সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এ যেন উলটো বুঝলি রামের গল্প। সেই যে এক সন্ন্যাসী হাঁটার ক্লান্তিতে ভগবানের কাছে একটি টাট্টু ঘোড়া চেয়েছিলেন। হাঁটতে হাঁটতে দেখলেন এক ঘোটকি বাচ্চার জন্ম দিয়েছে। এখন কী করে সেই বাচ্চাকে ফেলে যান তিনি? অগত্যা শাবকটিকে কাঁধে করেই হাঁটতে হল সন্ন্যাসীকে। নিজে চাপার জন্য ঘোড়া চেয়ে, ঘোড়াকেই কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে চলতে হচ্ছে। তাই তাঁর আক্ষেপ ছিল, উলটো বুঝলি রাম।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষেরও অনেকটা সেরকমই হাল। সত্যি রাম যেন উলটোই বুঝেছেন। যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারাতে তাঁর লড়াই, সেই মমতার নাম নিয়েই তাঁকে আশীর্বাদ করলেন এক সন্ন্যাসী।
[ গড়িয়াহাট উড়ালপুলে ভেঙে পড়ল বিজ্ঞাপনের গেট, আহত ১ ]
সাগর মেলার মরশুমে কলকাতার আউটরাম ঘাটেও সন্ন্যাসীদের ভিড়। ঘটি-বাটি-চাদর পেতে অনেকেই বসে গিয়েছেন গঙ্গাপাড়ে। সুধীজন তাঁদের কাছে পৌঁছলে সাধুরা আশীর্বাদও করছেন। পৌঁছে গিয়েছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে! হয়তো তাই, কিংবা নয়। নেহাতই রাজ্যে ধর্ম সংস্থাপনা চেয়েছেন। তাই সাধুজির থেকে আশীর্বাদ চেয়েছেন।
তা যিনি ধর্মের পক্ষে, তাঁকে আশীর্বাদ কোন সাধুই বা না করতে চান! এগিয়ে এসেছেন এক সন্ন্যাসী। দিলীপের মাথায় হাত রেখে তাঁকে আশীর্বাদও করেছেন। কিন্তু তারপরই সব ভণ্ডুল হয়ে গেল। দিলীপের মাথায় হাত রেখেই সন্ন্যাসী বলে উঠলে, মমতা দিদি কি….। পাশ থেকে সম্মিলিত ধ্বনি উঠল, জয়। একবার নয়, বারকয়েক একই অবস্থা। শেষমেশ ঠোঁটে বিড়ম্বনার হাসি নিয়েই সন্ন্যাসীর কবলমু্ক হন রাজ্য বিজেপির পোস্টার বয়।
[ স্ত্রী ‘গোসাঘরে’, ভাঙা সংসার জোড়া লাগাতে চেষ্টা আদালতের ]
রাজ্যে বিজেপিকে জমি পাইয়ে দিতে দিলীপ কী করছেন তা সন্ন্যাসীর জানার কথা নয়। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তো বটেই, এমনকী শাসকদলেরও অনেকে জনান্তিকে স্বীকার করছেন পরিশ্রমী দিলীপবাবুর কোনও বিকল্প হয় না। যে বিজেপির নাম-নিশানা তেমন ছিল না, সেই দলকেই খাতায় কলমে না হলেও, বস্তুত রাজ্যের প্রধান বিরোধী শক্তি করে তুলেছেন তিনি। রাহুল সিনহার হাত থেকে নিয়ে তাঁর হাতে দায়িত্ব দিয়েছিলেন বিজয়বর্গীয়রা। সে সিদ্ধান্ত যে ভুল নয় দিলীপবাবু তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। পাহাড় থেকে পাইকপাড়া, সর্বত্রই দিলীপবাবুর উপস্থিতি। অনেকে বলছেন, যে বিরোধিতা বাম নেতাদের করার কথা ছিল, যে সক্রিয়তা তাঁদের তরফ থেকে আসার কথা ছিল, তাই-ই করে রাজনীতির গ্ল্যামার ছিনিয়ে নিচ্ছেন দিলীপ ঘোষ। সংগঠনকে মজবুত করছেন। এমনকী দলে এখন মুকুল রায়ের মতো পাকা মাথার রাজনীতিক থাকা সত্ত্বেও, দিলীপবাবুর গ্রহণযোগ্যতা টোল খায়নি। বরং নোয়াপাড়া উপনির্বাচন নিয়ে মুকুল রায় যেভাবে দলকে ‘ঝুলিয়েছেন’, তাতে দিলীপের প্রতি আস্থা আরও বেড়েছে কর্মীদের। তাঁর ভাষা, বডি ল্যাঙ্গোয়েজ নিয়ে কখনও সখনও সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু রাজ্য রাজনীতির প্রবীণরা বলছেন, অতীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতির যে পথ ছিল, দিলীপবাবু যেন সেই পথ অনুসরণ করেই দ্রুত উঠে আসছেন।
[ শিয়ালদহ স্টেশনে উদ্ধার ঘর পালানো দুই কিশোর-কিশোরী ]
এহেন দিলীপবাবুকেই মমতার নাম নিয়ে আশীর্বাদ করলেন সন্ন্যাসী। প্রচারে-প্রসারে বিজেপির নাকি জুড়ি মেলা ভার। সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য তাঁদের নিজস্ব সেল আছে। এমনকী বিরোধিরা কটাক্ষ করে বলেন, পুরো দলটাই যেন ভারচুয়াল। সংগঠন কমজোরি হোক, সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়। তবে বাস্তবের জমিতে প্রচারে কি পিছিয়েই বিজেপি? সন্ন্যাসীর কাছে দিলীপের পরিচয় স্পষ্ট না হতে পারে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ মানে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এ সমীকরণ তাঁর কাছেও পরিষ্কার। আর তাই ধর্ম সংস্থাপনার কথা শুনে মমতা নামেই আশীর্বাদ দিয়েছেন তিনি। ভিডিও ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর তা দেখে মুচকি হেসে অনেকেই বলছেন, ধর্মের কল এভাবেই নাকি বাতাসে নড়ে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.