স্টাফ রিপোর্টার: একদিকে মুকেশ আম্বানি, সজ্জন জিন্দালদের মতো দেশের স্বনামধন্য শিল্পপতিদের উপস্থিতি, অন্যদিকে জার্মানি থেকে জাপান তথা ইউরোপের নামী বণিকমহলের উপস্থিতিতে বুধবার শুরু হচ্ছে ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’। আজ মঙ্গলবার বিকেলে চা চক্রের মিলনমেলা, আর বুধবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে সূচনা হবে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের। এবারের বাণিজ্য সম্মেলন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ আরও একটি কারণে। তা হল এবছর সিআইআই ও ফিকির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক বসছে নিউটাউনের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারেই। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনের আগেই মুখ্যমন্ত্রী এই দুই বণিকসভার সম্মেলনে অংশ নেবেন। বাংলায় লগ্নিতে নতুন করে আহ্বান জানাবেন।
আর বঙ্গে বিনিয়োগের সুযোগ নিতে গোটা দেশের নামীদামি শিল্প সংস্থার কর্তারা আসছেন কলকাতায়। বাণিজ্য সম্মেলন উপলক্ষে গোটা মহানগরী সাজানো হয়েছে বড় বড় হোর্ডিং ও ব্যানারে। ‘বেঙ্গল মিনস বিজনেস’-মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত এই মূল থিমকে সামনে রেখেই বসছে বাণিজ্যের ‘কুম্ভমেলা’। ক্ষুদ্র শিল্প থেকে তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়া থেকে টেক্সটাইল, কৃষিভিত্তিক পণ্য থেকে কুটির শিল্প, পর্যটন এবার বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।
সম্মেলনে বাড়তি মাত্রা যোগ হবে পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের উপস্থিতি। বাণিজ্যে এবার বাংলার সঙ্গে সরাসরি হাত মেলাবে ঝাড়খণ্ড। এছাড়াও আসছেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসর নামগেল ওয়াংচুক। বাংলার সঙ্গে বাণিজ্যে ভুটানের নতুন সম্পর্ক তৈরি হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায়। মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে এর আগেও এসেছেন দেশের এক নম্বর শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফের তাঁর বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দেওয়া অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলায় রিলায়েন্সের বিনিয়োগ আরও বাড়াতে চলেছেন তিনি।
এবারের বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দিতে চলেছে ২০টি দেশ। এই শিল্প সম্মেলন থেকেই রাজ্যে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই হাব তৈরির কথা ঘোষণা হতে পারে। সেমিকন্ডাক্টর, বস্ত্র ও চর্মশিল্প, পর্যটন, ভারী শিল্প- সহ একাধিক ক্ষেত্রে লগ্নি টানায় এবার বিশেষ জোর দিয়েছে রাজ্য। শিল্পের অনুকূল জমিও রয়েছে ল্যান্ড ব্যাঙ্কে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহের ব্যবস্থা আছে। শিল্পবান্ধব প্রশাসন রয়েছে। শিল্পে ‘এক জানালা নীতি’ রয়েছে। সবমিলিয়ে শিল্প গড়ার যথাযথ পরিকাঠামো মজুত বঙ্গে। এই অবস্থায় শিল্প সম্মেলন থেকে বড় বিনিয়োগ টানার আশা রাখছে কেন্দ্র। বিকেলের চা চক্র দিয়েই শহরে শুরু হয়ে যাবে সেই লগ্নি টানার মহাযজ্ঞ। তারকাখচিত সমাবেশকে সঙ্গী করে বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে দুদিনের ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’। একদিকে বিপুল বিনিয়োগের সম্ভাবনা, অন্যদিকে প্রচুর কর্মসংস্থানের আশ্বাস। সর্বত্র লগ্নির হুইসল বাজবে।
সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়ে যাচ্ছে বুধবার দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে। ২টো থেকে নিউটাউন-রাজারহাটের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে উদ্বোধন হবে বিজিবিএসের। নবান্ন সূত্রের খবর, বিকেল পাঁচটা থেকে থাকবে ‘ইন্টারন্যাশনাল সেশন’। বৃহস্পতিবার ক্ষেত্র ধরে ধরে আলোচনা হবে একাধিক হলে। কৃষি, প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, কারিগরি শিক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মৎস্য, বিদ্যুৎ, বিনোদন – নানা বিভাগ নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনা হবে। বিশেষ জোর দেওয়া হবে উৎপাদনমূলক ক্ষেত্রে। বৈঠক হবে দেশভিত্তিক। দেশ ধরে প্রতিনিধিদের সঙ্গে হবে আলোচনা।
বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারের পাশাপাশি বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণেও বসবে বাণিজ্যলক্ষ্মীর আবাহন যজ্ঞের আসর। তাছাড়া থাকছে বাংলার নিজস্ব হস্তশিল্পের প্রদর্শনী। দার্জিলিংয়ের ভুবনবিখ্যাত সুগন্ধী চায়ে চুমুক দিতে দিতে এখানে বাঁকুড়ার টেরাকোটার ঘোড়ার পিঠে হাত বোলানো যাবে। পুরুলিয়ার চড়িদার রঙিন মুখোশ পরে পা মেলানো যাবে ছৌ নাচে। থাকছে বাংলার নিজস্ব ঘরানার নামগানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তারপর নৈশভোজ, যা আখেরে হয়ে উঠতে চলেছে শিল্পপতি, বণিকসভা, প্রশাসক ও স্থানীয় উদ্যোগপতিদের ‘গেট টুগেদার’। তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসেই রাজ্যে লগ্নি টানতে উদ্যোগী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিনিয়োগ টানতে বিদেশ সফরও করেছেন তিনি। চলতি বছরের বিজিবিএস নিয়ে কয়েক মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছে রাজ্য। এবার ফসল ঘরে তোলার পালা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.