Advertisement
Advertisement

Breaking News

Kolkata

জব্দ নয়, ভালবেসে বিষধর সাপকে বশ মানিয়ে অনন্য কৃতিত্ব কলকাতার যুবকের

বিষধর থেকে নির্বিষ, সব ধরনের সাপকে বশে আনাই শখ তাঁর।

Behala man turns snake wrangler, wins heart | Sangbad Pratidin

ছবি: প্রতীকী

Published by: Abhisek Rakshit
  • Posted:March 12, 2021 8:51 am
  • Updated:March 12, 2021 8:51 am

নিরূফা খাতুন: ছোটবেলায় সুকুমার রায়ের বাবুরাম সাপুড়ে পড়েছি। সাপকে কীভাবে জব্দ করতে হয় সুকুমার রায় বলে গিয়েছেন এই ছড়ায়। এখনও বাঙালিরা বাড়ির শিশুদের এই ছড়া শুনিয়ে থাকেন। কিন্তু বাস্তব জীবনে সাপকে জব্দ করা ওত সহজ নয়। তবে ব্যতিক্রম বেহালার (Behala) আদর্শনগরের বাসিন্দা অভিষেক দাস। ত্রিশের এই যুবক সাপকে জব্দ করেন না বরং ভালবেসে বশে নিয়ে আসেন। এলাকায় তাঁর পরিচয় স্নেক হান্টারম্যান (Snake Hunterman) হিসাবে।

সাপ নিয়ে গবেষণা করার শখ অভিষেকের স্কুল থেকেই ছিল। তাই বেহালা হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশের পরই সাপ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। পড়াশোনার সঙ্গে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে সাপ নিয়ে কুসংস্কার দূর করার কাজেও যোগ দেন অভিষেক। তিনি জানান, জলঢোড়া, বোড়া, কালাচ, কিং কোবরা, গোসাপ—সহ দেশে যত প্রজাতির সাপ রয়েছে সব ধরনের সাপই উদ্ধার করেছি। এই সাপ উদ্ধার করে কখনও স্থানীয় বন দপ্তরের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কখনও আবার জঙ্গলে সাপেদের পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হয়। সাপেদের বশ করতে গিয়ে অনেকবার বিপদের মুখেও পড়তে হয়েছিল তাঁকে। তবে সবথেকে বড় ঝুঁকির কাজ ছিল ২০১৮ সালে। অভিষেক জানান, সেই সময় পুজো ছিল। ষষ্ঠীর রাত ছিল। বেহালার একটি ঘরে কালাচ ঢুকে পড়েছিল। তিন বছরের ঘুমন্ত শিশুর বালিশের তলায় ছিল ওই সাপ। স্থানীয়রা আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। বাচ্চা ও সাপ দু’জনকে বাঁচানো আমার দায়িত্ব ছিল। একটু ভুল হলে বাচ্চার প্রাণ চলে যেত। অবশেষে সাপ এবং শিশু দু’জনকে নিরাপদে বের করা গিয়েছিল। সেদিনের মতো ঝুঁকি আর কখনও পড়তে হয়নি।

Advertisement

[আরও পড়ুন: নির্বাচনী ‘ঘুষে’র তালিকায় ইলিশও, ‘উপহারে’র বহর দেখে মাথায় হাত ভোটকর্তাদের]

কিন্তু সাপ নিয়ে পড়াশোনা করার মতো সরকারি পরিকাঠামো এ দেশে নেই। এই সংক্রান্ত বিশেষ বইও নেই। অভিষেকের বাবা সুনীল দাস পেশায় অটোচালক ছিলেন। ওয়াইল্ড লাইফ নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর সামর্থ তাঁর ছিল না। তবে অভিষেক হার মানেননি। তিনি বলেন, দেশে সাপেদের নিয়ে লেখা সেরকম বই নেই। বিদেশি ওয়াইল্ড লাইফ নিয়ে লেখা বইগুলোই ভরসা। কিন্তু ওইসব বই অনেক দামি। অটো চালক বাবার পক্ষে এতদামি বই কেনার আর্থিক ক্ষমতা ছিল না। তবুও বাবা অনেক কষ্ট করে আমার জন্য ওইসব দামি বই কিনে এনে দিত। অনলাইনে সাপেদের ওপর লেখাগুলোও নিয়মিত পড়তে থাকি। তবে শুধুমাত্র বই পড়ে সাপেদের বশীকরণ করা যায় না। তাই অভিষেক বেদিয়াদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন বেদিয়াদের সঙ্গে থেকে সাপেদের সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারেন। তাঁর কথায়, কীভাবে কোন সাপকে বশে আনতে হবে তা জানতে বেদিয়ারা আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। এখন অভিষেকের কাছে অনেক বেদিয়া কাজ করেন।

Advertisement

সাপের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত চষে বেড়ান এই যুবক। বর্তমানে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি এবং ইন্টারন্যাশনাল স্নেক বাইট ইনোসেটিভ গ্রুপের সঙ্গে কাজ করছেন এই সাপ শিকারি। এ দেশে সাপ নিয়ে কাজ করার সুযোগ অবশ্য কম। বিদেশ থেকে একাধিকবার কাজ করার সুযোগ অভিষেকের এসেছে। কিন্তু অভিষেক দেশে থেকে কাজ করতে চান। তাঁর কথায়, বিদেশে ওয়াইল্ড লাইফ একটা বড় সম্মাননীয় পেশা। এখানে অবশ্য এই পেশায় ওত বড় প্ল্যাটফর্ম নেই। তাই দেশের অনেক বন্যপ্রাণপ্রেমীরা বিদেশে গিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু আমি দেশে থেকে কাজ করতে চাই। দেশের মানুষকে এই ধরনের কাজে আরও উদ্বুদ্ধ করতে চাই।

[আরও পড়ুন: রাজনৈতিক জনসভার ঠেলায় দূষণে জেরবার ব্রিগেড, বাড়ছে কলকাতার বিপদ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ