ্যালঝাইমারে কাবু। মাঝে আধ্যাত্মিক জগৎ টেনেছিল। তাঁর বিশ্বাস ছাত্র রাজনীতি আরও ক্ষুরধার হবে।
বেণু বসুর বাড়ি পূর্ব কলকাতার সুভাষ সরোবরের কাছে সুরেন সরকার রোডে। বুস্টার ডোজ নিয়েছেন সম্প্রতি। এই ভাঙা শরীরে মাসদুয়েক আগে প্রদেশ কংগ্রেস অফিস বিধানভবনে গিয়েছিলেন হাজিরা দিতে। এআইসিসি জানতে পেরেছিল পদাধিকারীদের অনেকেই ‘বেজায় ফাঁকি’ দিচ্ছেন। সেই হালতে বেণুদাকে দেখে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি তো হাঁ! পরে বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেন। বলতে বলতেই বিছানা ছেড়ে উঠে হাত উল্টে বললেন, “এই তো পারছি!” এই শরীরে দিল্লি যাবেন? উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন, “কেন নয়?” বললেন, “একদিন ঠিক হবই। রাহুল গান্ধী চিঠি দিয়েছেন আমায়। ফের রাজনীতি করব। দিল্লি যেতে পারলেই কেল্লাফতে। দলটাকে আবার দাঁড় করাতে হবে।”
‘বেণুদার’ কথা শুনে স্মৃতিমেদুর বেহালার বাসিন্দা কুমুদবাবু। “আমরা প্রায় একই বয়সি”- বলে চলেন প্রিয়-সুব্রত-কুমুদ ত্রয়ীর তৃতীয়জন। দু’-দু’বার বাইপাস সার্জারির ধাক্কা নিয়েও অকপট, একরোখা কুমুদ রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন ২০০৫-এ। সিঙ্গুর আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করে দলে বিরাগভাজন হয়েছিলেন। তবু সিদ্ধান্ত থেকে সরেননি। “আমি চিরকালই এই। একবার যা বলি, ঠিক হোক বা ভুল, সেই পথেই থাকি”-বলছেন কুমুদবাবু। তার পর থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে। শেষে পদত্যাগ। দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়লেও প্রাক্তন সহকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব নেই। বললেন, “আমায় লোকে বেশ ভয় করত। প্রিয়দা একদিন বললেন, ভুল হচ্ছে কুমুদ। লোকে তোকে ভয় করবে কেন? তাহলে সকলের নেতা হবি কী করে? সকলের সঙ্গে সহজ হতে হবে।”
প্রিয়-সুব্রত-কুমুদের সঙ্গে সোমেন মিত্রকেও গুরু মেনেছিলেন জোড়াসাঁকোর সিংহিবাগানের বর্তমান বাসিন্দা জয়ন্ত ভট্টাচার্য। প্রথমে তমলুক লোকসভা থেকে জয়ী। পরের বার কংগ্রেস আর তৃণমূলের সমর্থনে রাজ্যসভার নির্দল সাংসদ। সোমেনবাবুর হাত ধরে ফের কংগ্রেসে ফেরা। বর্তমান রাজনীতি নিয়ে তাঁর নানা প্রশ্ন। আক্ষেপ, “রাজনীতি থেকে সরে আসা ভুল ছিল।” তবে কি সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরবেন? “রাজনীতির বাইরে কেউ হয় নাকি? যা বলছি সেসব তো সক্রিয় রাজনীতির কথা। তিন বছর আগেও সোমেনদাকে দৈনিক রিপোর্ট করতাম”- ছোট্ট জবাব। ক’দিন আগে বাজার করতেও তাঁকে দেখেছেন স্থানীয়রা। শেষ ক’দিন একেবারে ঘরবন্দি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.