Advertisement
Advertisement

Breaking News

জল

জল সংরক্ষণের সচেতনতায় সাইকেলে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী অভিযান বাঙালি যুবকের

১০৪ দিন ধরে ৫,২০০ কিমি সাইক্লিংয়ের নজির।

City cyclist's epic expedition on awareness of water conservation
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:April 14, 2019 8:40 pm
  • Updated:April 14, 2019 8:40 pm

শুভময় মণ্ডল: জল। মানব তথা প্রাণিজগতের এক অমূল্য সম্পদ। কিন্তু একুশ শতকের ডিজিটাল যুগে জলের অপচয় সবচেয়ে বেশি। প্রাকৃতিক এই সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণও দায়সারা গোছের। জলের অন্যতম এক উৎস নদ-নদীগুলির সংরক্ষণের জন্য দেশজুড়ে সচেতনতার অভাব স্পষ্ট। সেই জল সংরক্ষণের বার্তা নিয়েই কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী সাইকেলে ঘুরলেন শহরের এক সচেতন নাগরিক। ধোপদুরস্ত কর্পোরেট চাকরি ছেড়ে এই জ্বলজ্যান্ত সমস্যা নিরসনে ময়দানে নেমে পড়েছেন বাঘাযতীনের সম্রাট মৌলিক। গত ২৬ মার্চ এই দীর্ঘ যাত্রা শেষ করেছেন তিনি। ঝুলিতে রয়েছে ১০৪ দিন ধরে ৫,২০০ কিমি সাইক্লিংয়ের নজির। সাইকেলে প্যাডেল করে উত্তর ভারতের লেহ থেকে দক্ষিণের কন্যাকুমারী পর্যন্ত চষে বেড়িয়েছেন বছর তেতাল্লিশের সম্রাট। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের প্রায় ১১৩টি নদ-নদীর তীর ধরে সাইক্লিং করে বহু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন তিনি। কোথাও সচেতন করেছেন মানুষকে, কোথাও আবার সাধারণের মধ্যে প্রকৃতির দুর্মূল্য সম্পদের সংরক্ষণ নিয়ে চেষ্টাও দেখেছেন। এমনই অভিজ্ঞতার ঝুলি উপুর করলেন অভিযাত্রী।

গত বছর গঙ্গোত্রী থেকে বাংলাদেশের কাউকাতা পর্যন্ত গঙ্গার প্রবাহ ধরে ৩০০০ কিমি সাইক্লিং করেছিলেন। পাঁচ রাজ্য দিয়ে বয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশে প্রবেশ করে গঙ্গা (পদ্মা নামেই পরিচিত) বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে। গোটা প্রবাহ ধরেই তিনি সাইক্লিং করেন। তার পর তিনি আরও বড় এই অভিযানে নামেন। তাঁর এই যাত্রার মূল্য লক্ষ্য ছিল, ‘সেভ রিভারস, কনসার্ভ ওয়াটার’। নদী বাঁচাও ও জল সংরক্ষণের বার্তা নিয়ে গত বছর ৮ নভেম্বর লেহ থেকে যাত্রা শুরু করেন সম্রাট। কাশ্মীরে সিন্ধু ও চন্দ্রভাগা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে অবৈধ দখলদারি, হরিয়ানার কারনালে ভূগর্ভস্থ জলের অবৈজ্ঞানিক ব্যবহারের ফলে জলস্তর নেমে যাওয়া, পাঞ্জাবে সিন্ধু নদে প্লাস্টিকের স্তূপ, দিল্লিতে যমুনা নদীতে জঞ্জালের আধিক্য এবং আরও বহু রাজ্যে সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় জলের অন্যতম উৎস নদ-নদীগুলির সংরক্ষণের অভাব সবই অভিযাত্রীর চোখ দিয়ে দেখেছেন। তাঁর কথায়, ‘দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ নদীর জলের উপর নির্ভরশীল, সেদেশে নদী ও জল সংরক্ষণে সচেতনতার অভাব অনেক। কিন্তু সর্বত্রই চিত্রটা এক নয়। কোথাও কোথাও মানুষ নিজে থেকে সংরক্ষণে উদ্যোগী। কিন্তু বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসনের ঢিলেমি, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র সংরক্ষণ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করেছে।’

Advertisement

বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্যে সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় যেমন আপ্লুত হয়েছেন, তেমনই পশ্চিমঘাট পর্বতমালার এক অখ্যাত জায়গায় ভৌতিক কাণ্ডেরও সম্মুখীন হয়েছেন। মুম্বই থেকে গোয়া যাওয়ার পথে কোঙ্কন উপকূলে গিয়ে তো তিনি আশ্চর্যই হয়ে গিয়েছেন। বছরভর সেখানে এত বৃষ্টি তবুও জল ধরে রাখার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা বা প্রযুক্তি কোনওটাই নেই সেখানে। তাই খরাপ্রবণ হয়ে উঠেছে সেই এলাকা। এমনও জায়গা দেখেছেন যেখানে সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন সব কাজের জন্য নদীর জলের উপর নির্ভরশীল। অথচ সেই জল দূষণের জেরে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। কিন্তু তাঁর কথায়, বাংলাদেশে চিত্রটা আলাদা। নদীমাতৃক দেশ হওয়ার দরুন ওপার বাংলায় নদী সংরক্ষণে অনেক বেশি জোর দেওয়া হয়। যার অভাব রয়েছে এদেশে। শহরে ফেরার পর এই জল সংরক্ষণের বিষয়ে আরও ভাবনাচিন্তা মাথায় রয়েছে সম্রাটের। তাঁর উদ্যোগের জন্য FSSAI-এর তরফে তাঁকে Eat Right India মুভমেন্টের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করা হয়েছে। ভবিষ্যতে জল সংরক্ষণের সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তৈরি করার ইচ্ছাও রয়েছে। যে সংস্থা প্রকৃত অর্থে জল সংরক্ষণের জন্য কাজ করবে। এই বয়সেই এত গভীর এক সমস্যা নিয়ে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন সম্রাট। আগামী প্রজন্মের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন তিনি, একথা বলাই যায়।

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ