সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: টানা চারবার। বিশ্বমঞ্চে সেরার শিরোপা বাংলার শিল্পী সনাতন দিন্দার। এবছরের ওয়ার্ল্ড বডি পেন্টিং ফেস্টিভ্যালে দ্বিতীয় হয়ে শেষ করলেন শিল্পী সনাতন দিন্দা। প্রথম না হতে পারলেও দেশকে গর্বিত করেছেন তিনি। অস্ট্রিয়ার ক্লাগেনফুর্টে রানার্স আপ হয়ে টানা চারবার বিজয়ী হওয়ার বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হলেন তিনি। তাঁর শৈল্পিক নান্দনিকতায় বিশ্বমঞ্চে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়ে দেশে ফিরলেন সনাতন। সঙ্গে বাড়তি পাওনা বলতে বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী ও দর্শকদের অকুণ্ঠ ভালবাসা। যা তাঁকে আরও এগিয়ে চলার শক্তি জোগাবে বলে জানালেন শিল্পী। টানা তিনবার তিনি এই প্রতিযোগিতায় সেরার শিরোপা পেয়েছিলেন। নিজের কাজে খুশি শিল্পী। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে জানালেন, বিশ্ব দরবারে শিল্পীর চোখ দিয়ে যা তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন তাতে তিনি সফল। এবং সেখানেই তাঁর সাফল্য। তাঁর সৃষ্টিকে কোনওভাবে খাটো করতে পারেননি বিচারকরা। বরং প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
এবারের প্রতিযোগিতায় ছিল দুটো পর্ব। প্রথম পর্বে সনাতনের বিষয় ছিল, গ্লোরিয়াস পাস্ট বং গৌরবের অতীত। শৈশবজীবন খুব একটা সুখের ছিল না সনাতনের। কিন্তু মনের কোণে ধীরে ধীরে লালিত হচ্ছিল শিল্পীসত্তা। ছোটবেলা থেকেই মনের আকাশে রং-তুলি দিয়ে ঘুড়ি ওড়াতেন সনাতন। চে গুয়েভারা, পিট সিগালরা ভিড় করে থাকতেন তাঁর চিন্তায়। তাঁরাই অনুপ্রেরণা। তাঁদের কর্মকাণ্ডই বেড়ে ওঠার রসদ ছিল। শৈশবের আইকনদেরই মানবশরীরের ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছিলেন শিল্পী। দ্বিতীয় পর্বে তাঁর বিষয় ছিল, I had a dream in this dream। স্বপ্নের মধ্যে এক অন্য স্বপ্নালু ভাবনা। মানবধর্মকেই চিরকাল প্রাধান্য দিয়েছেন সনাতন। সবার উপরে মানুষ সত্য– এই প্রবাদবাক্যকেই পাথেয় করে সৃষ্টিসুখে মেতেছেন আজীবন। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে হিংসা-হানাহানি, সন্ত্রাসকে পৃথিবীর বুক থেকে বিদায় দেওয়ার কথাই তুলে ধরেছেন বডি পেন্টিংয়ের মাধ্যমে। সন্ত্রাসের আতঙ্কই রঙের আঁকিবুকিতে তুলে ধরেন বিচারকদের সামনে। ভয়ঙ্কর সুন্দর সেই সৃষ্টি নিয়ে কোথাও হয়তো দোলাচলে ছিলেন বিচারকরা। সেটাই শিল্পীকে প্রথম হওয়া থেকে আটকে দেয় বলে মনে করেন সনাতন।
কিন্তু সনাতন নিজে মনে করেন, শুধুই সুন্দর, পৃথিবীর মেকি রং-রূপ দেখানোই প্রকৃত শিল্পীর চূড়ান্ত মাপকাঠি হতে পারে না। নিজের সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে প্রাসঙ্গিকতা, সামাজিক বার্তা তুলে ধরাই তো শিল্পীর আসল উদ্দেশ্য। তাতে আর পাঁচজনের সঙ্গে মনের মিল নাও হতে পারে। তাতে কী? শিল্পীকে তাঁর কাজ করে যেতে হবে। আর তাতেই শিল্পীর স্বার্থসিদ্ধি। এই আপ্তবাক্যকেই নিজের কাজের মধ্যে দিয়ে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চান সনাতন। এবং ভবিষ্যতেও তা করে যাবেন বলে জানিয়েছেন সনাতন। আর তাতেই শিল্পী হিসাবে তাঁর তৃপ্তি।