অর্ণব আইচ: পথ দেখাল বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনা। সামনে ভোট। তার আগে যাতে কোনও বিস্ফোরক, বোমার মশলা বা অস্ত্র বাইরে থেকে শহরে ঢুকতে না পারে, তার জন্য শহরের সীমান্ত এলাকায় শুরু হল রাস্তা আটকে গাড়ি পরীক্ষা এবং নজরদারি। শহরের বিভিন্ন জায়গায় অন্তত ৮০টি স্থানে কড়া নজরদারি শুরু করেছে পুলিশ।
[নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাচনের মাসখানেক আগেই রাজ্যে আধা সামরিক বাহিনী ]
লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, এই বিস্ফোরক উদ্ধার হওয়ার পর আরও সতর্ক হয়েছে পুলিশ। ভোটের দিন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বিধাননগর ও বারাকপুর কমিশনারেটের সঙ্গে কলকাতা পুলিশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে চলছে কড়া নজরদারি। গার্ডরেল দিয়ে রাস্তা আটকে কলকাতায় আসা মালবাহী গাড়ি-সহ প্রত্যেকটি গাড়ি পরীক্ষার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। মালবাহী গাড়ির ভিতর কী রয়েছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়াও শহরের বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ি পরীক্ষা করা হচ্ছে। বাইরে থেকে কলকাতায় সন্দেহজনক কিছু পাচার করার চেষ্টা করলেই তা ধরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
[বিজ্ঞপ্তি দিয়েও প্রত্যাহার কমিশনের, শিক্ষক বদলি ভোটের পরই]
সম্প্রতি উত্তর কলকাতায় চিৎপুর এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক পটাশিয়াম নাইট্রেটের উৎপত্তিস্থল অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়নগর বলে জানতে পেরেছেন লালবাজারের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) আধিকারিকরা। তাঁদের তদন্তে উঠে এসেছে একটি রাসায়নিক কারখানার নাম। গোয়েন্দাদের অভিযোগ, এই চক্রের মূল মাথা সুকান্ত সাউয়ের কাছে আসল নথিপত্র ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিজয়নগরের ওই বেসরকারি সংস্থা তাদের নিজেদের কারখানা থেকে হাজার কিলোর উপর বিস্ফোরক সুকান্ত সাউয়ের হাতে তুলে দেয়। এই বিষয়ে আরও তথ্য পেতে বিজয়নগরের ওই সংস্থার কর্ণধারদের নোটিস পাঠাচ্ছে লালবাজারের এসটিএফ।
[ভোটে লড়তে ইস্তফা তিন বিধায়কের, জোরকদমে প্রচার শুরু তৃণমূলের]
ওড়িশার বালেশ্বর থেকে কলকাতা হয়ে উত্তর ২৪ পরগনায় পাচার হওয়ার আগেই মালবাহী গাড়িভর্তি বিস্ফোরক উদ্ধার করেন এসটিএফ-এর গোয়েন্দারা। এই পটাশিয়াম নাইট্রেট পাচার চক্রের মাথা উত্তর ২৪ পরগনার রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে সন্ধান মেলে ওড়িশার বালেশ্বরের বাসিন্দা সুকান্ত সাউয়ের। সুকান্তর বাড়িতে হানা দিয়ে গোয়েন্দারা বেশ কিছু ভুয়া নথিপত্র পান। আসল প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও ছিল না সুকান্তর কাছে। সুকান্ত জেরার মুখে গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, ভুয়া নথিপত্রগুলি দেখার পরও বিজয়নগরের ওই সংস্থাটি কোনও যাচাই করেনি। রবিউল তাকে পূর্ব মেদিনীপুরের এজেন্টের মাধ্যমে তিন লাখ টাকা দেয়। এর মধ্যে সে নিজের লাভ রেখে বাকি টাকা নিয়ে বিজয়নগরে যায়। বিশাখাপত্তনম থেকে প্রায় ৪২ কিলোমিটার দূরের এই জায়গাটির শিল্পতালুকে রয়েছে ওই রাসায়নিক কারখানাটি। সেখান থেকেই ওই পটাশিয়াম নাইট্রেট সে বালেশ্বরের গুদামে নিয়ে যায়। লালবাজারের এক কর্তা জানান, এসটিএফ-এর পক্ষে নোটিস দিয়ে বিজয়নগরের ওই সংস্থার একাধিক কর্ণধারকে লালবাজারে ডেকে পাঠানো হচ্ছে। জেরা করে জানার চেষ্টা হবে, এই চক্রের সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগ রয়েছে কি না। সেইমতো পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।