রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: লোকসভা ভোটের আগে এ রাজ্যে দলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধে ফের কড়া বার্তা দিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। একে অপরের প্রতি সন্দেহের মনোভাব ছেড়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর পরামর্শ দিলেন গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতারা। লোকসভা ভোটে এ রাজ্যে থেকে ২২টি আসনকে পাখির চোখে করেছে বিজেপি। কিন্তু, সেই লক্ষ্যপুরণে কী আদৌও দায়বদ্ধ দলের বঙ্গ নেতৃত্ব? রাজ্য বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে জানতে চাইলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
[বিধ্বংসী আগুন কলকাতার বাগরি মার্কেটে, বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ব্যবসায়ীদের]
শনিবার ছিল রাজ্য বিজেপি কর্মসমিতির বৈঠকের শেষদিন। এদিন সল্টেলেক ইজেডসিসি-তে রাজ্য কমিটির সদস্য ও দলের জেলা সভাপতিদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন এ রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও শিবপ্রকাশ। সূত্রের খবর, রাজ্য ও জেলা নেতাদের উদ্দেশ্য করে শিবপ্রকাশ বলেছেন, সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে। নেতা-কর্মীদের পারস্পরিক বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে হবে। মঞ্চের উপরের নেতারা, নিচে যাঁরা বসে রয়েছেন তাঁদের বিশ্বাস করেন না। আর নিচে যাঁরা রয়েছেন। তাঁরাও উপরের নেতাদের বিশ্বাস করেন না। এভাবে পার্টি কখনও এগোতে পারবে না। অবিশ্বাসের বাতাবরণ বন্ধ করতে হবে। এটা নিয়ে সতর্ক করার পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন করেছেন, এই ভোটটা লড়তে বর্তমান টিম কতটা সিরিয়াস? বুথের জন্য ২৫ দফা কর্মসূচি কতটা পালন করা হয়েছে? ৪০ থেকে ৪২ শতাংশ ভোট না পেলে বাংলায় দলের লক্ষ্য যে পূরণ হবে না সেটা এদিন উপস্থিত নেতৃত্বকে স্মরন করিয়ে দেন বিজেপির এই কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি বলেন, নিজেদের দায়িত্ব পালন না করতে পারলে আগামী ১০ বছর শুধু এই বৈঠকই হবে। আর কিছু হবে না। অন্যদিকে, আর এক কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় বঙ্গ নেতাদের উদ্দেশে বলেন, “এবার কোমর বেঁধে নামতে হবে। আভি নেহি তো কভি নেহি।” তখন এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, বিজেপি কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। পাল্টা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শাসকদলের উপর কোনও চাপ সৃষ্টি না করলে আভি নেহি তো কভি নেহি সম্ভব হবে না। জেলায় জেলায় বহু বুথে বিজেপির লোকজনকে পাওয়া যায় না এটা নিয়েও এদিন জেলা সভাপতিদের বলেন রাজ্য নেতৃত্ব।
লোকসভা ভোটের আগে অনুপ্রবেশ ইস্যুতে নিয়ে যে রাজ্য বিজেপি কোমর বেঁধে নামছে তা এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, এনআরসি নিয়ে আগামী ১৫দিন বাড়ি বাড়ি প্রচার করতে হবে। শরণার্থী ও অনুপ্রবেশকারীদের পার্থক্য বোঝাতে হবে। তৃণমূলের পালটা প্রচার করতে হবে। এনআরসি ইস্যুতে তৃণমূল যেভাবে সরব হয়েছে তাতে এ রাজ্যেও যে বিজেপি চাপে সেটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এদিন বৈঠকে কয়েকটি প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। এক) রাজ্যে গণতন্ত্র নেই। বেহাল শিল্প ও শিক্ষা। দুই) এনআরসি নিয়ে ঘরে ঘরে প্রচার। ব্যাপক আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি। দিলীপ ঘোষ এদিন উদ্বোধনী ভাষণে জানিয়ে দেন, বাংলায় সংঘর্ষের পথেই এবার লড়াই হবে। সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিজেপি প্রস্তুত। তঁার মন্তব্য, “যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। কুরুক্ষেত্রের মাটিতে আমরা নেমে পড়েছি। এতদিন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে আমরা সঞ্জয়ের ভূমিকা পালন করতাম। এবার অর্জুন হয়ে লড়াই করুন।” বুথস্তরে অনেক জায়গায় সংগঠনে খামতি রয়েছে বলেও মেনে নিয়েছেন দিলীপ ঘোষ।
কর্মসমিতির বৈঠকে সংগঠনে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। সায়ন্তন বসু, বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরি ও রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় জোনের দায়িত্ব অদলবদল করা হয়েছে। সায়ন্তনকে হাওড়া গ্রামীণ ও মেদিনীপুর, বিশ্বপ্রিয়কে পুরুলিয়া ও রাজুকে উত্তরবঙ্গ জোনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রথযাত্রা কর্মসূচির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ঘাটাল ও বারুইপুরের জেলা সভাপতি বদল করা হয়েছে। ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করা হয়েছে অন্তরা ভট্টাচার্যকে।
[ ‘কুরুক্ষেত্র’-এর যুদ্ধে শাসককে পরাস্ত করতে হবে, দলীয় কর্মীদের বার্তা দিলীপের]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.